সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম: গত বুধবারের কলামটি ছিল ‘দৃষ্টি দূরদৃষ্টি’ বিষয় নিয়ে। দৃষ্টি বা দূরদৃষ্টির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা সম্পূরক আরেকটি বিষয় হলো প্রশিক্ষণ। আজকের লেখাটি তাই প্রশিক্ষণ বিষয়ের অবতারণা।
একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করার মানে এই নয় যে, শুধু সরকারের ক্যাবিনেটের অংশ হবেন অথবা পার্লামেন্টের সদস্য হবেন এবং নিয়মিত কিছু কাজ করবেন। একজন মানুষ যেমন পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সমন্বয়ে গড়া; এর পরও অনেকে বলে, মানুষের মাঝে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বিদ্যমান। তদ্রুপ, একটি রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালায় বিভিন্ন বিভাগ বিদ্যমান। তার মধ্যে একটি হলো নির্বাহী বিভাগ, অপরটি আইন প্রণয়ন বিভাগ, আর তৃতীয় বিভাগটি হলো বিচার বিভাগ। এ ছাড়া মানবিক দিক বিবেচনায় চতুর্থ একটি বিভাগের কথা অনায়াসে বলা যায়- সেটি হলো ‘দেশপ্রেম ও বিবেক’ বিভাগ। এ তিনটি বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মধ্যে যদি দেশপ্রেম ও বিবেক না থাকে তাহলে তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ও সুষ্ঠুভাবে পালন করতে ব্যর্থ হন। দু-একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বোঝা যাবে।
একজন ব্যক্তিকে বিসিএস পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি বা লিখিত এবং চূড়ান্ত ভাইভা কিংবা মৌখিক পরীক্ষায় পাস করার পর আপাতত নির্বাচন করা হয় বা মনোনয়ন দেয়া হয়, স্বাস্থ্যগত পরীক্ষায় পাস করা সাপেক্ষে। তখন তিনি মনোনয়ন পান চূড়ান্তভাবে। তিনি সরকারের কাছ থেকে একটি পত্র পান, সেই মোতাবেক যেখানে রিপোর্ট করার কথা সেখানে রিপোর্ট করেন বা নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত থাকেন। তার পর তিনি যে ক্যাডারের অফিসার, সে ক্যাডারের মৌলিক কিছু প্রশিক্ষণ আছে এবং তিনি সেই প্রশিক্ষণটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেন। বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের প্রশিক্ষণ এক রকম, বিসিএস কর ক্যাডারের প্রশিক্ষণ অন্য রকম। আবার বিসিএস সিভিল আনসার বাহিনীতে যারা যান তাদের প্রশিক্ষণ আরো ভিন্ন। এভাবে প্রতিটি বিভাগের প্রশিক্ষণ বিভিন্ন ক্যাটাগরি অনুসারে বিভক্ত। এই প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিটি তার জীবনের শুরু থেকে ২৫-২৬ বছর পর্যন্ত যা কিছু অর্জন করেছেন, সেই অভিজ্ঞতাকে পেশার চাহিদা দিয়ে প্রলেপ দেয়া। চাকরিটি করতে গেলে কী কাজ জানতে হবে, কোন নিয়মে কাজ করতে হবে, তার পূর্বধারণা দেয়াই হলো প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য।
আরেকটা উদাহরণ দিই। সেনাবাহিনীর অফিসারদের প্রশিক্ষণের দিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, সাড়ে ১৭ থেকে সাড়ে ১৯ বছর বয়সসীমার মধ্যে আবেদন করতে হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য। প্রথমে একটি ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা হয়, তার পর একটি লিখিত পরীক্ষা হয়, এরপর ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে দেড় বা সাড়ে তিন দিনের একটি পরীক্ষা নেয়া হয়। তার পর চূড়ান্ত মেডিক্যাল এবং এরপর তিনি নিয়োগ পান। এরপর প্রশিক্ষণের জন্য গেলে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ১০ মাইল উত্তরে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে উপস্থিত হতে হয়। সেখানে প্রায় দুই বছর প্রশিক্ষণ নেন। অতঃপর তিনি একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোর বা রেজিমেন্টে নিয়োগ পান। ওখানে আসার তিন-চার মাসের মধ্যেই তিনি মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হন। তিনি যদি যোগাযোগ বা সিগন্যাল কোরের অফিসার হন, তাহলে তিনি যশোর সেনানিবাসে যাবেন। আর তিনি যদি পদাতিক কোর বা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার হন তবে তিনি সিলেট যাবেন কিংবা গোলন্দাজ বাহিনীর অফিসার হলে চট্টগ্রামের হালিশহর যাবেন। তিনি যদি আর্মি সার্ভিসেস কোরের অফিসার হন তাহলে তিনি খুলনার উত্তরে গিলাতলায় যাবেন। এরূপ বাকিদের জন্য নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। এসব কথা বলার মানে হলো আগামী দিনে যে যে ধরনের কাজ করবেন তাকে সে বিষয়ের নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ নিতে হয়।
