বর্তমানে বেকারের হার উদ্বেগজনক: ড. আকবর

0
446
blank
blank

ঢাকা: দেশে বর্তমানে বেকারের হার অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান। সরকারের হিসাব অনুযায়ী দেশে ৪ শতাংশ মানুষ বেকার। যা প্রকৃত অর্থে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন তিনি। শনিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত বাজেট সংলাপে তিনি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিড) অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

আকবর আলী খান বলেন, সরকারের হিসাব মতে আমাদের দেশে ৪ শতাংশ মানুষ বেকার। যা প্রকৃত অর্থে অগ্রহণযোগ্য। কারণ বেকার সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছে যারা যথাযথ কর্মসংস্থানের অভাবে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যা মূলত বেকারের মতোই। এই সংখ্যা যদি যোগ করা হয় তাহলে বেকার সংখ্যা ৩২ থেকে ৩৫ শতাংশ হবে। ১৯১৩ সালে আমেরিকায় যখন বেকারের হারে ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তখন তারা বড় ধরনের অবক্ষয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। আমাদের দেশেও বর্তমানে বেকার সমস্যা উদ্বেগের বিষয়। এজন্য প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রে কাজ করা উচিত।

বাজেট প্রসঙ্গে আকবর আলী খান বলেন, বাজেট প্রণয়নে স্বচ্ছতা নেই। অনেক তথ্যই লুকানো হয়। কারণ অর্থমন্ত্রী নিজেও চান না নতুন কর আরোপের বিষয়ে আগে থেকে মানুষ জানুক। কর আরোপসহ অন্যান্য বিষয়ে সংসদসহ অন্যান্য ফোরামে খুব বেশি আলোচনা হয় না। বাজেট অর্থমন্ত্রী প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন। এটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, কতুটুকু অর্জন করা সম্ভব হবে। তবে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ও ৫ শতাংশের নিচে মুদ্রাস্ফীতি রাখা অভিনন্দনযোগ্য। আমি বড় বাজেটকে সব সময় স্বাগত জানাই। কিন্তু আমার দৃষ্টি হচ্ছে বাজেট বাস্তবায়নে রাজস্ব সংগ্রহে সরকার বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতটুকু দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।

ভ্যাট প্রসঙ্গে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সিপিডির সঙ্গে একমত আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বেশি হয়ে যায়। ভ্যাট ব্যবস্থায় দলিল রেখে রিবেট নেওয়ার যে সুযোগ রাখা হয়েছে সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। কারণ এখনো আমদের দেশে অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত মানুষই বেশি। যেমন, বিদ্যুতের মতো পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়বে। যার নেতিবাচক প্রভাব সকলকে নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমার কাছে বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দেশ ধীরে ধীরে জ্বালানি ক্ষেত্রে বিদেশি নির্ভরতায় পড়ে যাচ্ছে। কারণ আমাদের গ্যাস শেষ হয়ে আসছে, আমাদের কয়লা ব্যবহার হয় না। পরবর্তী পাঁচ-ছয় বছরে আমরা অধিকমাত্রায় জ্বালানি সেক্টরে বিদেশি নির্ভরতা আরো বাড়বে। যা একটি বড় সমস্যা। এজন্য সরকারকে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে অধিক সচেতন হওয়া জরুরি। প্রাইভেট বিনিয়োগ বাড়ছে না। কারণ বেসরকারি খাত সরকারের পক্ষে থেকে প্রণোদনা পাচ্ছে না। তবে সবচেয়ে বড় কারণ ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্বলতা। এটা দূর করতে না পারলে আমাদের বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে না।

কালো টাকা প্রসঙ্গে আকবর আলী বলেন, বছরের পর বছর কালো টাকা সাদার করার অব্যাহত সুযোগ নিয়ে সরকারের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। রেমিট্যান্সের প্রভাব কমে যাওয়া দেশের জন্য বড় একটি সমস্যা। বর্তমানে কাতার নিয়ে নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়েছে যা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ফাহমিদা খাতুন বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হবে। এর ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়বে। এ ছাড়া গ্যাসের দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে। তাই এশিয়ার আন্যান্য দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভ্যাটের হার নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি।

তিনি বলেন, বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের কমই সম্পৃক্ত হতে দেখেছি। সকলকে সংযুক্ত করে বাজেট বাস্তবায়ন করা জরুরি। বিশেষ করে বাজেট বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের সম্পৃক্তা কম থাকে। বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণে এখনো ব্যর্থতা রয়ে গেছে।

বাজেট আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান প্রমুখ।