শিক্ষাঙ্গনে দূর্ণীতির এক কালো গল্প

0
1014
blank

সুফিয়া বেগম চৌধুরী: দূর্ণীতি আমাদের সমাজে ব্যাধির আকার ধারণ করেছে ।পরিবার, সমাজ,রাষ্ট্রে শিক্ষা ও সচেতনতার হার বেড়েছে ঠিকই,কিন্তু এই তিনটি স্তরেই কোনভাবেই কমানো যাচ্ছে না দুর্ণীতি ।দূর্ণীতির মাধ্যমে বিত্তশালী হওয়ার আকাঙ্খা পোষণকারী লোকের সংখ্যা আমাদের সমাজে একেবারেই কম নয় ।সরকারি -বেসরকারি যে কোনো উন্নয়ন কর্মকান্ডে অনিয়মের মাধ্যমে টাকা আত্বসাৎ করা এদের কাজ ।তবে সমাজের মানুষ মনে করেন যে,শিক্ষাঙ্গনে দূর্ণীতির সংখ্যা অনেকটা কম ।কারণ, বাংলাদেশে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় দূর্ণীতির বিরোদ্ধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির উপর ব্যাপক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে । বর্তমানে শিক্ষক,শিক্ষার্থীরাও দূর্ণীতির বিরোদ্ধে সোচ্চার ।এই বিবেচনায় সবার বিশ্বাস যে,আর যাই হোক না কেন যে বা যারা দূর্ণীতির সাথে জড়িত তারা অত্যন্ত পক্ষে শিক্ষাঙ্গনে সততা দেখাবেন ।

কিন্তু সমাজের মানুষের এই ধারণা যে ভুল তা কজনই বা জানেন ?রাঘব বোয়ালরা সবখানেই ছোবল মারে তা জানাতেই আমি আজকের এই কলাম লিখতে বসেছি ।আমি একজন শিক্ষকা হিসেবে এরকম একটি ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী, আর যে ঘটনা ঘটেছে তা একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে আমাকে দংশন করেছে ।

দূর্ণীতির সেই কালো ঘটনার নায়ক হলেন একজন প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা ।তিনি আমাদের বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ।আমার বিদ্যালয় ১৯৭২ সালে প্রতিষ্টিত হওয়ার পর থেকে আর সংস্করণ করা হয়নি ।তাই বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি দীর্ঘ দিন থেকে ভঙ্গুর অবস্তায় ।ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আমরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছি ।পুরাতন এই ভবন সংস্কার ও নতুন ভবনের জন্য শিক্ষক,শিক্ষার্থী এবং ম্যানেজিং কমিটি সহ অভিবাবকরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করি ।সরকার এ দাবীর প্রেক্ষিতে গত মাসে (৫/৭/২০১৭) তারিখে আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন ।কাজের জন্য যখন টেন্ডার আহবান করা হলো তখন আমাদের বিদ্যালয়ের সভাপতি আর্জমন্দ আলী টেন্ডার ক্রয় করেন ।অন্যান্য টেন্ডার প্রত্যাশিতরা অভিযোগ করেছিলেন,যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়ম বর্হির্ভূতভাবে তিনি টেন্ডার ভাগিয়ে নিয়েছেন ।যাই হোক,সেটা আমার লেখার মূল প্রতিবাদ্য নয় ।তিনি টেন্ডার এনেছেন এজন্য আমি মোটেও অখুশী হইনি ।বরং আমি খুশি হয়েছিলাম এই প্রত্যাশায় যে, যেহেতু তিনি আমাদের বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাজের টেন্ডার পেয়েছেন,তাই ভবন নির্মানের কাজটি কম সময়ে-সুন্দরভাবে সম্পন্ন হতে পারে । কিন্তু,কে জানত এই ভবন নির্মাণে দূর্ণীতির কালো ছোয়া লাগবে ।
নতুন ভবনের নির্মানের কাজ শুরু হওয়ার প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে ।ভবনের কাজ সম্পন্ন না হয়ে বন্ধ হয়ে গেল এবং পুরাতন ভবনের সংস্কার কাজও হয়নি ।এমতাবস্থায় আর্জমন্দ আলী বলেছেন,সরকার থেকে যে বরাদ্দ এসেছে তা শেষ হয়ে গেছে ।এখন নতুন ভবন ও পুরাতন ভবনের কাজ সম্পন্ন করে আরো ৫০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন ।

এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সরকার থেকে যে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো-তা কি যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়েছে ? আর যদি দূর্ণীতি না করে পুরো টাকা কাজে লাগানো হয়ে থাকে তাহলে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলো না কেন ?
আমি শিক্ষক হিসেবে মনে করি এর তদন্ত হ ওয়া প্রয়োজন । সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে এখানে কোটি টাকার দূর্ণীতির প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে । যেহেতু নতুন ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়নি তাই এ ভবনে শিক্ষার্থীদের স্থানান্তরিত করা যাচ্ছে না, আবার পুরাতন ভবনের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়নি তাই এ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ।এ অবস্থায় কয়েকদিন থেকে পাঠদান ব্যাহত ঘটছে । একজন ঠিকাদার ও বিদ্যালয়ের সভাপতির দূর্ণীতির কারণে কি একটি বিদ্যালয়ের পাঠদান থেমে যাবে ?শিক্ষক বা সমাজপতি হিসেবে আমাদের কী কোন দায়-দায়িত্ব নেই ! কোনো বিবেকবান ব্যক্তি যেমন দূর্ণীতি করতে পারেন না,ঠিক তেমনি কোনো প্রকার দূর্ণীতিকে প্রশ্রয় দিতে পারেন না ।

লেখক:সিনিয়র সহকারী শিক্ষক,
বাঘা গোলাপনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ।