সংলাপ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য দেশবাসীকে হতাশ ও বিস্মিত করেছে: বিএনপি

0
1007
blank

ঢাকা: জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সংলাপ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মন্তব্য করেছেন তা দেশবাসীকে হতাশ ও বিস্মিত করেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন। রোববার বিকেলে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সংলাপের আহ্বান জানানো বিরোধী দলের কোন দুর্বলতা নয়। সরকারের সৌভাগ্য যে, বিরোধী দলের উপর নির্মম-নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানোর পরও আমরা এই ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার প্রস্তাব দিয়েছি, শুধু দেশ-জাতি যাতে অমানিষার ঘোর অন্ধকারে নিপতিত না হয়।

তিনি বলেন, আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে দলের চেয়ারপারসন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে একটি জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই সংকট সমাধানের ক্ষেত্র চিহ্নিত করে কিছু সমাধানের প্রস্তাবনাও তুলে ধরেছিলেন তাঁর সর্বশেষ বিবৃতিতে।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, শাসক দলের কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এই প্রস্তাবনাকে কটাক্ষ করেছেন। আমাদের দল ইতিবাচক রাজনীতি করে বলেই দেশ ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা থেকেই জাতীয় ঐক্যের স্বার্থেই জাতীয় সংলাপের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, সরকার প্রধান আজ সংবাদ সম্মেলনে আমাদের দল সম্পর্কে যে অভিযোগ করেছেন-তা নতুন কিছু নয়, এসব কথা তিনি আগেও বলেছেন। এসব তিনি ও তার সহকর্মীরা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে বলার জন্য মুখের বুলি হিসেবে প্রতিদিনই আওড়াচ্ছেন। আমরা এর নিন্দা করছি ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এসব তথাকথিত অভিযোগের ব্যাপারে আমাদের দলের অবস্থান হচ্ছে- আমাদের দল ও অন্যান্য সকল বিরোধী দল দেশে নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবী করে আসছে। এ দাবীর স্বপক্ষে আমরা গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন করেছি এবং প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু আন্দোলন চলাকালে কোন ধরনের সহিংসতা-জ্বালাও-পোড়াও’র ঘটনার সঙ্গে আমাদের দল, নেতাকর্মীদের আদৌ কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এ কথা আমরা বহুবার বলেছি এবং এসব ঘটনায় জাতিসংঘের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক তদন্ত’র দাবী করেছি, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থার দাবীও করেছি।

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, সেন্টার ফর ন্যাশনাল ষ্টাডিজ (সিএনএস) নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের একটি প্রকাশনায় উল্লেখ করেছেন- কিভাবে ওসব ঘটনাগুলোতে সরকারি লোকজন সংশ্লিষ্ট ছিল এবং তারাই জ্বালাও-পোড়াও’র ঘটনায় জড়িত।

রিপন বলেন, সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন- ‘সংলাপে বসার জন্য বিরোধী দলের যে সক্ষমতা থাকা উচিৎ তা নেই’। দম্ভ ও উন্মাষিকতা থেকেই তারা যে এসব বলছেন, তাতে কারো কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তাদের ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, ভোট বিহীন নির্বাচনে গঠিত সরকারের মন্ত্রীদের মুখে এসব বাগাড়ম্বর মোটেই শোভা পায় না। আমরা প্রশ্ন করতে চাই- যোগাযোগ মন্ত্রী তার নিজের মন্ত্রণালয়ে কোন সক্ষমতা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন? গোটাদেশের রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরে গেছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো তার মন্ত্রণালয়েও অবাধে দুর্নীতি হচ্ছে। শুধু ৫ বছরে ২৭৫ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে মেঘনা-গোমতি সেতুর টোর আদায়ে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর আট লেন প্রকল্পের স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় সম্পাদকীয় পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদকীয়তে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ‘উন্নয়নমুখী নাকি রাষ্ট্রীয় কোষাগার নয়ছয় করা মুখ্য’? এ রকম অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।

রিপন বলেন, অর্থমন্ত্রী বিএনপি’র সংলাপ প্রস্তাবকে ‘রাবিশ’ বলেছেন। তার অদক্ষতা-অযোগ্যতা ও শাসকদলীয়দের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার নামে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো থেকে দশ হাজার কোটি টাকার মতো লোপাট হয়ে ওসব ব্যাংকগুলো এখন ফোকলা হয়ে গেছে। অর্থমন্ত্রীকে স্বৈরাচারী এরশাদের একজন সহযোগী উল্লেখ করে বলেন, তার মুখে এধরনের অমার্জিত শব্দ উচ্চারণ  হওয়া স্বাভাবিক। যিনি বর্জ্য জাতীয় কথাবার্তা বলেন এবং প্রায়ই ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যা জাতি বারবার প্রত্যক্ষ করছে।

রিপন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিদেশিদের অবদানে সম্মাননা  জানানোর জন্য যে ‘স্বর্ণপদক’ দেয়া হয়েছিল-তাতে কিভাবে স্বর্ণগুলো লোপাট হয়েছে, তা কি দেশবাসী ভুলে গেছেন?

রিপন বলেন, সরকার প্রধান আজকের সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত হত্যাকা- ‘আইএস’ ঘটিয়েছে এমন স্বীকারোক্তির জন্য সরকারের উপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। এতথ্যে সমগ্র জাতি উৎকন্ঠিত হয়েছে। কারণ, জাতি’র উপলব্ধি করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়-এর পরিণাম বাংলাদেশের জন্য কতটা বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে।

আর এজন্যই আমরা চাই-সবাই মিলে বাংলাদেশের উপর আসন্ন বিপদের হুমকিকে মোকাবেলা করি। কারণ. নগর পুড়লে দেবালয়ও তাতে রক্ষা পায়না।

আর সে কারণেই আমরা দেশকে বাঁচাতে চাই, জনগণকে বাঁচাতে চাই। এখানে ক্ষমতায় কে আছেন, ক্ষমতায় কে আসবেন এখন সেটা মুখ্য নয়। দেশকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই সর্বদলীয় বৈঠক করতে হবে, জাতীয় ঐক্যের সূচনা করতে হবে, সংলাপও হতে হবে। এখানে গোঁয়ার্তূমির কোন সুযোগ নেই। আর তা না করে বিরোধী দলের প্রতি দোষারোপের রাজনীতির চর্চা অব্যাহত রাখলে গণতন্ত্রের জন্য মহা বিপদ আসবে।