ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সভায় হট্টগোল

0
436
blank
blank

বুধবার সকাল ১০টা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের সঞ্চালনায় শুরু হয় সাধারণ সভা। নির্ধারিত চারটি এজেন্ডা নিয়ে শুরু হওয়া এ সাধারণ সভায় কয়েক দফায় হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন ইস্যুতে অনেক কেন্দ্রীয় নেতার তীব্র সমলোচনার মুখে পড়তে হয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকে। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে এ সভা।

বর্তমান কমিটির নির্ধারিত সময় শেষ হচ্ছে চলতি মাসের ২৫ তারিখ। কিন্তু এখনও কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা না করায় প্রতিবাদ করেন অনেক নেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন শেখ রাসেল টাওয়ার থেকে টেন্ডারবাজির অভিযোগ ওঠে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। সমালোচনা হয়েছে তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়েও। এছাড়া নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি দিতে বিলম্ব হচ্ছে বলেও অভিযোগ অনেকের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিনিয়র নেতারা সংগঠন পরিচালনায় বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন।

সভায় উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে যে বিষয়টি নিয়ে সভায় সবচেয়ে বেশি হট্টগোল সৃষ্টি হয় সে বিষয়টি হচ্ছে সভা চলার একপর্যায়ে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলি না। বিবাহিতদের কমিটিতে রাখা যাবে না, সেটাও মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে বলে দিতে হয়। যেহেতু গঠনতন্ত্র আছে, তা সম্পূর্ণভাবে ফলো করতে হবে। আর ফলো করা না হলে বলতে হবে, গঠনতন্ত্র অবৈধ। কারণ ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই যখন কাউন্সিল হয় তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হিসেবে আমি দুই বছর রাজনীতি করার স্বপ্ন দেখেছি। দুই বছরকে ধরেই আমি সবকিছু সাজিয়েছি। আগামী ২৬ তারিখের (জুলাই) পর কমিটি যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকে, তাহলে আমাদের কোনো রূপরেখা থাকবে না। আমাদের নির্দিষ্ট করে দেয়া হোক।’

তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, যদি আগামী ২৬ তারিখের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য কমিটি থেকে যায়, তাহলে কি এতদিনের জন্য আমি আমার বিয়ে আটকে রাখব? পারিবারিক জীবন থেমে থাকবে। কথা হলো, ২৬ তারিখের পর কমিটি থাকবে কি থাকবে না- এই প্রশ্নের উত্তর আমরা বিভিন্ন জায়গায় পেয়েছি। সেই উত্তরটা হলো- জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন বলবেন, তখন কমিটি হবে। হ্যাঁ, জননেত্রী শেখ হাসিনা কখন বলবেন তাও আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির জানা দরকার। আমরা আপার কাছে গিয়ে বলি যে, আপা ২৬ তারিখ আমাদের মেয়াদ শেষ। আপনি আমাদের নেত্রী। আপনি যদি মনে করেন আপনার প্রয়োজনে এই ছাত্রলীগ আগামী নির্বাচন করবে তাহলে আমরা নির্বাচন করব। আর আপনি যদি মনে করেন, এই ছাত্রলীগের চাইতে আরও পরিশীলিত ছাত্রলীগ, শক্তিশালী ছাত্রলীগ দিয়ে আগামী কমিটি হতে পারে। তাহলে তাই হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমার সন্তান যে আমার থেকে আরও জ্ঞানী হবে না, তার গ্যারান্টি কি? যারা বলে, নতুন কমিটি হলে নতুন যারা আসবে তারা নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে না, মুখ থুবড়ে পড়বে। আমরা এটা মানি না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জননেত্রী শেখ হাসিনার সংগঠন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থাকলে, জননেত্রী শেখ হাসিনা থাকলে এই ছাত্রলীগ থাকবে। তাই ২৬ তারিখের পরে আমাদের রূপরেখা কী হবে পরিকল্পনা কী হবে- তা নির্ধারণ করতে হবে। নির্বাচনের প্রশ্ন আসছে কেন? ছাত্রলীগ কি নির্বাচনমুখী সংগঠন? আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী সংগঠন। ছাত্রলীগ ছাত্রদের সংগঠন। হ্যাঁ, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে আদর্শিক জায়গা থেকে ছাত্রলীগ সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এখানে আমি দায়িত্বে না থাকলেও তো সাহায্য হবে। আমি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক না থাকলে অন্য একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলে সে সাহায্য করবে। ছাত্রলীগ তো নির্বাচনমুখী সংগঠন না। তাহলে নির্বাচনের প্রশ্ন বারবার কেন? আর যদি আগামী নির্বাচন এই ছাত্রলীগ করে, সেটাও নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। যেহেতু জননেত্রী শেখ হাসিনার কথা আসছে- তাহলে সেটা তার সামনেই স্পষ্ট হবে। তিনি যেই বার্তা দিয়েছেন তা সংবাদ সম্মেলন করে জানাতে হবে। যদি জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের দেখা করার সুযোগ না থাকে, তাহলে আমরা খোলা চিঠি লিখতে পারি। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে শুধু শুধু ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ফায়দা লোটা যাবে না।’