সন্ত্রাস নির্মূল কমিটি বিরোধী নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে: বিএনপি

0
746
blank
blank

 

ঢাকা:  সরকার আসলেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করতে চায় না মন্তব্য করে বিএনপি বলছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের নামে প্রশাসনিক কমিটি গঠন করে সরকার মূলত বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। দলটি বলছে, জঙ্গি বিরোধী অভিযানের নামে সরকার শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনিক কমিটি গঠন করেছে। অথচ জনআকাঙ্খা ছিলো দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করা। কিন্তু এসব কমিটিতে তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মিথ্যা-কাল্পনিক অভিযোগে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতাকর্মীদের জড়িত করে নানাভাবে হয়রানি করছে।

সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এসব অভিযোগ তুলে আরো বলেন, সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ ও অযোগ্য। আমরা সরকারের এই ব্যর্থতার তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করার আহবান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা মনে করি- দেশব্যাপী প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারের পরিবর্তে বিএনপির নেতাকর্মীদের তালিকা করে গ্রেফতার, হয়রানির মাধ্যমে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার প্রকারান্তরে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল ও উৎসাহিত করছে। আমরা অবিলম্বে এই দমন-নিপীড়ন বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। এসময় ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা ও ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের অভিযোগ তুলে অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবি জানান নজরুল ইসলাম খান। রাজধানীতে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা তকদির হোসেন মো. জসিম, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান এবং সম্প্রতি খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহবানের কথা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের নেত্রী জাতীয় ঐক্যের আহবান জানালেও সরকার তাতে কর্ণপাত না করে উল্টো বিএনপিসহ বিরোধী দলকে দোষারোপ করছে। ফলে তারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার সম্ভাবনা নস্যাৎ করেছে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, শুধু প্রশাসন দিয়ে বা প্রশাসনিক বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে জঙ্গিবাদ যে দমন করা যায় না, এটা প্রমাণিত হয়েছে। আগে এক-দুইজন খুন হতো, এখন ১৮/২২ জন খুন হয়। আমরা সেই জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কথা বলেছি। সেই জাতীয় ঐক্য বিএনপিকে বাদ দিয়ে হতে পারে না। এই দল ভোটের হিসাবে শতকরা ৪০ ভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, এখন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে যদি বলা হয়, জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে, তাহলে তো এটা ভুল। আমরা মনে করি যে, সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। জনগণের প্রতিরোধেই জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব। সরকার খালেদা জিয়ার আহবানে সাড়া দেয়নি, সেক্ষেত্রে বিএনপিকে বাদ দিয়ে প্রশাসনিক কমিটি হয়ে গেছে। এ পর্যায়ে বিএনপি পৃথক কিছু ভাবছে কি-না জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমরা আগেও বলেছিলাম, শুধু সরকার একাও জঙ্গিবাদ দমন করতে পারবে না, আবার বিরোধী দল একাও পারবো না। সেজন্য সবাই মিলে এটা করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, সরকার আসলেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করতে চায় না। তারা এটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে দমন করতে চায়। সেজন্য আমরা এর নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আমাদের মতো করে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টাকে আরো শক্তিশালী করার জন্য, আরো বিভিন্ন যে রাজনৈতিক দল আছে যারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, তাদেরকে নিয়ে আমরা হয়ত সাংগঠনিকভাবে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করবো। সেটা যখন হবে, তখন আপনাদের জানানো হবে। কানাডায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, অনৈতিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী কানাডায় বলেছেন, নারী নির্যাতনে জিরো টলারেন্সে তার সরকার। অথচ একই দিন পত্রিকায় এসেছে সাতক্ষীরায় এমপি পুত্রের নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনা। তার বিরুদ্ধে অন্যের বাড়ি-ঘর-গাড়ি দখল, চাঁদাবাজি, অন্যের বাড়ি থেকে জোর করে গরু নিয়ে বিক্রি, যখন-তখন রড হাতুড়ি দিয়ে মানুষ পেটানো, মাতলামিসহ বিস্তর অভিযোগ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। জনগণের সোচ্চার প্রতিবাদ ও গণমাধ্যমে সমালোচনার প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত গত রোববার তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আজ দেশের নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনিই নারী ধর্ষণের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। আজও গণমাধ্যমে ধর্ষিতা নারীর আত্মহত্যার মর্মান্তিক খবর প্রকাশিত হয়েছে। ঈদের সময়ে ঘরমুখী মানুষের যানবাহন সঙ্কট, ব্যাপকহারে সড়ক দুর্ঘটনা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি, পশুর চামড়ায় সরকারির দলের সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, রাজধানীতে ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে হতাহতের ঘটনাবলীর চিত্র তুলে ধরে নজরুল বলেন, সরকার এসব ঘটনায় নির্বিকার। এগুলো প্রমাণিত হয় যে তারা দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ ও অযোগ্য। আমরা তাদের এই ব্যর্থতার নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করার আহবান জানাচ্ছি।