বিডিআর হত্যার সুষ্ঠু বিচার হলে দেশে কেউ সন্ত্রাসী হামলা করার সাহস পেত না: খালেদা জিয়া

0
472
blank
blank

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড দিয়েই সূত্রপাত সব হত্যাকাণ্ডের। বিডিআরের ওই ঘটনা তখনই যদি শক্তভাবে দমন করা যেত, তাহলে আজকে বাংলাদেশে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস পেত না।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বিআইসিসি (সাবেক চীন-মৈত্রি) আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কূটনীতিক, বিশিষ্ট নাগরিক ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া।

এ অনুষ্ঠানে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে একথা বলেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, সন্ত্রাস দমনসহ সরকার সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরে গিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা ক্ষমতাসীনদের দায়িত্ব।

গুলশানের রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার পর প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘এই একবারই আমরা ব্যর্থ হলাম’-এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকারে আসার পরেই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটি কোনো ঘটনা নয়? সেখানে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস ও মেধাবি অফিসার মারা গেছে। অথচ বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হলো, কিন্তু কেন? এটিই (গুলশান হামলা) তো প্রথম না। বাংলাদেশে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। সুতরাং সরকার তো প্রথম থেকেই ব্যর্থ। কাজেই এরা ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরে গিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক, যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়।

গুলশানের রেস্টুরেন্টে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এবারের ঈদ অত্যন্ত দুঃখজনক। আগের মতো কারো মনে ঈদের সেই আনন্দ এবার নেই। কারণ, গত কয়েকদিন আগেই গুলশানের রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ রকম বর্বরোচিত ঘটনা বাংলাদেশে আগে আর কখনো ঘটেনি। এরপরে আজ আবার ঈদের নামাজে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটিও অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত।’

তিনি আরো বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করতে এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। দেশের ভেতরে একের পর এক যেসব নৃশংস ঘটনা ঘটছে, সেগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে যারা ক্ষমতায় আছে তাদের দায়িত্বটা বেশি।

সরকারের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তারা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা ও সান্ত্বনা দেয়ার পরিবর্তে যা ইচ্ছা তাই বলছে। তারা শুধু ব্লেইমগেম করছে। তারা ইচ্ছামতো ব্লেইম দেয়। যারা সত্যিকারের অপরাধী তাদের ধরা হচ্ছে না। বরং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরে নির্যাতন করা হচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত অপরাধীরা অপরাধ করেই চলেছে এবং অপরাধ করে পারও পেয়ে যাচ্ছে।’

সরকারের গাফিলতি, ব্যর্থতা  ও অযোগ্যতার কারণে গুলশানের রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘কেন এই ঘটনা ঘটলো? জিম্মিদের উদ্ধারে কেনই বা এতো সময় লাগলো? কেন ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো? তখন প্রতিটি মানুষের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। কিন্তু ভোরে আমরা কী দেখলাম? আমরা শুধু মৃত মানুষকেই দেখলাম। আমরা তো দেখি নাই, বিরাট একটা অপারেশন করে বিরাট সফলতা অর্জিত হয়েছে। সরকারের গাফিলতি, ব্যর্থতা  ও অযোগ্যতার জন্য এটি হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘সরকার কোনো ঘটনাই আজ ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারে নাই। ঢাকা শহরে যত ঘটনা ঘটেছে কোনো অপরাধীকেই তারা ধরতে পারে নাই। এমনকি নারায়ণগঞ্জের ঘটনা (সাত খুন) নিয়েও অনেক কথা শোনা যায়। ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি।’

সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিডিআর  হত্যাকাণ্ড দিয়েই এসব হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত। বিডিআরের ওই ঘটনা তখনই যদি শক্তভাবে দমন করা যেত, তাহলে আজকে বাংলাদেশে কেউ এ ধরনের (গুলশান হামলা) ঘটনা ঘটানোর সাহস পেত না।’

শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে প্রথমে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীতে বনানী কবরস্থানে শায়িত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করেন খালেদা জিয়া।

শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, ব্যারিস্ট‍ার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়; চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ খায়রুল কবির খোকন, হারুন-অর রশিদ, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল,  ঢাকা মহানগরের যুগ্ম-আহ্বায়ক কাজী আবুল বাশার, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, সাংগঠনিক সম্পাদক আকম মোজাম্মেল হক, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান প্রমুখ।