বৈঠক না হওয়ার কারণ খুঁজছে জাতীয় পার্টি

0
1015
blank
blank

ঢাকা: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক না হওয়ার কারণ খুঁজছে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে ভাতৃপ্রতিম এই দেশটির সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কিন্তু এ সত্ত্বেও ঢাকায় দু’দিনের ঝটিকা সফর শেষে ফিরে যাওয়া চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাক্ষাৎ পাননি তারা। বিষয়টির নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করতে দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন পার্টি চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও তার প্রতিনিধি দল সরকারের সঙ্গে বৈঠক করবে এটা স্বাভাবিক। পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির সঙ্গে শি জিনপিংয়ের বৈঠক হয়নি, না চেয়ারম্যানের, না বিরোধীদলীয় নেতার। ফলে এটি পরিষ্কার বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এই গুরুত্বহীনতা দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অবনমন।’
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি শনিবার বলেন, এ ঘটনায় আমরা আহত হয়েছি। অবাক হয়েছি। খোঁজখবর নিচ্ছি, কেন এমন হল। বিষয়টি আমরাও খতিয়ে দেখছি। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মনেও এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ শনিবার বলেন, এ ঘটনায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি বলেন, ‘আমি দেশের বাইরে ছিলাম, বলতে পারব না।

জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টি বড় ফ্যাক্টর। কে জাতীয় পার্টির সঙ্গে দেখা করল আর কে দেখা করল না, তা বিবেচ্য নয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবেই টিকে আছে। টিকে থাকবে। তবে এটা ঠিক দেখা সাক্ষাৎ হলে ভালো লাগত।

সংশ্লিষ্টদের মতে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসেন। এর প্রায় তিন দশকের মাথায় ১৪ অক্টোবর দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসেন চীনের আরেক প্রেসিডেন্ট। শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে ২৭টি চুক্তি হয়। এর মধ্যে ১৫টি দুই সরকারের মধ্যে এবং ১২টি ঋণ ও বাণিজ্যবিষয়ক।

সফরে এসে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি শি জিনপিং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ কিংবা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ- কারও সঙ্গেই দেখা হয়নি তার। অথচ চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসার প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়াং কিছুদিন আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে তার বারিধারার বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে বৈঠক করেন। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের বিশেষ সহকারী জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে আসা নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতা কিংবা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান- কারও সঙ্গেই চীনা প্রেসিডেন্টের বৈঠক আয়োজন করা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক শীর্ষ নেতার মতে, চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা না হওয়ার পেছনে মূলত সমন্বয়হীনতাই দায়ী। পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদের হয়ে তার আন্তর্জাতিক বিষয়াদি দেখভাল করেন হাবিবুর রহমান। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের হয়ে তার আন্তর্জাতিক বিষয়াদি দেখভাল করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন, ফখরুল ইমাম এবং রওশন আরা মান্নান। সূত্র জানায়, দু’পক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণেই মূলত চীনা রাষ্ট্রপতির দেখা পায়নি জাতীয় পার্টি।