গ্রামের মসজিদগুলোতে ইমামতি করেন ইমাম সাহেবরা। যুগ যুগ ধরে কাজটি হয়ে আসছে। গ্রামের মসজিদগুলোতে যারা ইমামতি করেন তারা সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি। সাধারণ মুসলমানেরা গ্রামগুলোতে ইমাম সাহেবদের দ্বারাই বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানা পালন ও উদযাপন করে থাকেন। যেমন- ঈদে মিলাদুন্নবী, মহররমের দিন, শবে মিরাজের সন্ধ্যায়, শবে বরাতের রাত এবং বিয়ে, খৎনা- এই জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে তাদের মধ্যে কেউ না কেউ উপস্থিত থাকেন। মসজিদের ইমাম হতে হলে একজন ব্যক্তিকে নামাজের পদ্ধতি তথা ঈমান আকিদা কুরআন-সুন্নাহ ইত্যাদি সব বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হয়। তার পোশাক-আশাক, আচার-আচরণ, দায়িত্ব ও মূল্যবোধ, চলন-বলন ইত্যাদি গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সর্বোপরি তাকে একজন পরহেজগার নামাজি হতে হবে; যাতে সমাজের মানুষ তাকে অন্য ১০ জনের চেয়ে আলাদা বা সম্মানিত মনে করেন এবং নিশ্চিত হন যে, তিনি একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। তবেই গ্রামবাসী তাকে ইমাম হিসেবে মেনে নেবেন। মসজিদে ইমামতি করেন তারা মাদরাসা থেকে এসব বিষয় শিখে আসেন বিধায় তারা ইমামতি করতে পারেন। কিন্তু একটি মসজিদের ইমাম শুধু কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানো কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনের জন্যই এ পদে নিযুক্ত হন? নাকি আরো কোনো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সামর্থ্য রাখেন? একসময় পাকিস্তান সরকার বা বর্তমান বাংলাদেশ সরকার মনে করল ইমাম সাহেবরা, এসব কাজ ছাড়াও নানা দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা রাখেন। ঠিক তখনই ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলো। সেই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইমামদের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন ও জ্ঞানের পরিবর্তন আনা, আচার-আচরণে পরিবর্তন আনা, চিন্তাশক্তির পরিবর্তন এবং কর্মের স্পৃহায় নতুনত্বে জোর দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইমাম প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। গত কয়েক বছরে তারা কয়েক হাজার ইমামকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। মুরগি পালন, শিশুদের টিকা দেয়া, সামাজিক কুসংস্কার, ব্যাধি, যৌতুকপ্রথা, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ রোধ করতে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তাদেরকে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমাম তার আগের অবস্থা থেকে আরো অনেক বেশি গুণগত মানসম্পন্ন এবং কর্মস্পৃহায় আরো উদ্যোগী হয়ে ওঠেন।
তিনটি উদাহরণ দিলাম এই মর্মে যে, প্রশিক্ষণ একজন মানুষকে বাস্তব জীবন ও কর্মস্পৃহায় শক্তিশালী করে তোলে। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে, দেশ চালানোর জন্য কি কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে? আমাদের দেশের শাসকেরা দেশ পরিচালনার জন্য কোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন কি? দেশ পরিচালনা কাজে দুই ধরনের ব্যক্তি জড়িত। এক প্রকারের নাম আমলা, অপরটি হলো রাজনীতিবিদ বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। পাঠকদের কাছে প্রশ্ন, এই দুই ক্যাটাগরির ব্যক্তির মধ্যে কাদের কতটুকু প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে? এটি বিবেচনার ভার আপনাদের ওপর। গত ৪৬ বছরে বাংলাদেশকে যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব, এ দেশের শুরু থেকে যা কিছু অর্জন হয়েছে এসবের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্বদানকারীদের অবদান, যা অনস্বীকার্য। তার জন্য প্রথমে আমরা সব রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানাই। সবক্ষেত্রে কম-বেশি তাদের অবদান বিদ্যমান, তা না হলে আজকের বাংলাদেশ এ পর্যায়ে আসত না। তারা একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন বলে বর্তমান প্রাইভেট সেক্টরে শিল্পোদ্যোক্তারা এবং এনজিওগুলো কিছু অবদান রাখতে পেরেছেÑ ফলে বর্তমান বাংলাদেশে কিছুটা উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি এটুকু উন্নয়ন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকব? এতটুকুই কি আমাদের ভাগ্যে লেখা ছিল? উত্তরে নির্দ্বিধায় বলতে হচ্ছেÑ না, আমাদের এটুকু উন্নয়ন ভাগ্য লেখা ছিল না আর এটুকু নিয়েই আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না। আমাদের ভাগ্যে আরো অনেক বেশি কিছু লেখা ছিল। কিন্তু আমরা সেটাকে ধরতে পারিনি বা সেটার মূল্যায়ন করিনি। তার জন্য দুই প্রকৃতির ব্যক্তি যারা দেশের নেতৃত্ব দেন বা প্রশাসনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, তারা দায়ী। অর্থাৎ রাজনীতিবিদ বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আর সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আমলাতন্ত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের মধ্যে যদি সূক্ষ্মদর্শী ও দূরদর্শী লোকের অভাব থাকে, চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির ক্ষীণতা থাকে, সমন্বয় করার শক্তি বা পরিকল্পনা করার যোগ্যতা না থাকে, তাহলে তারা গতানুগতিক নেতৃত্বই দিয়ে যাবেন। কখনো তারা ব্যতিক্রমধর্মী বা উল্লেখযোগ্য কোনো নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। একটি দেশকে দ্রুত সামনে এগিয়ে নিতে হলে যে উল্লেখযোগ্য বা ব্যতিক্রমধর্মী দিকনির্দেশনার প্রয়োজন, সেই ব্যতিক্রমধর্মী দিকনির্দেশনা সর্বযুগে সর্বদাই ছিল। বিনামূল্যে বাতাস থেকে অক্সিজেন পাওয়া যায় না। কোনো জাতির ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে ওই জাতি কত ঘন ঘন ব্যতিক্রমধর্মী নেতৃত্ব পাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, আমেরিকার সব প্রেসিডেন্টই আইজেন হাওয়ার কিংবা জন এফ কেনেডির মতো নন। অপরপক্ষে সবাই আবার মনিকা লিউনস্কির সাথে কেলেঙ্কারির জন্য আলোচিত প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও নন অথবা যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ নন। ইংল্যান্ডের বা ব্রিটেনের ইতিহাসে সবাই উইনস্টন চার্চিল নন, আবার মার্গারেট থ্যাচারও নন। ইন্ডিয়ার ইতিহাসে সবাই জওয়াহেরলাল নেহরু নন। গত ২০-৩০ বছরে ভারতে কেউ পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, আবার কেউ নয় মাস ক্ষমতায় ছিলেন। তবে কেউ এ পর্যন্ত নেহরুর পর্যায়ে যেতে পারেননি। আবার দেখা গেছে, নেহরু না হয়ে কেউ দ্বিতীয় প্রজন্মের ভারতীয়দের মধ্য থেকে নিজের জন্য মজবুত করে জায়গা করে নিয়েছেন। যেমন ড. মনমোহন সিং। অথচ তিনি সর্বভারতীয় একজন নেতা নন কিংবা যৌবন থেকে তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। তবে এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার ভাগ্য বেশ ভালো। তারা ডা: মাহাথির মোহাম্মদকে পেয়েছিলেন। মালয়েশিয়ার মতো দেশে ২২ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। আমাদের দেশে প্রায় সবাই এই কথাটি বলে যে, আমরা যদি একজন মাহাথির মোহাম্মদ পেতাম, আমাদের দেশে যদি একজন মাহাথির থাকতেন কতই না ভালো হতো! সেই মাহাথির মোহাম্মদ কিভাবে আধুনিক মালয়েশিয়া সাজালেন, তার বিবরণ আছে তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে। সে বইটির নাম অ উড়পঃড়ৎ ওহ ঞযব ঐড়ঁংব : ঞযব গবসড়রৎং ড়ভ ঞঁহ উৎ. গধযধঃযরৎ গড়যধসসধফ. যার বাংলা অর্থ ‘বাড়ির ভেতরে একজন ডাক্তার : মাহাথির মোহাম্মদের স্মৃতিচারণ’। আসলে মালয়েশিয়াকে যদি একটি রুগ্ণ ঘর ধরি এবং প্রধানমন্ত্রীকে যদি ডাক্তার মনে করি এবং ডাক্তার ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র দিয়ে রোগীকে সুস্থ করলেন- তাহলে এটি সহজে অনুধাবনযোগ্য যে, জনাব মাহাথির উপযুক্ত ডাক্তার হিসেবে কী চিন্তায় কী নিয়মে কী অভিনব দূরদর্শিতায় আধুনিক মালয়েশিয়াকে সাজালেন। কোন প্রতিকূলতার মাঝে কিভাবে উত্তরণ ঘটিয়েছেন, তার ৮৫০ পৃষ্ঠার বইটিতে তার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। অপর একজন হলেন আধুনিক সিঙ্গাপুরের বিশ্বখ্যাত রূপকার লি কুয়ান ইউ। সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ প্রায় দুই দশক প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন। তাকে আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার বলা হয়ে থাকে। তিনি দীর্ঘ একটি পুস্তক লিখেছেন সোয়া সাত শ’ পৃষ্ঠার বইটির নাম হলো ঋৎড়স ঞযরৎফ ডড়ৎষফ ঞড় ঋরৎংঃ : ঞযব ঝরহমধঢ়ড়ৎব ঝঃড়ৎু. অর্থাৎ ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ সিঙ্গাপুর প্রথম বিশ্বের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার কাহিনী’। এসব কথা বলার কারণ হচ্ছে, এই দু’টি জনপ্রিয় সৃজনশীল ব্যক্তিত্বের জীবনী পড়ার জন্য অত্যন্ত বিনয়ের সাথে অনুরোধ করব বাংলাদেশের সব সচেতন নাগরিক এবং রাজনীতিবিদদের, যারা দেশ পরিচালনা করার জন্য আগ্রহী। এই দু’জন ছাড়াও আমরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নেহরুর নাম নিতে পারি। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এসব আধুনিক রূপকার (মাহাথির, লি কুয়ান ইউ ও নেহরু) কি ফেরেশতা ছিলেন? উত্তরে সবাই আমার সাথে একমত হবেন যে, এরা কেউ ফেরেশতা ছিলেন না; বরং তারা অন্য ১০ জনের মতো রক্ত-মাংসের সমন্বয়ে গড়া মানুষ। শুধু পার্থক্য হলো তাদের মেধা, চিন্তাচেতনা, বুদ্ধিমত্তা, দেশপ্রেম ও রাষ্ট্র পরিচালনা ছিল অন্য শত কোটি মানুষের চেয়েও অনেক বেশি পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন। তাদের দূরদর্শিতা, মানবতা ও দেশপ্রেম তাদেরকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে সাহায্য করেছিল। তাই তারা তাদের দেশকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হলেন। তারা দৈনন্দিন রাজনীতি করেছেন, বার্ষিক রাজনীতি করেছেন, নির্বাচনের রাজনীতি করেছেন, এর বাইরেও তারা দেশকে কিভাবে সামনে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে চিন্তা করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। সময়ের বণ্টন, চিন্তার বণ্টন, আগ্রহের বণ্টন সব কিছুকে সমন্বিত করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছেন বিধায় তারা সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সবার কাছে স্মরণীয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায়, আমরা সব সময় মারামারি-হানাহানিতে লিপ্ত। বিরোধী দলকে নির্মূলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু আমরা কোনো কিছুতেই ফয়সালা করতে রাজি না।
যেকোনো জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। তেমনি দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা ও সাহসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। কথাটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লেখায় বারবার বলেছি, আজো বলছি, আমাদের নেতৃত্বের কাছ থেকে আমরা সেই চিন্তার শক্তি, আগ্রহ বা দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের আসক্তিটা কামনা করছি। সর্বোপরি সে জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দরকার। তাদের অনুশীলন দরকার। তা না হলে একটি দেশ হঠাৎ করে সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার মতো আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠবে না। জনগণকে রাজপথের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয় রাজপথেই। দেশকে সূক্ষ্মভাবে পরিচালনা করার জন্য সেক্রেটারিয়েটে বসে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না। এ দিকে রাজপথের প্রশিক্ষণও আমরা এখন ভুলে যাচ্ছি। উদাহরণস্বরূপ বলতে হচ্ছে, কত বছর ধরে ডাকসুর নির্বাচন হতে দেয়া হচ্ছে না? এ প্রসঙ্গে কেউ কোনো আন্দোলন কিংবা আপত্তি তুলছেন না। না সাবেক ছাত্রনেতারা, না রাজনৈতিক নেতারা। সবাই কেবল ‘গণতন্ত্র গণতন্ত্র’ বলে চিৎকার দিয়ে গলা ফাটান। কিন্তু গণতন্ত্রের সূতিকাগার যদি ছাত্রসমাজ হয়, তাহলে সেই ছাত্রসমাজ কেন গণতন্ত্রের স্বাদ পাচ্ছে না? এর কোনো উত্তর কেউ দিচ্ছে না। আমরা কি নিজেদের সাথে প্রতারণা করছি না? আমি আহ্বান জানাচ্ছি তরুণসমাজকে চিন্তা করতে, তাদের মধ্যে সেই দূরদৃষ্টি কিভাবে আনা যায়, তারাই চিন্তা করবেন। তাদের সাথে ইন্টারঅ্যাকশন বা মিথষ্ক্রিয়ায় বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি প্রবীণ ও তরুণের সমন্বয়ে একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
লেখক : মেজর জেনারেল (অব:); চেয়ারম্যান,
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
ই-মেইল : mgsmibrahim@gmail.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.