রমজানে কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্যমন্ত্রী

0
486
blank
blank

ঢাকা: রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ে কারসাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়লেও পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় রমজানে তা স্থিতিশীল হবে। আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ব্যবসায়ীদের সাথে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী একথা বলেন।
এসময় মন্ত্রী ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রয়েছে। সুতরাং রমজানে কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। তারপরও যদি কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো হয় তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ সময় উপস্থিত ব্যবসায়ীরাও মন্ত্রীর কঠোর ব্যবস্থায় যাওয়ার পক্ষে একমত পোষণ করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া তথ্য অনুসারে মুল্যস্ফীতি পাঁচ দশমিক ৩১ শতাংশ, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পাশাপাশি দেশের মাথাপিছু আয় ১৪৬৫ ডলার, যার বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। এ সব কারণে দু-একটি পণ্যের সামান্য মূল্য বৃদ্ধি পেলেও এতে জনজীবনে খুব বেশি প্রভাব পড়ছে না। চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্যের মজুদ আছে। সুতরাং দ্রব্যমূল্য বাড়ার সম্ভবনা নাই।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের তৈরি করা একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন মন্ত্রী। এই প্রতিবেদনে চাল, গম, ভোজ্য তেল, চিনি, লবণ, ডাল, ছোলা, খেজুর, পেঁয়াজ, রসুন আদা, হলুদ ও বিবিধ মসলার বাজারমূল্য বিশ্লেষণ করা হয়।
রমজানে ভোজ্য তেলের দাম ঠিক রাখতে দুটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম।
তিনি বলেন, সরবরাহ লাইন ঠিক থাকলে দাম বাড়ে না। আমাদের চাহিদা কত, কি পরিমাণ আছে- সেটা তারা ভালো বলতে পারবেন। চাহিদা অনুসারে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলে সমস্যা হবে না। খুচরা ও পাইকারি বাজারের মধ্যে পার্থক্য যেন খুব বেশি না হয়। এ বিষয়ে নজরদারি করার প্রয়োজন রয়েছে। এখানে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আব্দুল কাইয়ূম বলেন, ভোজ্য তেল ও চিনির সরবরাহ লাইন ঠিক আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কোনো প্রবণতা নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে চিনির দাম বাড়ার বিষয়ে সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় এটা হয়েছে। ডলারের দাম ৮০ টাকায় ফেরত এলে দ্রব্যমূল্যে কোনো প্রভা পড়বে না।
এ সময় তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কথা হয়েছে। ডলারের দাম আরো কমবে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন ‘প্রতিটি মালই চাহিদার চেয়ে বেশি আছে। তাহলে দাম বাড়বে কিভাবে?’
কিছু ব্যবসায়ীর বেশি দামে ছোলা কেনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের দাম নির্ধারণ করে দিতে চাই না। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সেটা সম্ভবও নয়। তবে আমার মনে হয়, বাজারে কেউ বেশি দামে ছোলা বিক্রি করতে পারবে না। কারণ ছোলারও অতিরিক্ত মজুদ আছে।’
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, খুচরা বাজারের মূল্য যেন পাইকারি বাজারের মূল্য বিবেচনায় যৌক্তিক থাকে। খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়ালে সেটা চাপিয়ে দেয় পাইকারি ব্যবসায়ীদের উপর। বাজারে মনিটরিং দরকার। খুচরা ব্যবসায়ীরা যেন তাদের সাথে পাকা রশিদ রাখে, যাতে মনিটরিংয়ের সময় সেটা দেখা যায়।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক ক্যাপ্টেন নুরুল হক পণ্য পরিবহনে রাস্তায় চাঁদাবাজির বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, রাস্তাঘাটে অনেক সময় চাঁদাবাজি হয়। অনেকক্ষেত্রে আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এতে বাড়াবাড়ি করেন। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট ভালো না। এগুলো ঠিক করতে হবে।
জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের প্রতিনিধি উপ-মহাপরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, রমজানে সাধারণ সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি ফোর্স মোতায়েন করা হয়। আমাদের রিজার্ভ ফোর্স কাজ করে। রমজানে অতীতে কোনো সমস্যা হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহনের ক্ষেত্রে গাড়ি অন্য কারণেও আটকানো হয় না। ছেড়ে দেয়া হয়। আমাদের বাহিনীর কেউ নিয়ম বহির্ভূত কাজ করলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ রকম নির্দেশনা সদর দফতর থেকে দেয়া আছে।
চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, হাওরে ধানের ক্ষতি হওয়ার অজুহাতে চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা চালের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিরসনে চেষ্টা করছে সরকার। হাওরের ক্ষতির প্রভাব চালের বাজারে পড়ার কোনো কারণ নেই। কারণ ক্ষতির পরেও প্রয়োজনের তুলনায় চাল বেশি থাকবে।