বিজেপি সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে জামায়াতের বিস্ময়

0
512
blank
blank

ঢাকা: ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ৪ মার্চ ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে’ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বীরভূম জেলার সিউড়িতে সাংবাদিকদের সামনে ‘প্রয়োজনে লাথি মেরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে’ ও ‘বুলেট দিয়ে প্রয়োজনে বাংলাদেশকেও ঠাণ্ডা করে দেয়া হবে’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী।
দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতীয় বিজেপির দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্যে বাংলাদেশের জনগণ দারুণভাবে বিস্মিত ও হতবাক।
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে বিশ্বের কোনো দেশই নৈতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। কারণ এ নির্বাচনে দেশের জনগণ অংশগ্রহণ করেনি। ১৫৪ জন বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, যা বিশ্বের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে কখনো ঘটেনি। যদিও সে সময় ভারত সরকারের ভূমিকা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সহায়ক ছিল না। যেহেতু এ নির্বাচন বাংলাদেশ এবং বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি সে কারণে ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক সরকার বলা যায় না এবং এ সরকার গত দুই বছরে সর্ব ক্ষেত্রে তারই প্রমাণ দিয়েছে।
জামায়াতের এ নেতা বলেন, শুধু জাতীয় নির্বাচনই নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিভিন্ন পর্যায়ে তারা গায়ের জোরে একদলীয় রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হচ্ছে না। এ সব বিষয়ে বিশ্বের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দেশ এবং সংস্থা তাদের মনোভাব দফায় দফায় এ সরকারকে জানিয়ে আসছে এবং অবিলম্বে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে। আমরা আশা করি ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা ও বিকাশের স্বার্থে তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে সম্ভাব্য সব কিছু করবে। ভারত সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ আপনারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, কোনো ব্যক্তি বা দল বিশেষের পাশে নয়।
তিনি আরো বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘প্রয়োজনে লাথি মেরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে’ এবং ‘বুলেট দিয়ে প্রয়োজনে বাংলাদেশকেও ঠাণ্ডা করে দেয়া হবে’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের জনগণ দারুণভাবে বিস্মিত ও হতবাক হয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা, স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা বিঘ্নকারী কোন কাজে তাদের দেশের কোনো নাগরিক জড়িত থাকলে ভারতের বিদ্যমান আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পূর্ণ অধিকার এবং দায়িত্বও সে দেশের সরকারের রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ের সাথে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে জড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা খুবই দুঃখজনক, অনাকাঙ্খিত, অন্যায্য এবং অগ্রহণযোগ্য।
ডা: শফিক বলেন, আমরা ভারতের সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিক এবং ভারতের জনগণের কাছ থেকে কেবল সৎ প্রতিবেশি সুলভ আচরণই আশা করি। ভবিষ্যতে দুই দেশের জনগণ এবং সরকারের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয় কিংবা পারস্পরিক সম্পর্ক বিঘ্নিত হওয়ার কারণ ঘটতে পারে এ ধরনের বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা ভারত সরকার ও বিজেপির নেতাসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আন্তরিকভাবে আহবা জানাচ্ছি।
প্রধান বিচারপতির ওপর সরকার চাপ সৃষ্টি করছে
প্রধান বিচারপতির ওপর সরকার অন্যায়, বেআইনী এবং অসাংবিধানিক চাপ সৃষ্টি করছে অভিযোগ করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের আজ শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে জামায়াত নেতাদের বিচারের নামে সরকার যে প্রহসন চালিয়ে যাচ্ছে তা আজ গোটা জাতির কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট। বিচারের শুরু থেকে বিচারকে প্রভাবিত করার যে অপচেষ্টা সরকার চালিয়ে যাচ্ছে তা আজও অব্যাহত আছে। স্কাইপ কেলেঙ্কারী, সাক্ষী অপহরণ, অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষের সাক্ষীকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ, সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের প্রকাশ্য সমাবেশে বিচারাধীন বিষয়ে বক্তব্য প্রদান, রায়ের আগেই ফাঁসি কার্যকরের ঘোষণা এবং রায়ের দিন-তারিখ নির্ধারণ করে বক্তব্য প্রদান ইত্যাদি বিষয় থেকে বিচার কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ দফায় দফায় জাতির সামনে নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সর্বশেষে সরকারের মুক্তি যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী প্রধান বিচারপতিকে টার্গেট করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সরকার কর্তৃক বিচার বিভাগের নিভু নিভু প্রদীপকে পুরোপুরিভাবে নিভিয়ে দেয়ার শামিল বলে জনগণ মনে করে। সরকারের মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য বিচারের ওপর শুধু প্রভাব বিস্তারই করবে না, দেশের বিচার ব্যবস্থার কবর রচনা করবে।
তিনি বিচারপতিদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার এ অন্যায় পথ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তি