বাংলাদেশের রাজনীতি পরিবারতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে

0
538
blank
blank

ঢাকা : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি পরিবারতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে। দেখবেন এখানে একদলীয় শুধু নয় এক ব্যক্তিও হয়ে যাচ্ছে, একটা পরিবার হয়ে যাচ্ছে। তাকিয়ে দেখেন নমিনেশন কাকে দেয়, কারা আসে, কে কোথায় আসে। সংগঠনগুলোর প্রধান কারা হয়? তাহলে বোঝা যাবে যে, তারা আজকে পরিবারতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনার সমালোচনা করে তাদের ক্ষমতা থেকে হটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাসাস ও মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কবীর মুরাদের স্মরণে এ সভার আয়োজন করে জিয়া পরিষদ। ৭ ডিসেম্বর কবীর মুরাদ ইন্তেকাল করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের লড়াই কোনো ছোটখাটো লড়াই নয়, জোর লড়াই। এ লড়াইয়ে সবাইকে অংশ নিতে হবে। আসুন, আমরা সবাই সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাই। ভয়াবহ দানবীয় যে সরকার তাকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটা নতুন নির্বাচন আমাদের আদায় করে নিতে হবে। কানাডায় রায়ে খালেদা জিয়া নির্দোষ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নাইকো দুর্নীতির মামলা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চললেও কানাডার আদালতের রায়ে এ দুর্নীতির প্রমাণ মেলেনি। নাইকো দুর্নীতির মামলা এ সরকার করেছে।

অথচ মূল যে মামলা কানাডাতে সেখানে আন্তর্জাতিক সালিশ নিষ্পত্তিকারী ট্রাইব্যুনালের রায়ের তথ্য গোপন করে রেখেছে এ সরকার। ইতিমধ্যে এ মামলার রায় হয়েছে। এ মামলায় বলা হয়েছে যে, কোনো রকম দুর্নীতি হয়নি এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য যাদের এ মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে করা অন্য মামলাগুলোও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় অন্যায়ভাবে দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়াকে অসুস্থ অবস্থায় আটক রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলোও ভিত্তিহীন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার একদলীয় ব্যবস্থাকে স্থায়ী করার জন্য বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করছে। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ দেয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। দেশে সব প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক বিবেচনায় লোক নিয়োগ দিয়ে দলীয়করণ করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতেও বাইরে উন্নয়ন কিন্তু ভেতরে ফাঁকা। বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনকে একটা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের কাছে যেতে চাই। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে যেতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণকে নিয়েই এ সরকারকে গণতান্ত্রিকভাবে পরাজিত করব। এটা আমাদের কাজ। সে কাজটিই আমরা করে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, এতে সফল হব। কারণ জনগণের শক্তির কাছে সব শক্তি পরাজিত হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আজ যে রাজনীতি করছি, আন্দোলন করছি এটা শুধু বিএনপির জন্য নয়, সমগ্র দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে। তাই এ সরকারের পরিবর্তনের কোনো বিকল্প পথ নেই। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংসদ ও দেশকে ধ্বংস করে ফেলছে। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য তারা নানা আয়োজন করছে। এ দানবীয় সরকারকে সরিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আবার একটি নতুন নির্বাচন আদায় করে নিতে হবে জনগণের মুক্তির জন্য। জিয়া পরিষদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম সলিমুল্লাহ খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুসহ জিয়া পরিষদের কর্মকর্তা ও সদস্যরা।