মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা

0
1127
blank
blank

ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী: যেকোনো জাতির জীবনে স্বাধীনতা সংগ্রাম সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও গৌরবময় ঘটনা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা বহু জাতি রাষ্ট্রের উত্থান দেখতে পাই। জাতীয়তাবাদ এক প্রচণ্ড শক্তি হিসেবে এর পেছনে কাজ করে। বস্তুতপক্ষে প্রত্যেক জাতির রয়েছে তার স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস। বিংশ শতাব্দীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকে। বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিক শাসন এবং শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বাধীনতা সংগ্রাম সংঘটিত হয়। জাতীয়তাবাদী শক্তিতে উদ্বুদ্ধ মুক্তিপাগল মানুষের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে, ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের সফলতা কিংবা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে ভিয়েতনামের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের বিরাট সাফল্য। বিংশ শতাব্দীতে এশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে আরো অনেক জাতি-রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয় এবং আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি, প্রতিষ্ঠা করি প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। এর ছিল এক সুদীর্ঘ প্রস্তুতিকাল। এর পটভূমি ছিল রক্তাক্ত ও সংঘর্ষময়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যেই যাত্রা শুরু করে; কিন্তু যাত্রার শুরুতেই সদ্য প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হোঁচট খায়। ১৯৭৪ সালে বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়। দেশে প্রবর্তিত হয় একদলীয় শাসন; অনেক সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়। একদলীয় শাসন গণতান্ত্রিক পথচলাকে রুদ্ধ করে দেয়। যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য বাঙালির এত রক্তদান, এত ত্যাগ তিতিক্ষা; সে বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র অনুপস্থিত।
সত্যিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার হবে জনগণের, সরকার গঠিত হবে জনগণের দ্বারা এবং সরকার হবে জনগণের কল্যাণের জন্য। গণতন্ত্রের এই মর্মবাণী সমাদৃত হয়েছে যুগে যুগে দেশে দেশে। বস্তুত এটিই পশ্চিমা গণতন্ত্রের আদর্শরূপ। আধুনিক রাষ্ট্রতত্ত্বে কিংবা সমাজতত্ত্বে গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের এই ধারণাকেই উপস্থাপন করা হয়। পশ্চিমা গণতন্ত্রের আদলেই বর্তমান সময়ে অনুন্নত প্রাচ্যসমাজে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলছে; আর তা চলছে কতক বাস্তব কারণেই। গণতন্ত্রের চর্চার শত বছরের অভিজ্ঞতা-পশ্চিমা দেশগুলোয় একে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। গণতন্ত্র শাব্দিক অর্থে রাষ্ট্রনীতি বা রাজনীতির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তবে এ শুধু রাজনীতির বিষয়ই নয়। সমাজ ও সমাজ কাঠামোর মৌল উপাদানগুলোর অন্যতম হচ্ছে রাজনীতি-রাজনীতির মূল মর্মটি হচ্ছে সামাজিক ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য স্থাপন করা। অর্থাৎ ব্যক্তিকে সমাজের অংশ হিসেবে তার যথাযথ ভূমিকা পালনে সুযোগ প্রদান এবং তার আন্তরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। তাই বলা হয় ‘গণতন্ত্র’ হচ্ছে জনগণের হাতিয়ার- এ হচ্ছে ব্যক্তির সামাজিক অবস্থিতির স্বীকৃতি, তার নাগরিক অধিকারের সুযোগ। গণতন্ত্র শুধু রাষ্ট্রনীতি কিংবা রাজনীতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। এটি সমাজের সবপর্যায়ে, সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর সাথে জড়িয়ে আছে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়- তা হচ্ছে পিপল্স পার্টিসিপেশন ও ইমপাওয়ারম্যান্ট অর্থাৎ জনগণের অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের বিষয় দুটো সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম পূর্বশর্ত। যে বৃহত্তর সমাজ বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্যক্তি- তার মৌল যেকোনো সিদ্ধান্তে ব্যক্তির অংশগ্রহণের অত্যাবশ্যকীয়তা ব্যক্তিকেই অনুধাবন করতে হবে। আর তা সম্ভব ব্যক্তিকে তার ‘বিরাট ক্ষমতা’ সম্পর্কে সচেতন করে এবং বিশ্বস্ত করে তোলার মাধ্যমে অর্থাৎ ব্যক্তির মাঝে চেতনাবোধ জাগ্রত করার ক্রমাগত উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে। আর এর অন্যতম উপায় হচ্ছে জনগণকে শিক্ষিত করে তোলা। একজন অশিক্ষিত লোকের চেয়ে একজন শিক্ষিত লোককে ঠকানো অনেক কঠিন। কেননা শিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রই তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন, সামাজিক ও নাগরিক অধিকারের আইনগত দিকগুলো তার পক্ষেই জানা সম্ভব।
