যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে গুপ্তহত্যা করা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

0
431
blank

স্টাফ রিপোর্টার: রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে খালেদা জিয়া এখন বিদেশে গিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে তিনি বিদেশি, লেখক, প্রকাশক, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর গুপ্তহত্যা চালাচ্ছেন। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এমন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন তিনি। সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে সেই জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯৩ দিন নিজেই নিজের অফিস—সেই বিএনপি অফিসে বসে থেকে বললেন, সরকার উৎখাত না করে নাকি ঘরে ফিরবেন না। তার আন্দোলন কী? মানুষ পুড়িয়ে মারা, মানুষ খুন করা, মানুষ হত্যা করা? ছোট্ট শিশু, দুধের শিশু, সেও রেহাই পায়নি। কলেজের ছাত্রী, সেও রেহাই পাইনি। বাসের ড্রাইভার, হেলপার, সাধারণ মানুষ—তারা রেহাই পায়নি। শেখ হাসিনা বলেন, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করার মতো বীভৎস ঘটনা সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘটিয়েছে। এরপর ঘটালেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। যখন বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার এ মানুষ খুন করার রাজনীতি প্রতিহত করল, তখন কিন্তু তিনি অবরোধ প্রত্যাহার করেননি, তার অবরোধ চলছেই। কিন্তু মানুষ সাড়া দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে মানুষ হত্যা করে যখন পারলেন না, তখন তিনি নিজেই নাকে খত দিয়ে বের হলেন, মামলায় কোর্টে হাজির হলেন। নিজের ঘরে ফিরে গেলেন। রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে এরপর তিনি গেছেন এখন বিদেশে। আর বিদেশে গিয়ে এখন ষড়যন্ত্র কি, এ দেশে বিদেশিদের হত্যা করতে হবে, তাহলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এখন তিনি গুপ্তহত্যায় নেমেছেন। এ গুপ্ত হত্যায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, এমনকি লেখক, প্রকাশক, বিদেশি সবার ওপর গুপ্তহত্যা। খুনিদের পরিচয় কী? যারা ধরা পড়ছে, দেখা যাচ্ছে তারা ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির অথবা বিএনপি-ছাত্রদল করত। অর্থাৎ, দেশে না পেরে এখন বিদেশে বসে দেশে গুপ্তহত্যা শুরু করেছেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে। বিদেশী নাগরিক, ব্লগার ও প্রকাশক হত্যাকারীদের ধরতে দেশবাসীর সহাযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা গুপ্তহত্যা করছে তাদের লিংক কোথায়? মুরুব্বি কোথায়? বড় ভাই কোথায়? সব খুঁজে বের করে শাস্তি দেবই দেব। এজন্য আমি শুধু বাংলাদেশের মানুষের সহযোগিতা চাই।’ ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এসব বলেন।

হত্যাকাণ্ডে বিএনপি-জামায়াতের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) গেলেন বিদেশে। সেখানে গিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র! ষড়যন্ত্র কী-আওয়ামী লীগ নেতা, লেখক, প্রকাশক ও বিদেশিদের গুপ্তহত্যা। যখনই এসব ঘটনার তদন্ত আমরা করছি, দেখি এসব হত্যাকাণ্ডে বিএনপি, শিবির অথবা ছাত্রদল জড়িত। এরা ছাত্রজীবনে ছাত্রদল অথবা শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করে তাদের রক্ষা করতেই দেশে গুপ্তহত্যা হচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। তাদের ফাঁসিও হচ্ছে। এসব গুপ্তহত্যা আর খুনের কারণ হলো যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা। কারণ, এদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল জিয়া ও তার স্ত্রী। তারাতো স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়। তারা চায় দেশের মানুষ দরিদ্র থাকুক, শিক্ষা-চিকিৎসা না পাক। দেশের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে পার্শ্ববর্তী একটি দেশ ও খালেদা জিয়ার জড়িত থাকার ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বহু চক্রান্ত এখনো করে যাচ্ছেন। পাক হানাদারদের প্রতি উনার (খালেদা জিয়া) যে দরদ, প্রেম, প্রীতি-ভালবাসা এটা উনি এখনো ভুলতে পারেন না। তার পেয়ারে পাকিস্তানের কারণেই এ দেশের মানুষের এতো কষ্ট। এসব ঘটনায় দেশের উন্নয়নকে স্তিমিত করা যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, গুপ্তহত্যা-খুন যাই করুক না কেন, আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা দাবায়ে রাখতে পারবে না।

‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের আমি সাবধান করতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনচেতা। কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করে না। দেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে তারা এ দেশের মানুষ। কোনো কোনো মহল প্রচেষ্টা চালাচ্ছে প্রমাণ করতে যে, দেশে আইএস আছে। তারা বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়। বাংলাদেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসীর স্থান হবে না। সন্ত্রাসী-জঙ্গি যে দলেরই হোক আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা যা বলি তা করি। বাংলাদেশের জনগণের ক্ষতি করার জন্য তাদের শাস্তি পেতেই হবে। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশের স্বাধীনতা কেউ থামাতে পারবে না। বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবই। চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা শান্তি চান, উন্নতি চান, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেন আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সহযোগিতা করুন। আমি বিশ্বাস করি এসব ষড়যন্ত্র আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আমরা করতে দেব না। তিনি বলেন, আমি শুধু দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহবান জানাব। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিরাই পঁচাত্তরে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তারাই জেলখানায় জাতীয় চারনেতাকে হত্যা করেছে। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ অন্যান্য হামলা একই সূত্রে গাঁথা। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, কারা এই অ্যামনেস্টি! একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে যারা সিভিল ওয়ার বলেছিল। তাদের কথায় বাংলাদেশ উঠবেও না, বসবেও না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, অ্যামনেস্টি মানবতার কথা বলে ভণ্ডমি করছে। খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মানুষ হত্যা করে কিছুই করতে পারবেন না। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, দেশে কোনো আইএস নেই। খালেদা জিয়াই এখানকার আইএস। দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ক্ষমতায় থাকলে আমরা অলস হয়ে পড়ি। প্রধানমন্ত্রী দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনা করছেন। ষড়যন্ত্র থেমে নেই। আমাদের সবাইকে সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। এখনো অনেক কাজ বাকি। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীর কবীর নানক, এম এ আজিজ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, সাইফুর রহমান সোহাগ, এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ।