মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই নতুনভাবে প্রণয়ণ হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী

0
482
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাধ্যমিক স্তরের ১২টি পাঠ্যবই পরিবর্তন-পরিমার্জন করে নতুনভাবে প্রণয়ন করা হচ্ছে। এসব বিষয়ের পাঠ শিক্ষার্থীর কাছে সহজ ও বোধগম্য করতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে নতুন যেসব বিষয় এ বছর অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল, সেগুলোরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গঠিত কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান ও বিদ্যমান বিভিন্ন বিষয়ে যেমন বইয়ের আকার ছোট করা, কেন্দ্রীয় বা পাবলিক পরীক্ষায় বিষয়ের সংখ্যা কমিয়ে স্কুল পর্যায়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা, পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার, পরীক্ষার খাতায় নম্বর প্রদানে বৈষম্য কমানোসহ নানা বিষয়ে এ কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে যেসব সুপারিশ করতে যাচ্ছে তা আগামীতে প্রবর্তন করা হবে। এ লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষকদের মডেল উত্তরপত্র প্রদান বা ফলপ্রণয়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হবে।
এছাড়া শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গঠিত কমিটি পাঠ্যবই নিয়ে এ বছর যে সমালোচনা ও সরকার সমর্থক বাম রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যেসব দাবি উঠেছে, তারও পর্যালোচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করবে। সে সুপারিশের ভিত্তিতেই আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে সংস্কার ও পরিবর্তন করার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী বৈঠকে শিক্ষাবিদরদের আশ্বস্ত করেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাথে সরকার সমর্থক শিক্ষাবিদদের নিয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী রুদ্বদ্ধার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতার নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহঃ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ, শহীদ জায়া অধ্যক্ষ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ঢাকা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অতিরিক্ত সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৬ মে সিরডাপ মিলনায়তনে শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের মতবিনিময় করে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে কমিটির সদস্যদের নিয়েই আজকের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিকের যে ১২টি বই পরিবর্তন-পরিমার্জন করা হচ্ছে সেগুলো হলো, বাংলা সাহিত্য, ইংলিশ ফর টুডে, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, গণিত, উচ্চতর গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান, পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান এবং অর্থনীতি। এ বইগুলো যে ১২ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পর্যায়ের শিক্ষকদের দ্বারা পরিমার্জন করা হচ্ছে তা আজ প্রকাশ করা হয় এ বৈঠকের পর।
তারা হচ্ছেন, ইংলিশ ফর টুডে বইটি পরিবর্তন-পরিমার্জনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের বই নিয়ে কাজ করছেন। গণিত, উচ্চতর গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান, পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান বই ছয়টি পরিবর্তন-পরিমার্জনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কাফকোবাদ ও অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীজানুর রহমান হিসাব বিজ্ঞান ও অধ্যাপক এমএম আকাশ অর্থনীতি বই পরিমার্জনে কাজ করছেন। বাংলা সাহিত্য পরিমার্জনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী শিক্ষা বছর থেকে এসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন রূপে বই প্রণয়নের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে কিছু কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। কারিকুলাম যুগোপযোগী করতে ও এতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে এই উদ্যোগ। পরিবর্তন মানেই খারাপ নয়। খারাপ অবস্থা থেকে অপেক্ষাকৃত উন্নততর পর্যায়ে যেতেই পরিবর্তন।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে কারিকুলাম আধুনিকায়ন, পাঠ্যবইয়ের বোঝা বা সংখ্যা কমানো, বইয়ের আকার ছোট করা, কেন্দ্রীয় বা পাবলিক পরীক্ষায় বিষয়ের সংখ্যা কমিয়ে স্কুলপর্যায়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা, পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার, পরীক্ষার খাতায় নম্বর প্রদানে বৈষম্য কমানো অন্যতম।