গণতন্ত্র চর্চার প্রাথমিক ক্ষেত্রটি হচ্ছে পরিবার। পরিবার থেকে সমাজ ও সম্প্রদায়ের মাধ্যমে ক্রমেই এর ব্যাপ্তি ঘটে। রাষ্ট্র এর সামগ্রিক রূপ মাত্র। কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রেও ব্যক্তি-মানুষ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
ক্ষুদ্র পরিসরে এর চর্চা যথাযথ না হলে বৃহত্তর সমাজে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং ডেকে আনে চরম বিপর্যয়। তাই রাজনৈতিক সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে বলা হয়- অনুন্নত দেশের সঙ্কট কখনোই অর্থনৈতিক নয় বরং তা অনেকাংশে রাজনৈতিক, যাকে বলা হয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নীতিমালা প্রয়োগের সঙ্কট। এ সঙ্কট সামগ্রিকভাবে গোটা রাষ্ট্রে এবং ক্ষুদ্র অর্থে গোষ্ঠী, দল ও গোত্রের মধ্যে গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতার অনুপস্থিতি ও চর্চার অভাবকেই নির্দেশ করে। অনেক অনুন্নত দেশেই গণতন্ত্রের চর্চা নেই; এর চর্চা নেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে; নেই সমাজের মৌল সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে যেহেতু গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়নি, তাই এখানে বারবার গণতন্ত্র রূপ নেয় স্বৈরতন্ত্রে। গণতন্ত্রের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা এখানে দীর্ঘ দিন ধরে ছিল না বললেই চলে। ফলে সুযোগ নিয়েছে স্বৈরাচার ও স্বৈরতন্ত্র।
বিশেষ করে আশির দশকে এরশাদের শাসনামলে জনগণ হয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিছিন্ন। এ সময় ক্ষমতার অনেক বাইরে চলে গেছে বিরাট জনগোষ্ঠী। প্রতিষ্ঠা পেয়েছে গুটিকতক ‘গণের তন্ত্র’। তারা ‘জনগণ’ নয় বরং তারা ‘কতিপয়’। তাই কেউ কেউ একে চিহ্নিত করেছে ‘কতিপয়তন্ত্র’ বলে, যার প্রকৃত অর্থ স্বৈরতন্ত্র। আসলে গণতন্ত্রের রূপটি চেনা এবং এর ফল আস্বাদনের কোনো সুযোগ আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাম্প্রতিককাল পায়নি বললেই চলে। বর্তমানেও এ ধারা অব্যাহত আছে। শাসকগোষ্ঠী স্বৈরাচারী কায়দায় রাষ্ট্র পরিচালনা করছে; গণতন্ত্রকে পাঠিয়েছে নির্বাসনে।
গণতন্ত্রের সাথে রাজনীতি বিষয়টি আমাদের দেশে এত বেশি সম্পর্কিত যে, রাষ্ট্রক্ষমতার প্রশ্নেই ‘গণতন্ত্র’ কথাটি বেশি উচ্চারিত হয়; কিন্তু বাস্তবে এ শুধু রাষ্ট্র পরিচালনা বা রাষ্ট্রক্ষমতারই বিষয় নয়। বরং এটি একটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। প্রতিদিন চিন্তা ও কর্মে এর প্রভাব প্রতিফলিত হয়। আমাদের দেশে ব্যক্তি গৌণ, তার চেয়ে গৌণ রাজনৈতিক দলবহির্ভূত ব্যক্তি। ব্যক্তি ও দল রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন। দল ও রাষ্ট্র নিজের প্রয়োজনে ব্যক্তিকে ব্যবহার করে মাত্র। তার অধিকারের যথাযথ মূল্য দেয় না। ব্যক্তির সমন্বয়ে যে দল, সে দলে প্রতিটি ব্যক্তির মতামতের মূল্য নেই বলে এবং দল পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে, দল ও রাষ্ট্রের কোনো নীতিমালাই ব্যাপক জনস্বার্থে প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়নি। কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির স্বার্থেই পরিচালিত হয়েছে দল ও রাষ্ট্র। মার্কিন সমাজতত্ত্ববিদ সেমুর লিপসেটের মতে, গণতন্ত্র হবে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যা সরকার ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত পরিবর্তনের সাংবিধানিক সুযোগ দান করে। এটা এমন একটি সামাজিক যন্ত্র, যা রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে একাংশকে বেছে নিয়ে, প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করার সুযোগ জনসংখ্যার সম্ভাব্য সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষকে দিয়ে থাকে। অর্থাৎ এ থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, গণতন্ত্র বিষয়টি চর্চার ব্যাপার। তত্ত্বগতভাবে জনগণের অংশগ্রহণ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ের স্বীকৃত রূপটিই হচ্ছে গণতন্ত্র। এটা বলা যতটা সহজ, বাস্তবায়ন তার চেয়ে অনেক কঠিন। আমাদের দেশে স্বৈরাচারী সরকারের শাসনামলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। এক বিরাট গণ-অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চার ক্ষেত্রে তেমন কোনো তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন এখনো লক্ষ করা যায়নি। