বানিয়াচংয়ে স্কুল বন্ধ থাকার পরও টিউশন ও পরীক্ষা ফি নিচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

0
785
blank

বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু বন্ধের সময়ও বানিয়াচং উপজেলার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাসিক বেতন আদায়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানাভাবে চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যথায় অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে অভিভাবকদের। এ নিয়ে অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এক দিকে সরকার বলছে টিউশন ফি আদায়ে কোনো চাপ দেয়া যাবে না,অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলো দিনের পর দিন নোটিশ দিয়ে এমনকি মোবাইলের মাধ্যমে চাপ দিচ্ছেন ফি পরিশোধ করতে। তারা জানান, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের ফোন করে চাপ দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এক অভিভাবক বলেন, বন্ধ স্কুলে ফোন করে চার মাসের পুরো বেতন একসঙ্গে চাওয়া হচ্ছে। বানিয়াচংয়ের প্রায় সবকটি বেসরকারি স্কুলেই বেতনের জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ দিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ এমনটা ই জানা গেছে।

 

বিষয়টা অভিভাবকদের জন্য বিব্রতকর, সঙ্গে লজ্জাজনকও ! গত পাঁচ মাস ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে বন্ধ রয়েছে, সেখানে ফোন করে টাকা চাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভাবার বিষয়। জানুয়ারিতে স্কুলে ভর্তিতে সেশন ফিসের নামে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া হয়েছে। তারপর মাত্র তিন মাস স্কুল চলার পরই বন্ধ হয়েছে। পরবর্তীতে কবে স্কুল খুলবে সেটাও অনিশ্চিত। সেখানে স্কুল কর্তৃপক্ষের বেতনের ভাবনা আসে কোথা থেকে। আরেক অভিভাবক বলেন, করোনার কারণে বেতন পরিশোধের সক্ষমতা না থাকলেও তা পরিশোধ করতে হচ্ছে। বেতনটা তারা পরে নিলেও পারত।

 

blank

বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির বি শাখার এক ছাত্রীর কাছ থেকে চলতি মাসের ১ তারিখ পরীক্ষার ফি ২৫০ টাকা ও বেতন বাবদ ৫৬০ টাকাসহ মোট ৮১০ টাকা আদায় করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। একই প্রতিষ্ঠানের আরেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি বাবদ ৪০০টাকা রশিদের মাধ্যমে আদায় করে নিয়েছে তারা।

 

এছাড়া বানিয়াচং মেধাবিকাশ উচ্চ বিদ্যালয়সহ আরো বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেতনও টিউশন ফি আদায়ের জন্য শিক্ষার্থীর চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এসব না দিলে তাদেরকে পরবর্তী শ্রেণিতে উঠানো হবে না মর্মে হুমকিও দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বলছেন,বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই একমাত্র আয় টিউশন ফি। টানা পাঁচ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের বেতন-ভাতার উপরই নির্ভরশীল তারা।

এছাড়া করোনাকালেও শিক্ষকরা কষ্ট করে অনলাইনে ক্লাস,পরীক্ষা নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চালু রেখেছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রশ্ন তাহলে কেন তারা টিউশন ফি পরিশোধ করবেন না। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভিন খানম জানান,আমরাতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এখানে রয়েছে খন্ডকালীন শিক্ষক। তাদেরকে বেতন দিতে হয়। আবার স্কুলের বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে হয় এই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নিয়ে। স্কুল কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেতন নেয়া হচ্ছে।

তবে কোনো ধরণের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। মেধাবিকাশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভানু চন্দ্র চন্দ চাপ দিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা বেতনের জন্য বলেছি কিন্তু চাপ দেইনি। শুধু নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৪শ টাকা করে নিচ্ছি।

 

বিস্তারিত জানতে কথা হয় বানিয়াচং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাওছার শোকরানার সাথে। তিনি জানান-করোনাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠান যেহেতু বন্ধ,তাই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়ার নির্দেশনা নেই। আর এই মুহুর্তে নেয়াটাও ঠিক না । পরীক্ষা হবে কী না সেটার সিদ্ধান্তও হয়নি। যদি পরীক্ষার ফি নিয়ে থাকে তাহলে সেটা বেআইনি। প্রতিষ্ঠান খুললে সরকার যদি নির্দেশনা দেয় তাহলে নেয়া যেতে পারে। তার আগে না।