ভালা করলে ভাল আছে, মন্দ করলে যার যার কপালে আছে

0
1282
blank
blank

রুদ্র মুহাম্মদ বশির: 
আজ থেকে প্রায় একশত বছর আগের কথা। এক ভিক্ষুক ছিল,গ্রামে গ্রামে সে ভিক্ষা করে চলতো। লোকটা ছিল বৃদ্ধ,আপন বলতে তার কেউ নেই। ভিক্ষা করলে দু মুটো ভাত জুটতো, নইলে তারে উপোস করতে হতো। সে যে গ্রামে ভিক্ষা করতে যাইতো, পরদিন আর সে গ্রামে যাইতো না। লোকটা বেশি কথা বলতো না, প্রায় সময় চুপ থাকতো। কিন্তু সে ভিক্ষা করলেও প্রায় সময় সে অসুস্থ থাকতো। তার একটা নীতি ছিল, প্রায়ই তার মুখে একটা নীতি বাক্য শুনা যেতো, তাহলো ভাল করলে ভালো আছে, মন্দ করলে যার যার কপালে আছে। এই কথাটা কারও কারও ভাল লাগতো, কারও কারও বৃষের মতো লাগতো। একটা মহিলা ছিল কুলটা চরিত্রের, তার কাছে তা বৃষের মত মনে হতো। একদিন ঐ মহিলার ভিতর একটা দুষ্টবুদ্ধি আসলো, কীভাবে তাকে মারা যায়। সে মনে মনে ভাবে কিন্তু মারার কৌশল সোজা নয়।

অনেক ভেবে চিন্তে সে ভাবলো কাল যখন ভিক্ষা করতে আসবে তখন পিঠার সাথে বৃষ দিয়ে তাকে খাওয়াব, তাহলে সে মরবে আর কোনো দিন আমাকে এই কথা শুনতে হবে না। পরদিন সে পিঠা বানিয়ে তাতে বৃষ দিয়ে দিলো আর বারবার বাহিরের দিকে তাকায়, কোন সময় ভিক্ষুক আসবে। কিছুক্ষণ পর ভিক্ষুক আসলো, মহিলা বললো, তুমি এতক্ষণে আসলে,আমি সকাল থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। ভিক্ষুক বললো কেন? সে বললো, আজ আমি পিঠা তৈয়ার করেছিলাম, ভাবলাম তোমার কেউ নাই, তাই আমার মমতা হলো, তোমার জন্য দুইটা পিঠা রেখেছি। ভিক্ষুক অনেক খুশি হয়ে পিঠা নিয়ে চলে গেল, কিন্তু ঐ মহিলার রাখাল অসুস্থ তাই আজ তার ছেলে মাঠে গরু নিয়ে গেছে। ভিক্ষুক ভিক্ষা করে যাওয়ার সময় ঐ মহিলার ছেলে এসে বললো, শুন আজ সারাদিন আমি কিছু খাইনি, তোমার পিঠা দুটি আমাকে দাও, তুমি তো, একটু পরে বাড়িতে গিয়ে ভাত খাবে। ভিক্ষুকের দয়া হলো, সে পিঠা দুটি ছেলেটিকে দিয়ে দিলো। দিয়ে ভিক্ষুক বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো। ছেলেটা পিঠা দুটি খেতে না খেতেই ছটফট করে মরে গেল। আশপাশের মানুষ দৌঁড়ে এসে অন্যান্য রাখালকে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে? ছেলেটা মরলো কেন ? সবাই বললো ঐ যে ভিক্ষুকটা যাচ্ছে , তার পিঠা খেয়ে এই অবস্থা !

লোকজন অবাক হয়ে গেল! কি হলো এটা ? দুই তিন জন মানুষ দৌঁড়ে গিয়ে ভিক্ষুকটাকে ধরে আনলো, বললো তোমার পিঠা খেয়ে ছেলেটা মরলো, তোমার পিঠায় কি ছিলো? সে বললো, আমি জানি না,তবে যে আমাকে পিঠাগুলো দিয়েছে, তাকে আমি চিনি। লোকজন মৃত ছেলেকে নিয়ে ঐ বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো। গিয়ে দেখলো বৃষদাতা ঐ মৃত ছেলেটার মা! লোকজন বলাবলি করতে লাগলো, ঘটনা কি? তুমি পিঠাতে বৃষ দিলে কেন? সে বললো, ভিক্ষুককে মারার জন্য আমি পিঠাতে বৃষ দিয়ে ছিলাম আর আমার ছেলে মরলো, আজ আমি বুঝলাম, ভিক্ষুকের কথা সত্য, আমি মন্দ করছি, তাই আমার ছেলে মরছে।এতে প্রমাণিত হলো – ভাল করলে ভাল আছে, মন্দ করলে যার যার কপালে আছে। তোমরা ভিক্ষুককে ছেড়ে দাও, সব দোষ আমার। আমার। আমার!!

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ- সিলেট ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ।