বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কে ফাটল

0
655
blank

আনোয়ার আলদীন: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নিয়ে বিএনপির সাথে জোটসঙ্গী জামায়াতের সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে। বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে কোন সমঝোতায় আসেনি জামায়াত। তারা তাদের মেয়র প্রার্থী এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে অপারগতা জানানোর পর এ নিয়ে দুই দলই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে। জোটের কয়েকটি শরিকদলও এখন জামায়াতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলছে। আবার কোন কোন দল জামায়াতের পক্ষে কথা বলছে। এরই মধ্যে জামায়াত গতকাল সিলেটে স্থানীয় ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ডেকেছিলো। সেখানে জোটের ১০ টি দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ বাকি ১০ টি দল এই বৈঠক বয়কট করে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতারা এখন চরম ক্ষুব্ধ জামায়াতের আচরনে। তারা মনে করছেন এতে করে জোটে ফাটল ধরছে। জামায়াত যদি শেষ পর্যন্ত তাদের প্রার্থী না সরায় তাহলে এই ফাটল জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে।

জামায়াত নেতারা গতকাল জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা সরবেন না। তাদের প্রার্থী মেয়র নির্বাচন করবে। বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে সরিয়ে দেয়ার জন্য বিএনপিকে চাপ দিচ্ছেন জামায়াত নেতারা। জামায়াত নেতারা বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, বিএনপি এককভাবে কথা বলছে। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য জোটের সিদ্ধান্ত নয়। অপরদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জামায়াতের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কথা বলছে না জামায়াত।
গত বুধবার রাতে জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুল হালিম এক বিবৃতিতে বলেন, সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের রয়েছেন। এতে বিভ্রান্তির কোনও অবকাশ নেই।
এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ঐ বৈঠকে জামায়াতকে বলা হয়েছিল, বাকি অন্য দলগুলোও বলেছে, ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী থাকবে। আগেও এমন হয়েছে। একজন প্রার্থীই থাকবে। জোটের বৈঠকে জামায়াতের নেতা মাওলানা আবদুল হালিমও বলেছেন, আমি জামায়াতের  সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে আপনাদের মতামত জানাবো। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আর সময় তো আছেই। কিন্ত বৈঠক থেকে বেরিয়ে গিয়ে তারা ভিন্ন কথা বলছেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জোটের শরিক দলগুলোর বাকি সবাই বলেছে, সিলেটে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীই মোর পুপলার। সেখানে তিনি আগেও মেয়র ছিলেন।’
এদিকে ২০১৩ সালেও সিলেটে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলেন জামায়াতের জুবায়ের। এবার ভোট করবেন- এই সিদ্ধান্তে অটল তিনি। জুবায়ের বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বিএনপিকে ছাড় দিয়েছি। এখন সিলেটে মেয়র পদে তাদের সমর্থন চেয়েছি। কিন্তু বিএনপি প্রার্থী দিয়েছে। তাই আমি আলাদাভাবে প্রার্থী হয়েছি। জামায়াতের এই মনোভাবে চরম বিরক্ত সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ। তিনি বলেন, তাদের দাবি সিলেট সিটির নির্বাচন ওপেন করে দেওয়া, তবে আমরা এর বিপক্ষে মতামত দিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে জামায়াতের কেন্দ্রিয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সিলেটে আমাদের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। সব ছেড়ে দিয়ে আমরা মাত্র একটা চেয়েছিলাম। বিএনপি ছাড় দেয়নি। জামায়াতের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, জোট হয়েছে সেটা জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক, স্থানীয় সরকার নির্বাচন কেন্দ্রিক না।
এদিকে লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, জামায়াত বাড়াবাড়ি করছে। জোটের বৈঠকের সিদ্ধান্ত তারা মানছে না। এভাবে তারা কি জোটে ফাটল ধরাতে চায়? এ ব্যাপারে নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি এডভোকেট মাওলানা আব্দুল রকিব বলেন, বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রার্থিতা নিয়ে জামায়াত সিলেটে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, তারা রাজনীতির মাঠে বন্ধুহীন হয়ে যাবে।  জোটের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তাফা ভূঁইয়া বলেন, জোটের মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতা বিরাজ করছে। কথা কাজের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপি অন্য শরিকদের কোনো দামই দিচ্ছে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতীয় ঐক্য তো শুধু একটা নির্বাচনের বিষয় নয়। দেশের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের। আলোচনা চলছে, আশা করছি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
সূত্র: ইত্তেফাক