নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা: গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, ব্লগার রাজীব হায়দারের ঘনিষ্ঠ সহচর বামপন্থী মতাদর্শ অনুসারী এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বিরোধী ব্যক্তিত্ব রাকিবুল ইসলাম খান জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মৌলবাদী গোষ্ঠী তাকে হত্যার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে । নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিলেও কোথাও নিরাপত্তা পায়নি। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী তার পিছনে ধাওয়া করছে । ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, সিরাজগঞ্জ জেলার শাজাদপুর থানার খুকনী নতুন পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম খান। তার পিতা বাহাউদ্দিন খান ও মাথা রিনা খাতুন। তারা গ্রামেই বসবাস করে। রাকিবুল ইসলাম মুক্তমনা ও মুক্তচিন্তা ধারার লোক। এক সময় এলাকার ধর্মান্ধ মানুষ তাকে নানাভাবে হয়রানি করতে শুরু করে,
কারণ রাকিবুল ধর্মের নামে ভন্ডামি- মাজার পূজা ইত্যাদির বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। তিনি এসব গোঁড়ামির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালালে ধর্মান্ধরা ক্ষেপে উঠে। মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে মাদ্রাসার শিক্ষক- শিক্ষার্থী সহ অনেকেই তার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করে। রাকিবুল কে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী নাস্তিক বলে প্রচার করতে থাকে। তাকে প্রাণে মারার হুমকি প্রদর্শন করে । বাধ্য হয়ে রাকিবুল ঢাকায় চলে আসে। ২০১০ ইংরেজি ঢাকা কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হন় । ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেতা যুদ্ধ অপরাধে অভিযুক্ত আব্দুল কাদের মোল্লা, ১৯৭১ ইংরেজি সালে পাক সেনাদের সহায়তাকারী যুদ্ধ অপরাধে অভিযুক্ত মোঃ কামরুজ্জামান, মতিউর রহমান নিজামী , আলী আহসান মুজাহিদ ও মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে রাকিবুল ইসলাম ।
সেখানে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে নিহত ব্লগার রাজীব হায়দার, শাহরিয়ার কবির সহ অনেকের সাথে। এরপর বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নে সে যোগদান করে । এখানেও রাকিবুল জঙ্গিবাদীদের টার্গেটে পরিণত হন । ২০১৩ ইংরেজি সালে সে নিজ জেলা সিরাজগঞ্জে চলে যায়। সেখানে জেলা ভিত্তিক গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠা ও সমাবেশ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন -ছাত্রলীগ ও হেফাজতে ইসলামের সাথে আধিপত্য বিস্তার-ধর্মীয় মত নিয়ে বিরোধ ও সংঘর্ষ বাধে । তাকে নিপীড়ন ও প্রাণে মারার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে তার পরিবার তাকে বাধ্য হয়ে দেশের বাইরে পাঠায় । ২০১৫ ইংরেজি সালের শেষের দিকে তার পিতার অসুখ জনিত কারণে রাকিবুল দেশে আসলে তাকে আবারও সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত হতে হয় ।
রাকিবুল কে নাস্তিক-মুরতাদ ও ইহুদী-খ্রিষ্টানদের দালাল আখ্যা দিয়ে এলাকায় পোস্টার করা হয় । রাকিবুলের দেশে প্রত্যাবর্তনের খবর জানতে পেরে হেফাজতে ইসলাম ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার বাড়িতে গত ৬ জানুয়ারি ২০১৬ ইং সালে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলা থেকে কোন রকম পালিয়ে জীবন রক্ষা করে রাকিবুল। উগ্র মৌলবাদীরা তার বসত ঘরে তল্লাশি ও ভাঙচুর চালায় । তার ব্যবহৃত আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং তার ঘরে থাকা কাল মার্কস-লেনিন ও ডেল কার্নেগীর বই গুলো সেলফ থেকে নিয়ে যায় । রাকিবুল প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোন প্রতিকার পায়নি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের চাপে। প্রকাশ্যে এমন হামলার পর এলাকায় আতঙ্ক ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি ২০১৬ হামলার ঘটনার ও ৭ জানুয়ারি ২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জে পোষ্ট অফিস থেকে রাকিবুলের নামে হত্যার হুমকি প্রদর্শন করে জঙ্গি সংগঠনের লোক তাকে চূড়ান্তভাবে হত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে চিঠিতে জানায়।
এ ব্যাপারে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে এই প্রতিবেদক শাহজাদপুর থানার নতুন খুকনি পাড়া গ্রামে গিয়ে মোঃ রাকিবুল ইসলাম এর পিতা বাহাউদ্দিন খান ও মাতা রিনা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা গত ৬ জানুয়ারি ২০১৬ তে হামলার ঘটনা ও ৭ জানুয়ারি ২০১৬ ইংরেজিতে প্রাপ্ত হত্যার হুমকি দেয়া চিঠি প্রাপ্তির বিষয় স্বীকার করেন । তারা জানান , রাকিবুল মাজার পূজা, মাজারে টাকা দান, মিলাদ পড়ানো , একটি পুরুষের চারটি বিবাহ এবং বউকে তালাকের পর পুনরায় সংসারে ফিরতে হলে অন্য লোকের কাছে দিয়ে হালাল করার বিষয়ে সমালোচনা করলে তাকে নাস্তিক, ইসলামবিদ্বেষী আখ্যা দিয়ে প্রাণে মারতে তার উপর হামলা করে় ।
ডাকযোগে চিঠি দিয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলে়। তারা বলেন, মাতৃভূমি বাংলাদেশের নাগরিক থাকা সত্ত্বেও কেন সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে-? কেন এই ব্যাপারে মানবাধিকার সংগঠনগুলো নীরব ভূমিকা পালন করছে? সত্য কথা ও মুক্তচিন্তার প্রকাশ করলে যে দেশে এমন হয় সে দেশ ছেড়ে যাওয়াই উত্তম বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে । তাদের আশঙ্কা তাদের ছেলে রাকিবুল দেশে ফিরলে মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীরা তাকে হত্যা করে ফেলতে পারে।
প্রতিবেদক স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের একজন নেতাকে রাকিবুল ইসলাম খানের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, রাকিবুল -ইসলাম পরিপন্থী কাজ করে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে উল্লেখিত প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলে এলাকায় নাস্তিক ও মুরতাদ হিসেবে পরিচিত হয়েছে । তার কর্মকান্ডে মনে হয়েছে সেই ইহুদী-খ্রিষ্টানদের দালাল । তাকে এলাকাছাড়া করেছে তৌহিদী জনতা । নয়তো তার পরিনিতি অত্যন্ত করুণ হত। সে কখনো এলাকায় আসলে তার বিরুদ্ধে চরম আঘাত হানা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.