সরকারি সহায়তা: ভিক্ষা নয় অধিকার!

0
1413
blank
blank

শিব্বির আহমদ ওসমানী : বিভিন্ন দূর্যোগে বা মহামারীর সময়ে দেশের সাধারণ মানুষের আয়-রোজগারে বড় ধরনের আঘাত আসে। তখন সাধারণ মানুষ সহ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন যাপনে দুর্ভোগ নেমে আসে। অনেক পরিবার খেয়ে না খেয়ে বহু কষ্টে জীবন-যাপন করেন। অভাবের তাড়নায় অনেকের জীবন বিপন্ন হয়। জনগণের এই সকল দুর্ভোগ ও কষ্ট লাঘবের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সহায়তা, ত্রাণ বা উপহার প্রদান করা হয়। এতে কিছুটা হলেও মানুষ স্বস্তি পায়।

সরকারী এই সহায়তা রাষ্ট্রের কোষাগার/তহবিল থেকে দেওয়া হয়। আর এই তহবিল দেশের জনগণের কষ্টার্জিত টেক্স ও ভ্যাটের টাকায় ঘটিত হয়। কাজেই এই কোষাগার জনগণের সম্পদ। জনগণের প্রয়োজনে তা খরছ করা হবে। বিভিন্ন দুর্যোগে ও মহামারীর সময়ে সরকার থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয় তা মূলত এই জনগণের জমাকৃত রাষ্ট্রের তহবিল থেকে দেওয়া হয়। তাই এই সহায়তা, ত্রাণ বা উপহার পাওয়া জনগণের অধিকার। এটি জনগণের প্রতি অনুগ্রহ বা ভিক্ষা নয়। তাই এগুলো সম্মানের সাথে জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধি বা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহয়তা, ত্রাণ বা উপহার জনগণের কাছে হস্তান্তর করেন। এটি প্রদান করা তাদের দায়িত্ব আর পাওয়া জনগণের অধিকার। এতে আমাদের জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেক কষ্ট করে থাকেন এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। করোনা মহামারীর সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তাদের জন্য প্রীতি ও শুভকামনা থাকলো।

জনগণের সরলতার সুযোগে যেসকল জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদেরকে প্রজাতন্ত্রের সেবক বা চাকর হিসেবে জনগণের খেদমত করার পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় সম্পদ তসরুপ করে তাদের প্রতি ঘৃণা। মিডিয়ার কল্যাণে দেখা যায়, তাদের আস্কারা পেয়ে ক্ষমতাসীন অনেকে সরকারী সহায়তার চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি চুরি করে নিয়ে যায় বা কখনো কখনো দেখা যায় এসব চুরিতে সরাসরি জনপ্রতিনিধি বা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। এটি খুবই দুঃখজনক। তাদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

এসব সহায়তা প্রদানের সময় কিছুকিছু জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এমন মনোভাব দেখা যায় যে, তারা এগুলো তাদের সম্পত্তি থেকে দান করছেন। অনেক সময় আবার দেখা যায় বিতরণের সময় বলা হয় মন্ত্রী, এমপি বা চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে দান। প্রজাতন্ত্রের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা আবার ফলাও করে প্রচারও করেন মন্ত্রী-এমপির দান হিসেবে। এটি কখনো কাম্য নয়। এগুলি কাহারও দয়া বা দান নয়। এই সহায়তা রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে জনগণের জন্য বরাদ্দ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।

দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে জনপ্রতিনিধি বা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণের প্রাপ্য অধিকার জনগণের কাছে হস্তান্তর করেন মাত্র। এরজন্য তারা এই একই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। বাড়ী-গাড়ি সহ সরকারী অন্যান্য অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। জনগণের অধিকার আদায়ে জনগণকেই সচেতন হতে হবে। সকল রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিক জনগণ। তার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণে জনগণকেই সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।

লেখক: শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট ও সমাজকর্মী।
www.fb.com/ShibbirAOsmani