সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগাতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করুন: প্রধানমন্ত্রী

0
486
blank
blank

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দক্ষতার সঙ্গে বিপুল সমুদ্র সম্পদ আহরনের মাধ্যমে কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ফলে আমরা অর্জন করেছি, প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ বিশাল এক সমুদ্র এলাকা। এই বিস্তৃত সমুদ্র সম্পদকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে নৌবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের ব্লু ইকোনমি’র বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। আমি আশা করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত হয়ে আপনারা অর্পিত দায়িত্ব সফল ও নিরাপদভাবে পালন করবেন।

বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির বানৌজা ঈসা খান প্যারেড গ্রাউন্ডে বিএন ডকইয়ার্ডকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান এবং বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিএন ডকইয়ার্ড আন্তর্জাতিক মান (আইএসও : ৯০০০) বজায় রেখে যুদ্ধজাহাজের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ইতিমধ্যে ডকইয়ার্ডের নিজস্ব ফ্লোটিং ডক ‘বিএনএফডি সুন্দরবন’ ও বিএন স্লিপওয়ে এক হাজারেরও বেশি দেশী-বিদেশী যুদ্ধ জাহাজের সফল ডকিং ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পন্ন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পূর্ণ নিজস্ব জনবল, প্রযুক্তি ও কারিগরি দক্ষতা ব্যবহার করে এই ডকইয়ার্ড সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যুদ্ধজাহাজসমূহকে নৌবাহিনীতে দীর্ঘকাল অপারেশনাল রাখছে। ফলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএন ডকইয়ার্ডের এ অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আজ ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করা হল, যা নৌবাহিনীর ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জল অধ্যায় হয়ে থাকবে। বিএন ডকইয়ার্ডের এ কৃতিত্বের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান।

সরকার প্রধান আস্থা প্রকাশ বলেন, ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রাপ্ত বিএন ডকইয়ার্ড আরও কার্যকরভাবে সেবা প্রদানের মাধ্যমে নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখবে।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী ডকইয়ার্ডে পৌঁছলে তাকে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং ডকইয়ার্ডের কমোডর সুপারিন্টেন্ডেড কমোডর মনিরুল হক তাঁকে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রীকে এ সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিএন ডকইয়ার্ডের কমার্ন্ডিং অফিসার ইমতিয়াজ উদ্দিনের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন।

সমুদ্র পথে দেশের বাণিজ্যের ৯০ ভাগের বেশি পরিচালিত হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিশাল সমুদ্র এলাকার সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌবাহিনী সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছে। সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় মানব পাচার, চোরাচালান রোধ, জেলেদের নিরাপত্তা, বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে নৌবাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের বলপূর্বক বাস্তুুচ্যুত নাগরিকদের সহায়তায় নৌবাহিনী ভাষাণচরে অস্থায়ী আশ্রয়স্থল নির্মাণ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌ-সদস্যদের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে নেভাল একাডেমিতে আজই উদ্বোধন করা হয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’। ফলে জাতির পিতার স্বপ্নের আন্তর্জাতিক মানসম্মত প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হল।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা একটি আধুনিক, শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পরপরই বেশ কয়েকটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি নৌবাহিনীর বৃহত্তম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বানৌজা ঈসা খান কমিশন করেন এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নেভাল এনসাইন প্রদান করেন। একইসঙ্গে দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে ‘দ্য টেরিটরিয়াল ওয়াটারস এন্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন।

সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের ১৯৯৬-২০০০ মেয়াদে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যাপক উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধন করা হয়েছিল। ২০০৯ সাল হতে গত ৯ বছরে নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। নৌবহরে সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ ত্রিমাত্রিক শক্তি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি কলেন, নৌবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, গড়ে তোলা হয়েছে হেলিকপ্টার ও টহল বিমান সমৃদ্ধ নেভাল এভিয়েশন এবং বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াডস ।

তিনি এ সময় তার সরকারের শাসনে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন খণ্ডচিত্রও তুলে ধরে বলেন, আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছি। এ স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী মাইলফলক। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আমরা আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ।