বিচার বিভাগকে বিক্ষুব্ধ করবেন না: প্রধান বিচারপতি

0
496
blank
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, বিচার বিভাগকে বিক্ষুব্ধ করবেন না। বিচার বিভাগীয় যত কর্মকর্তা ডেপুটেশনে দিয়েছি, যদি তাদের প্রত্যাহার করি, তাহলে কারো কিছু করার থাকবে না। সোমবার নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ-সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট না হওয়ায় আবার অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন।

পরে গেজেট প্রকাশে আরো দুই সপ্তাহ সময় দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চ। সকালে শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দুই সপ্তাহ সময়ের আবেদন জমা দেন।

তখন প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন—‘কী?’

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সময়।’

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কারণটা কী?’

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘প্রসেস চলছে।’

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা হাসব না কাঁদব? হাসার জন্য তো মনে একটা কষ্ট হয়। যাই হোক, আমি কিছু বলছি না। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হয়ে গেছে। কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে। কিছু অনিয়ম আছে। এগুলো নিয়ে সারা জীবন নয়। আমরা চাচ্ছি, একটা সিস্টেমে চলে আসতে। প্রধান বিচারপতি অনিয়ম থেকে নিয়মে আসতে গেলে বলে—গেল গেল।’

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘পত্রিকায় বলা হয়, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব। আপনার মিনিস্ট্রিকে (আইন মন্ত্রণালয়) বলবেন, জেনারেল ক্লজ অ্যাক্টের ২১ পড়তে। সরকারকে বলবেন, যেসব বিচারক প্রেষণে আছে, তারা সরকারি কর্মচারী নয়। সুপ্রিম কোর্ট জানতে চেয়েছিল, প্রেষণে থাকাদের মধ্যে কারা বিদেশে যায়, তাদের নাম।’

যত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে ডেপুটেশনে দেওয়া হয়েছে, তাদের যদি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, তাহলে কারো কিছু করার নেই উল্লেখ করে এস কে সিনহা বলেন, ‘বিচারকদের ডেপুটেশনে দিয়ে নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে কাজ করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। ১৮৯৭ সালের সেকশন জেনারেল ক্লজ অ্যাক্ট ২১ দেখেন। যদি না হয় এটা ডিলেট করে দেন। এটা এত দিন ধরে চলে আসছে।’

‘আপনারা বিচার বিভাগকে বিক্ষুব্ধ করবেন না, রাষ্ট্রপতির অনুশাসন বলে এমন কিছু করতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো ফাইল পাঠিয়ে যদি বলা হয় করবেন, তখন তিনি হ্যাঁ বলেন, না বললে না বলেন। তাই বলছি ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।’

‘ভুল বোঝাবুঝি যত কম হয়, ততই ভালো। তারা মনে করলে সুপ্রিম কোর্টের ওপর আদেশ করবে, তা ভুল করবে। তারা আইন না জেনে একের পর এক ব্যবধান সৃষ্টি করছে। রাষ্ট্র এ রকম করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি সিদ্ধান্ত সিনিয়র বিচারকগণ চিন্তা করে নেয়। তারা (আইন মন্ত্রণালয়) যদি মনে করে যে, আইনের একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে দেবে, তাহলে খুব ভুল করবে।’

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘আপনারা যদি আইন না জানেন, তাহলে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা চাইবেন। বিডিআরের মামলা কোন আইনে চলবে, সেটা আমাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আমরা বলে দিয়েছি। সংবিধান অনুসারে ব্যাখ্যা আমরা দেবো, নির্বাহী নয়। এগুলো মনে করে চলবেন।’

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘অল্প বিদ্যা ভয়ংকর। মারাত্মক হয়ে যাবে। তারা যদি আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলে এটাই কারেক্ট, খুব ভুল হয়ে যাবে।’

এর আগে গত ১৫ মে আপিল বিভাগ গেজেট প্রকাশে দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছিলেন।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর হাজির করতে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এর মধ্যে ১২ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি।

পরে অবশ্য দুই সচিব আদালতে হাজির হওয়ার পর গেজেট প্রকাশে সময় দেন আদালত।

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।

আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা-সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ, যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। এর পরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান।