বিশেষ প্রতিবেদকঃ তাহরিমা অাক্তার রুমি। ২০১৮ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক শাখায় জগন্নাথপুর উপজেলার শাহজালাল মহাবিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.৭৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। জিপিএ ফাইভের চেষ্টা করেও না পাওয়ার তাঁকে পীড়া দেয়। সে স্বপ্ন দেখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোন ভাবে পড়তেই হবে। গ্রামের মেয়ে। সামনে বাঁধার পাহাড়। শহরে যেতে হবে। কে নিয়ে যাবে? কোথায় থাকবে? খরচ কোথা থেকে অাসবে? বাবা একা চায়ের দোকান চালিয়ে ৭ সদস্যেরবসংসার চালান। ছোট ভাই সাদিকুর রহমান সৌরভ কলেজে বিজ্ঞান শাখায় দ্বাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। ছোট বোন সানজিদা অাক্তার মুন্নি ২০১৯ সালের এসএস সি পরীক্ষার্থী। পরিবারের জমানো টাকা যা ছিল বড় বোন তাছলিমা অাক্তার রুবির বিয়েতে শেষ হয়েছে। তবু রুমির স্বপ্ন কি থেমে যাবে? চাচা মিজানুর রহমান মিজান ভাতিজির স্বপ্ন পূরণে প্রাথমিক ভাবে পাশে দাঁড়ান। শহরে ভাল কোচিং সেন্টারে ভর্তি করান। অাত্মীয়ের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেন।
জীবনের প্রথম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় রুমি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিবে। চাচা সাথে। ভয়। শংকা। ফলাফল প্রকাশ হলো। ওয়েটিং লিস্টে।
মন খারাপ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অাবেদন করা হয়নি। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে।
সামনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা।
একমাত্র ভরসা। রুমির ভয় নেই। সে সুযোগ পাবেই।
তবু অভিভাবকরা শংকায়। এত টাকা খরচ হলো। অারতো সম্ভব না। ১৬ অক্টোবর ২০১৮। রাতে ফলাফল প্রকাশ হলো। রুমি ২৮,৮৫০ জন পরীক্ষার্থীর সাথে “এ” ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েছিল। রুমির নাম মেধাক্রম ২২৩ ( রোলনং ১২০২১০৯) এ অাছে। পরিবারের সবাই খুশী। রুমির বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর অার্থিক সামর্থ্য নেই চা দোকানদার বাবার।
তাহরিমা অাক্তার রুমি জানায়, অনেক সংগ্রাম করে শাবিতে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতা এখন পীড়া দিচ্ছে। গতবার অামাদের কলেজের শিক্ষাসংগ্রামী অামির হোসেন ভাইয়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ যখন অাপনাদের মাধ্যমে হয়েছিল তখন থেকে অাশা নিয়ে পড়ছি। জগন্নাথপুরের মেয়ে অামি। অামার যেকোন অসহায় মূহুর্তে সবাই পাশে দাঁড়াবেন।
শাহজালালাল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. অাব্দুল মতিন বলেন, রাত তিনটায় রুমির ফোন। সে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সুযোগ পেয়েছে। তাঁকে অভিনন্দন জানালাম। তার ভাইবোন সবাই পড়াশুনায় ভাল। মেধাবী। তাঁর মধ্যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা অাছে। তাঁর বাবা অাবুল কালাম একটি চা দোকান চালিয়ে সংসার সহ সন্তানের পড়াশুনার খরচ চালান। সৎভাবে পরিচালিত জীবনে সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান।
জগন্নাথপুরের বিত্তবানরা এগিয়ে অাসলে রুমির মতো শিক্ষা সংগ্রামী মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে অাসবে। এটা অামাদের জন্য অাশার খবর। রুমি কলকলিয়া ইউনিয়নের ঘিপুড়া গ্রামের অাবুল কালাম অাজাদ ও রাবেয়া বেগমের ৫ ছেলে-মেয়ের মধ্যে তৃতীয় সন্তান।
রুমির বাবা অাবুল কালাম অাজাদ তাঁর অদম্য মেয়েকে সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে সমাজের বিত্তবান মানুষ ও সংগঠনের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.