বেগম জিয়ার জামিন স্থগিতে সরকার হস্তক্ষেপ করেছে: রিজভী

0
419
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার যেন মুক্তিপণ আদায় করার জন্যই বেগম জিয়াকে বন্দী করে রেখে এক ধুলিধুসরিত স্যাঁতসেতে পরিত্যক্ত কারাগারে আটকে রেখেছে। একতরফা নির্বাচন বিপদমুক্ত করতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্যই সরকার এক নির্দয় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাচ্ছে। বুধবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব বলেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকালও বলেছেন-বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন স্থগিতে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’ কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের কথাতেই বোঝা যাচ্ছে ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনির মতো ঘটনা। অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে।

রিজভী বলেন, যেখানে মহামান্য হাইকোর্ট বা বিচারিক আদালত জামিন দিয়েছে, মামলার বিচারকাজও চলমান, বেগম জিয়া বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধী দলীয় নেত্রী, বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান, তাকে জামিন দেওয়া হলে তিনি দেশ থেকে কখনোই পালিয়ে যাবেন না, এমন একজন ব্যক্তির জামিন স্থগিত করা হলো। এমন নজির কী কোথাও আছে? এটা কেবলমাত্র বাংলাদেশের নজিরবিহীন ভোটারবিহীন সরকারই করতে পারে।

আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক, নিম্ন আদালতের দেয়া সাজা রাজনৈতিক ও জামিন স্থগিতের আদেশও রাজনৈতিক। সারাদেশের জনগণ সেটিও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। বিএনপি চেয়ারপারসনের জনপ্রিয়তাই শেখ হাসনার প্রতিহিংসার কারণ, অন্য কিছুই নয়।

রিজভী সরকারকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, এ মুহুর্তে যদি নির্বাচন হয় এবং সে নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হয় এবং জনগণ স্বত:স্ফূর্তভাবে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে তাহলে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। আওয়ামী লীগ টের পেয়েছে-জনগণ তাদের সাথে নেই, নিরপেক্ষ ভোট হলে তাদের ভরাডুবি হবে। তাদের দুঃশাসনে দেশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বারবার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার জবাব জনগণ দিতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের লুটপাট, দুর্নীতি, অপশাসনের বিরুদ্ধে রায় দিতে জনগণ উদগ্রীব হয়ে আছে। তাই আওয়ামী লীগ দিশেহারা হয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো ও জালনথির মাধ্যমে মামলা দিয়ে নিম্ন আদালতকে ব্যবহার করে সাজানো রায় দিয়ে কারবন্দি করে রেখেছে। নকলের ছাঁচে ঢালাই করা আইনী প্রক্রিয়ায় সাজা দিয়ে এখন বেগম খালেদা জিয়া যাতে জামিনে বের হতে না পারেন সেজন্য আদালতকে শুধু প্রভাবিতই নয়, সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে।

বিএনপির এই নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করতে চাই-কিভাবে তিনি বলেন বেগম খালেদা জিয়া আর কারাগার থেকে বের হতে পারবেন না। তাহলে তার পদ কী চীফ জাস্টিসেরও ওপরে? মনে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে কব্জায় রাখতে তাকে অসীম ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন।

এদিকে আইনমন্ত্রীও বলেছেন-উচ্চ আদালত জামিন দিলেও বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন না। এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মিথ্যা সাজানো মামলায় দন্ড দেয়া আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই এগুলো হচ্ছে।

রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন সরকার দেশের একমাত্র জনপ্রিয় নেত্রী বেগম জিয়াকে তাদের বিপদ মনে করে। এক ভয়ঙ্কর অসহিষ্ণুতার পরিবেশে শেখ হাসিনা রক্তলোলুপ শাসকের মতো দেশ শাসন করছে। জগণের ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে। গণতন্ত্র, মানুষের মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার ইত্যাদি দাবি করার জন্যই বেগম জিয়াকে সইতে হচ্ছে অবর্ণনীয় ও নিষ্ঠুর নির্যাতন। আওয়ামী সরকরের অভিপ্রায় হলো-অসুস্থতা ও শোকে-বেদনায় বিপর্যস্ত করে তাদের নির্দেশিত হিসাব বেগম জিয়াকে মেনে নিতে। কিন্তু সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এখনও চিনতে পারেনি।

তাদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা-এরশাদের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তিনি যে আপোষহীন উপাধী পেয়েছেন এটি তাঁর দৃঢ় ব্যক্তিত্বের জন্য এবং জনগণের প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষার জন্য। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মতো জনগণের সাথে প্রতারণা করার ঐতিহ্য বেগম জিয়ার নেই।

তিনি আরো বলেন, একই অনড় কমিটমেন্টের ফলশ্রুতিতে দেশনেত্রীকে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাঠাতে পারেনি। ২০১৫ সালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বেগম জিয়া তার কনিষ্ঠ পুত্রের মৃত্যু সংবাদে শোকে পাথর হয়েও তাকে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে টলাতে পারেনি বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার। যখন আরাফাত রহমান কোকোর লাশের কফিন এনে মুখের কাফন সরিয়ে মাকে মুখ দেখানো হলো তখন মনে হলো তার হৃদয়ে যেন হিমালয় পর্বত ভেঙ্গে পড়েছে, তথাপিও তিনি তার অভিষ্ট পথ অর্থাৎ জনগণের প্রতি অঙ্গীকার থেকে বিন্দুমাত্র সরে যাননি।

সুতরাং বেগম জিয়ার ওপর কোন চাপ প্রয়োগ করে লাভ হবে না। আগামী নির্বাচনে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি অংশগ্রহণ করবে।

এছাড়া গতকাল যশোরের অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক কাজী গোলাম হায়দার ডাবলু, যশোর জেলা বিএনপির সদস্য মোঃ মশিয়ার রহমান, নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কমিশনার মোঃ জাকির হোসেন, অভয়নগর থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোঃ গিয়াস হোসেন, বর্তমান সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিবসহ মোট ২৭ জন নেতাকর্মী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় হাজিরা দিতে গেলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

আমি দলের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ভুয়া ও অসত্য মামলা প্রত্যাহার করে তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।