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের যৌক্তিক ও সচেতন অংশগ্রহণ এখনো নিশ্চিত হয়নি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ এ ক্ষেত্রে শুভ সূচনা করেছে। এটি ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন ঘটনা এবং এই নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যাপক জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছে এবং ১৯৯১ সালে প্রথম একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার শুভ সূচনা হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো জনগণ অত্যন্ত স্বাভাবিক অনুষ্ঠান হিসেবেই নির্বাচনকে মনে করে থাকে। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে যে উচ্চ ক্ষমতাশালী পরিষদ গঠিত হয়, তার সব কর্মকাণ্ডের জন্য তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে এবং জবাবদিহি করতে হয়। ফলে জনগণ নিজেদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী মনে করে। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশে এর শুভ সূচনা হয়েছিল।
এটাকে স্থায়ী রূপ দেয়ার জন্য বিরোধী ও সরকারি দল উভয়কে সহনশীল হয়ে সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করতে হবে। দল ও ক্ষমতার মধ্যে যৌক্তিক সম্পর্ক স্থাপন করে ক্ষমতা বদলের স্বাভাবিকতাকে যৌক্তিকভাবে মেনে নিয়ে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যাদের জন্য দেশ, যাদের উন্নতির জন্য রাষ্ট্র কাজ করবে, যাদের উন্নয়নের জন্য দলগুলো কাজ করবে, তাদের বাইরে রেখে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের যে প্রক্রিয়া আশির দশকে এবং বর্তমানে চলছে তার পথ ক্রমেই বন্ধ করে দিতে হবে।
সমাজের সবপর্যায়ে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। দেশের জন্য, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণের জন্যে, ক্ষুদ্র, দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে হবে। দেশের মৌলিক সঙ্কট চিহ্নিতকরণ এবং এর সমাধান ও বাস্তবায়নে সব দলের জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণ সচেতন হলে সরকারের ও বিরোধী দলের কর্মকাণ্ডের যথাযথ মূল্যায়ন জনগণ যথাসময়েই করবে। ২০১৩ সালের পৌর করপোরেশনগুলোর নির্বাচনের ফলাফলে এর যথেষ্ট প্রমাণও মেলে। জনগণকে যথাযথভাবে শিক্ষিত করে তোলা গেলে এবং নির্বাচনে ভোট প্রদানের সব স্বাধীনতা সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে জনগণ তার কাক্সিক্ষত প্রার্থী ও দলকে তার কর্মের জন্য পুরস্কার প্রদানে বিন্দুমাত্র পিছপা হবে না।
উল্লেখ্য, গণতন্ত্রের একটি মাত্র প্রতীক হচ্ছে সংসদ। আরো রয়েছে অনেক প্রতীক, যেমন- আইনের যথাযথ প্রয়োগ, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচিত স্থানীয় সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণ ইত্যাদি। এগুলোই হচ্ছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের যথাযথ চর্চার প্রতিফলন। যে সমাজে বা রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে, সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়, সব নাগরিক তার অধিকার প্রতিষ্ঠার যথাযথ সুযোগ পায় এবং স্থানীয় ও উচ্চপর্যায়ের সব সংগঠনে তার মতামতের ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। এ ধরনের রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের যথাযথ চর্চা হচ্ছে বলে ধরে নেয়া যায়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের শাসন, সংখ্যালঘিষ্ঠের অধিকার, সবপর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের অংশগ্রহণ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের ভূমিকা সাংবিধানিক নীতিমালার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়।
আজকের স্বাধীনতা দিবসে হারানো গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার ও সুসংহত করার শপথ নিতে হবে। তা নাহলে ৪৬ বছর আগে স্বাধীনতার জন্য আমাদের যে আত্মত্যাগ তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। শুধু গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা কায়েমের মধ্যেই জনগণের কল্যাণ নিহিত।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানী