ব্রিটেন: বিদেশি শিক্ষার্থীদের ইমিগ্রেন্ট হিসাবে অন্তর্ভূক্ত রাখা নিয়ে অনেকটা একা হয়ে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তাঁর নিজ দলের প্রভাবশালী এমপিরা দ্বিমত পোষণ করে বলছেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ইমিগ্রেন্ট হিসেবে গণ্য করা ঠিক হচ্ছে না। বুধবার (১৯ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত একটি বিলে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের অনেক এমপি বিদেশি শিক্ষার্থীদের ইমিগ্রেশন হিসাব থেকে বাদ দেয়ার পক্ষে ভোট দেন বলে জানা যায়।
এই সংশোধনী প্রস্তাব পাশ হওয়ায় ব্রিটেনে স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত অনেকটা সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রতি বছর যে পরিমাণ লোক ব্রিটেনে আসে, আর যে পরিমাণ লোক ব্রিটেন ছেড়ে যায়- তার পার্থক্যকে মোট অভিবাসন হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকার মোট ইমিগ্রেশন বছরে এক লাখের নিচে নামিয়ে আনতে চায়। সেই লক্ষ্য অর্জনে তারা ইমিগ্রেশন আইনে একের পর এক কড়াকড়ি আরোপ করে। সবচেয়ে বেশি কঠোরতা আসে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। সমালোচকরা বলছেন, ইমিগ্রেশন কমিয়ে আনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি অন্যায্য সব শর্ত চাপিয়ে দিয়েছে। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি, বিদেশি শিক্ষার্থীদের মোট ইমিগ্রেশন হিসাব থেকে বাদ দিতে হবে। কারণ তারা পড়াশোনা করতে ব্রিটেনে আসে, স্থায়ী বসবাসের জন্য নয়। এবার সরকারী দলের সাংসদরাও এমন দাবির সাথে একাত্ম হয়েছেন।
বর্তমানে সরকারের উত্থাপিত ‘উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা’ (হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ বিল) শীর্ষক একটি বিল পাশের অপেক্ষায় রয়েছে। গত মাসে ব্রিটিশ সংসদের উচ্চ কক্ষ ‘হাউজ অব লর্ডস’ ওই বিলে একটি সংশোধনী প্রস্তাব পাশ করে। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সরকারের জননীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থীকে দীর্ঘ মেয়াদি অভিবাসী হিসাবে গণ্য করা উচিত হবে না। আগামী বুধবার বিলটি নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সেও পাশ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা সরকারী দলের অনেক এমপি সংশোধনী প্রস্তাবটি সমর্থন করবেন বলে জানা যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন, অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলার) ফিলিপ হ্যামন্ড, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী লিয়াম ফক্স এবং বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জো জনসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের অভিবসান হিসাব থেকে বাদ দেয়ার পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেছেন। কারও কারও যুক্তি এটি মোট অভিবাসন কমাতে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্যও সহয়াক। কারণ, গত সেপ্টম্বর পর্যন্ত এক বছরে ব্রিটেনে মোট ইমিগ্রেন্ট হিসাব করা হয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার। এরমধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজরই ছিল বিদেশি শিক্ষার্থী। মোট ইমিগেশন হিসাব থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বাদ দেয়া হলে তা ব্রিটেনে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমনের জন্য সহায়ক হবে। এতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে। সরকারের শিক্ষাবিভাগ বলছে, লর্ডস সভার যুক্ত করা সংশোধনী শিক্ষার্থী ভিসার যথযথ যাচাই বাছাইকে ঝুঁকিতে ফেলবে। জাতিসংঘের সংজ্ঞায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ মেয়াদি অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দেয় শিক্ষাবিভাগ। গত সেপ্টম্বর পর্যন্ত এক বছরে ব্রিটেনে বিদেশি শিক্ষার্থীর আগমন কমেছে প্রায় ৪১ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, কঠোর নীতির কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে ব্রিটেন আকর্ষণ হারাচ্ছে। তারা বলছে, বিদেশি শিক্ষার্থীর আগমন কমতে থাকলে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের কোর্স ফি বাড়াতে বাধ্য হবে তারা।
এদিকে ব্রেক্সিটের কারণে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের দাম পড়ে যাওয়ার প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ওপর। স্টুডেন্ট লোনের সুদের হার ইতিমধ্যে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আসছে সেপ্টম্বর থেকে স্টুডেন্ট লোনের সুদের হার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির সাথে সমম্বয় করতে এই সুদের হার বাড়ানো হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.