বারবার আঘাত আসা সত্ত্বেও ভেঙে পড়েনি আওয়ামী লীগ: শেখ হাসিনা

0
660
blank

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বারবার আঘাত আসা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ কখনও ভেঙে পড়েনি। আঘাতটা যে শুধু পাকিস্তান আমলে হয়েছে তা নয়, ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে এখন পর্যন্ত দলটিকে নিয়ে বারবার ষড়যন্ত্র হয়েছে।

আওয়ামী লীগকে হীরার টুকরার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, হীরা যত কাটা হয়, তত বেশি উজ্জ্বল হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগের ওপর অনেক আঘাত এসেছে। আওয়ামী লীগের ওপর যত বেশি আঘাত এসেছে, আওয়ামী লীগ তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের মানুষের জন্য কর্তব্যবোধ, দায়িত্ববোধ, ভালোবাসা, ত্যাগ-তিতিক্ষা। এসব আছে বলেই আওয়ামী লীগ ৭০ বছর ধরে টিকে আছে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সোমবার বিকালে আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভা যৌথভাবে পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। সভামঞ্চে উঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরেন এবং সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগ সভাপতির কপালে চুমু দেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি তার বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের অর্জনকে বাংলাদেশের অর্জন বলে উল্লেখ করেন। দেশের মানুষ যাতে উন্নত জীবন পান সে জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে উদাত্ত আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে যখন হত্যা করা হল, তারপর যারা এ দলটিকে ধরে রেখেছিল, তাদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, সেটা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করাই ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু যতই এ দলটাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে আওয়ামী লীগ তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে।

স্বাধীনতার পরও বারবার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পরীক্ষা দিয়ে যেতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সব থেকে বড় গুণ- দেশের মানুষের প্রতি দলটির কর্তব্যবোধ-দায়িত্ববোধ এবং ভালোবাসা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এত ত্যাগ-তিতিক্ষা করেছে বলেই দলটি ৭০ বছর টিকে আছে। ’

৭৫ পরবর্তী সময়েও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সেই পাকিস্তানি হানাদারদের মতো অত্যাচার সইতে হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর লক্ষ্য ছিল গ্রামগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া, প্রত্যেকের ওপর আঘাত এসেছে। দেশ যখন স্বাধীন হল, পঁচাত্তরের পর আবারও সেই একই আঘাত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জীবনে নেমে আসল। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার পরপরই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যসহ ৭ জন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে জানা যায়, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, তিনি অত্যাচার-নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন।

আওয়ামী লীগের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় না, কোনো রাজনৈতিক দল কোনো দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এত আত্মত্যাগ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার করা হয়েছে। তার আগে তো ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। যখন কোথাও ইমার্জেন্সি আসে কী হয়? তার ইমিডিয়েট পাস্ট অর্থাৎ তার আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের ওপর আঘাত আসে। কিন্তু আসল আওয়ামী লীগের ওপর। আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি যখন জোর করে দেশে আসলাম, আমাকে গ্রেফতার করা হল। আমার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলা স্বাধীনতা হারিয়েছিল। নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হয়েছিলেন মীরজাফরের ষড়যন্ত্রে। মীরজাফর তো গালিতেই পরিণত হয়েছে। এরপর ২শ’ বছর ব্রিটিশ বেনিয়ারা শাসন করেছে এ ভূখণ্ড। ২শ’ বছর পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ২শ’ বছর আগে হারিয়ে ফেলা সেই স্বাধীনতাকে আওয়ামী লীগই আবার ফিরিয়ে এনেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা এমন অবস্থায় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন যখন দেশ একটি ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে। মাত্র সাড়ে ৩ বছর শাসনামলে তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশে পরিণত করে দিয়ে যান। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে তাকে হত্যার পর রাষ্ট্রের চাকা উল্টোভাবে ঘুরতে থাকে। ২১ বছর এ অবস্থা থাকার পর আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসে এবং দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে থাকে। সেই ধারবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল।

অর্জনের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ উজ্জ্বল- এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী আমরা মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করছি।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো অহমিকা করব না। মাটির সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে মিশে দেশের মানুষের জন্য কাজ করব। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে কাজ শুরু করেছিলেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ১৯০৯ ডলার। মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়, এ দেশের মানুষ যেন সুখে শান্তিতে থাকে সে জন্য আমরা কাজ করছি। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার দেশের মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়। তার প্রতিটি পদক্ষেপেই ছিল মানব মুক্তির জন্য। নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে বাংলার মানুষের জন্য কাজ করেছেন। এ কাজটি করতে গিয়ে বারবার বাধা এসেছে সেই বাধা অতিক্রম করে তিনি এগিয়ে যান।

আবেগাপ্লুত হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যখন কোনো অর্জন হয়, আমার মনে হয়, আমার বাবা তা দেখতে পান। প্রত্যেকটা মানুষ ঘর পাবে, যার জমি আছে ঘর নাই, তাদেরও ঘর করে দিচ্ছি। একটি মানুষও যদি কষ্ট পায় তাহলে আমার বাবার আত্মা কষ্ট পাবে।

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী থেকে শুরু করে প্রয়াত সব আওয়ামী লীগ নেতাকে তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। ভাসানী সম্পর্কে তিনি বলেন, একপর্যায়ে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে যান সত্য, তবুও তিনি কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমার বাবার কাছে চিঠি লিখতেন এবং বাবা তা পাঠাতেন। কারণ, বাবা মনে করতে তিনি যে দলেই যান না কেন তিনি তো ইতিহাসের অংশ।

যে কোনো মূল্যে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আজ আমাদের শপথ নিতে হবে যে কোনো মূল্যে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। নেতৃত্বে সততা বজায় রেখে আমাদের দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন- মনে রাখবেন, একজন রাজনীতিকের জীবনে মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কিছু নেই। আমাদের নেত্রীর সততাকে সম্বল করে আগামী দিনেও এগিয়ে যাব। আমরা আজ শপথ নেব- নির্বাচনের আগে দলের পক্ষ থেকে যে ইশতেহার দিয়েছি তা অক্ষরে অক্ষরে আমরা বাস্তবায়ন করব। ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়ন করব। দলকে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ এবং সুশৃঙ্খল দল হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব। সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগর সভাপতি আবুল হাসনাত ও উত্তরের সভাপতি একেএম রহমত উল্লাহ। এছাড়াও সভা মঞ্চে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।