রাজকোষ চুরি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

0
597
blank

রাজকোষ চুরির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করেছে ফিলিপাইনের সেই রিজাল কর্মাশিয়াল ব্যাংক (আরসিবিসি)। তারা বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এই রাজকোষ চুরিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। ব্যাংকের নজরদারিকারী কর্তৃপক্ষ (মনিটারি অথরিটি) তাদের অবহেলাকে (নেগলিজেন্স) ধামাচাপা দেয়ার মাধ্যমে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল ব্যাংক যেন বলির পাঁঠা না হয়। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করতে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভের প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক আহ্বান জানিয়েছে এমন এক রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ মন্তব্য করেছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এতে বলা হয়, শনিবার এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলাভিত্তিক ওই ব্যাংকটিকে (আরসিবিসি) সমূলে উৎপাটন করতে চান তিনি। এ ছাড়া রয়টার্স ওই মন্তব্যের পর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গে যৌথভাবে আরসিবিসির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে চাইছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর প্রকাশিত হয়। মঙ্গলবার এর জবাবে একটি বিবৃতি দিয়েছেন আরসিবিসির আইন বিভাগের প্রধান জর্জ ডেলা কস্তা। তিনি বলেছেন, আইনগতভাবে যতটুকু দরকার তার সবটুকু ফিলিপাইনের সিনেট ও এর রেগুলেটর বা নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত ব্যাংকো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপাইন-এর কাছে প্রকাশ করেছে আরসিবিসি। পক্ষান্তরে বি বি (বাংলাদেশ ব্যাংক) যতদূর পারে তার সবটাই গোপন করেছে। সত্য প্রকাশে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে তারা। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে চুরি করে হ্যাকাররা। এতে চুরি করা অর্থের কিছুটা পাঠানো হয় শ্রীল্কংার একটি ব্যাংকে। কিন্তু একটি নামের বানান ভুল লেখায় সেই টাকা রক্ষা পায়। কিন্তু কমপক্ষে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাঠানো হয় ফিলিপাইনে। সেখানকার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের ম্যানিলাভিত্তিক একটি শাখায় পাঠানোর পর ওই টাকা নগদায়ন হয়ে চলে যায় বিভিন্ন একাউন্টে। সেখান থেকে ক্যাসিনো হয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। এরপর প্রায় দু’বছর কেটে গেছে। কিন্তু এর জন্য কে দায়ী সে বিষয়ে একটি শব্দও জানা যায় নি। অন্যদিকে ম্যানিলা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্ধার করতে পেরেছে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর বেশির ভাগই উদ্ধার করা হয়েছে ম্যানিলার এক জাঙ্কেট অপারেটরের কাছ থেকে। এ নিয়ে ভিতরে ভিতরে অনেক কথা বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের সর্বশেষ মন্তব্যের জবাবে আরসিবিসির জর্জ ডেলা কস্তা তার বিবৃতিতে বলেছেন, এই রাজকোষ চুরিতে সুনির্দিষ্টভাবে আংশিকভাবে দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা দেখাতে তাদের অস্বীকৃতি আছে। এটা ঘটনাকে অব্যাহতভাবে ধামাচাপা দেয়া। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে যে প্রচেষ্টা রয়েছে তার ওপর একটি অহিতকর প্রচেষ্টা। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার স্পষ্ট শিকার আরসিবিসি। উল্লেখ্য, চুরি করা অর্থের স্থানান্তর ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য গত বছর ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরসিবিসিকে রেকর্ড ১০০ কোটি পেসো ( বা ২ কোটি ডলার) জরিমানা করে। জর্জ ডেলা কস্তা বলেন, এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে এ কাজে জড়িত এমন একজন ব্যক্তিকেও সনাক্ত করা হয় নি। আর আদালতে দণ্ডিত হওয়া তো আরো পরের কথা।