সংসদে জাতীয় বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী

0
517
blank
blank

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ প্রত্যয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এ বাজেট পেশ শুরু হয়।

প্রথমেই অর্থমন্ত্রী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পেশ করেন। এরপর তিনি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করবেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়।

আজকের এই বাজেট বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এবং অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ১২তম বাজেট। এর মধ্য দিয়ে টানা ১০ বার বাজেট দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তাবিত এ বাজেটে সরকার কোনো ধরনের ঝুঁকি নিচ্ছে না। তাই অন্যবারের মতো নতুন নতুন কর চাপিয়ে ভোটারদের অসন্তুষ্ট করার মতো তেমন কোনো ঘোষণা এবার থাকছে না।

বিশ্বব্যাংক ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭ থাকবে বলে অনুমান করছে। সেখানে অর্থমন্ত্রী আজ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ ধরে বাজেট উপস্থাপন করছেন।

জানা গেছে, আগামী বাজেটে ব্যয়ের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। ফলে এ বাজেটে ঘাটতি থাকছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা ডিজিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশের সমান। অন্যদিকে অনুদানসহ মোট আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে তিন লাখ ৪৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এতে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী আজ যে বাজেট পেশ করছেন, সেখানে মোট রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ব্যয় সংকোচন নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি সরকার। ২০১৮-১৯ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা, এনবিআরবহির্ভূত কর খাতের আয় ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত রাজস্ব আয় ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। এ বিপুল অঙ্কের রাজস্ব সংগ্রহের জন্য সরকারকে জিডিপির বৃদ্ধির হার বাড়াতে হবে। সরকারের অনুমান অনুযায়ী আগামী আর্থিক বছরে ডিজিপির আকার ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। অবশ্য এটি চলতি জিডিপির তুলনায় দুই লাখ ৯৯ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা বেশি।

বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে এবং লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া সরকারের পরিচালনা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৪৮ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে দুই হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা।

এবারের বাজেটে ঘাটতি পূরণ করতে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণগ্রহণ করবে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেবে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে কৃষকের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের তুলনায় কৃষিতে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দেয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এতে কৃষিতে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি থাকছে।

এ ছাড়া এলএনজি আমদানি ও চাকরিজীবীদের গৃহনির্মাণ ঋণসহ বেশ কিছু খাত নতুন করে ভর্তুকির আওতায় আসছে। বিশেষ করে আগামী বছর থেকে ভর্তুকি দেয়া হবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। অথচ চলতি অর্থবছর পর্যন্ত এ সংস্থাকে সরকার সহায়তা দিয়েছে ঋণ হিসেবে। পাশাপাশি সামনের বছরগুলোতে বাস্তবায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে কয়লা, গ্যাস, তাপবিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ প্লান্টের। সে হিসাব করেই আসন্ন বাজেটে ৩১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে।

নির্বাচনের আগে সরকারি চাকরিজীবীসহ ভোটার টানার চেষ্টা করা হবে বাজেটে। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে গৃহনির্মাণ ঋণ কর্মসূচি। এ ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ তাদের (চাকরিজীবী) বছরে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট ধরে বেতনভাতা খাতে দেয়া হচ্ছে ৬৬ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। পাশাপাশি বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বাজেটে থাকছে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার রূপ রেখা।

জানা গেছে, ভোটে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় ১১ লাখ দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে। ফলে এ কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৮৬ লাখ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাতৃত্বকালীন ভাতা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মায়ের (শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা) ভাতা ৫০০ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৮০০ টাকা। এ দুটি ভাতা প্রাপ্যতার মেয়াদ দুই বছর থেকে বৃদ্ধি করে তিন বছরে নেয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ক্যান্সার, কিডনি, স্ট্রোক, প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির জন্য ৫০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ ছাড়া দুই লাখ জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ সম্মাননা ভাতা চালুর ঘোষণা আসছে। ‘বিজয় দিবস ভাতা’ নামে এটি কার্যকর করা হবে। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা বছরে পাঁচ হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত এ ভাতে পাবেন।

ভোটার তুষ্ট করতে নতুন করে আরও এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি (সরকারি বেতনের অংশ) করা হচ্ছে। এ ছাড়া জাতীয় বাজেটে প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে রোহিঙ্গারা। তাদের পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরসহ অবকাঠামো তৈরিতে বাজেটে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।

ছয়টি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রণয়ন করা হচ্ছে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন খাত। বিদ্যুৎ জ্বালানিসহ ভৌত অবকাঠামো এবং কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানও রয়েছে। পাশাপাশি সরকার সেবাদানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নও থাকছে এ তালিকায়। অগ্রাধিকারে আরও থাকছে জলবায়ু মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন এবং বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগ ব্যবহার, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি। সরকারের শেষ বাজেট এসব বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই প্রণয়ন করা হচ্ছে। বিশেষ অগ্রাধিকারের কারণে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এসব খাতে।