মানবতাবিরোধী অপরাধের আরো ২৫ মামলা তদন্তাধীন

0
1165
blank

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আনা আরো ২৫ টি মামলার তদন্ত চলছে। ট্রাইব্যুনালের তদন্তসংস্থা সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের এখন ২৫টি মামলার তদন্ত চলছে। তবে এসব মামলার আসামিরা যেন তদন্তের কথা জেনে না যায় সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। অভিযুক্তরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য নাম প্রকাশে গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।

এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা বরবার প্রায় সাড়ে ছয়’শর মতো অভিযোগ জমা হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখিত মামলার তদন্ত করা হচ্ছে। ৩৬টি মামলায় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচারিক কার্যক্রম শেষে এ পর্যন্ত ২১টি মামলার রায় হয়েছে। বর্তমানে আরো ৪ মামলায় বিচার চলছে। একটি মামলায় নেত্রকোনার সাবেক দুই মুসলীম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও মো. ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের ২ মার্চ অভিযোগ গঠন করা হয়। ৫ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-গ্রহণ শুরু হয়। গত বছরের ১২ আগস্ট আতাউর রহমান ননী এবং ওবায়দুল হক তাহেরকে গ্রেফতার করা হয়।

একটি মামলায় তিন আসামি হবিগঞ্জ জেলার খাগাউড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহিবুর রহমান ওরফে বড়মিয়া, তার ছোটভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে গত ২৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
একটি মামলায় আসামি জামালপুরের আট রাজাকারের বিরুদ্ধে গত ২৬ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরুর আদেশ দেয়া হয়েছে।

১৮ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। একই মামলার আট আসামির মধ্যে দু’জন এডভোকেট শামসুল আলম এবং এস এম ইউসুফ আলী কারাগারে আছেন। পলাতক বাকি ছয়জন হলেন- আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা মো. আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. আব্দুল হান্নান, মো. আব্দুল বারী, মো. হারুন ও মো. আবুল কাসেম।

একটি মামলায় কিশোরগঞ্জের পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে গত ১২ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে গত ৪ নভেম্বর সাক্ষ্য-গ্রহণ শুরু হয়েছে। একই মামলায় পাঁচ আসামি হচ্ছেন জেলার করিমগঞ্জের দুই সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও কিশোরগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী মো. শামসুদ্দিন আহমেদ এবং কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম।

এছাড়াও মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় আটক যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা সাখাওয়াত হোসেনসহ ৯ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর সাখাওয়াত হোসেনসহ ৯ রাজাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের বিরুদ্ধে গত ২৬ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।

সাখাওয়াত হোসেন ছাড়া অন্য আট আসামি হলেন- মো. বিল্লাল হোসেন, মো. ইব্রাহিম হোসেন, মুজিবর রহমান, মো. আব্দুল আজিজ সরদার, আজিম সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম, মো. লুৎফর মোড়ল এবং মো. আব্দুল খালেক মোড়ল। সাখাওয়াত হোসেন, বিল্লাল হোসেন ও মো. লুৎফর মোড়ল কারাগারে ।বাকি ছয়জন পলাতক।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেত্বত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রম চলছে। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।

অপরদিকে সুপ্রিমকোর্ট সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আনা আরো ৯টি আপিল মামলা সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আপিলে শুনানির অপেক্ষায় থাকা মামলার আসামিরা হলেন- জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী, এটিএম আজহারুল ইসলাম ও আব্দুস সুবহান, আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার ও সাবেক এমপি পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান, বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার ও খান আকরাম হোসেন।

ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদন্ড রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর আনা আপিলের শুনানি শেষে আগামী ৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে। এটি আপিলে ষষ্ঠ মামলা। এর আগে আপিলে চূড়ান্ত পাঁচটি রায়ের পর চারটিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

আপিলের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়নি। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে সাঈদীর মৃত্যুদন্ড চেয়ে রিভিউ দায়ের করা হবে।

সূত্র: বাসস