সরকারের কারসাজিতেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা: বিএনপি

0
711
blank

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারের কারসাজিতেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। তারা বলছে, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় পরিষ্কার হয়েছে বর্তমান আদালতে খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার পাবেন না। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে আগামী ৩রা ডিসেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ পালন কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে ১লা ডিসেম্বর শুক্রবার জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ গতকাল নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম দলগুলোর হরতাল থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হতে পারেননি। বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা আদালতে হাজির হয়ে সময়ও চেয়েছিলেন। এমনকি হরতাল শেষ হওয়ার পর খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চান বলে আইনজীবীরা আদালতে আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু আবেদন নাকচ করে তার বিরুদ্ধে আবারও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, যা ন্যায় বিচারের পরিপন্থী ও ন্যক্কারজনক।

রিজভী আহমেদ বলেন, এই ঘটনা সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে এটি বর্তমান সরকার প্রধানের পাশবিক জিঘাংসার প্রতিফলন। জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে হিংসাপরায়ণ সরকারের বিভীষিকাময় আস্ফালন। এ আদালতে খালেদা জিয়া যে ন্যায়বিচার পাবেন না, এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর তা আরো পরিষ্কার হলো। রিজভী বলেন, যেখানে প্রধান বিচারপতির নিরাপত্তা নেই, যেখানে জোর করে অসুস্থতার মিথ্যা কথা বলে ছুটিতে পাঠিয়ে দেশত্যাগে তাকে বাধ্য করা হয়। তারপর বিদেশে প্রধান বিচারপতির কাছে সরকারের লোকেরা গিয়ে হুমকি দিয়ে তাকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়। সেখানে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রধান কিভাবে ন্যায় বিচার পাবেন? বিএনপির মুখপাত্র বলেন, যেখানে প্রতিহিংসার বিষ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অন্তরে অম্লান থাকে, সেখানে জনগণের স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের মুক্তি কঠিন হয়ে পড়ে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি সরকারের নিষ্ঠুর ও বন্য আক্রোশেরই বহিঃপ্রকাশ। সরকারের কারসাজিতেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, প্রতি সপ্তাহেই সরকার প্রধানের নির্দেশে খালেদা জিয়াকে হয়রানিমূলকভাবে আদালতে হাজিরা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। দেশনেত্রীও আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতি বৃহস্পতিবার আদালতে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি, সরকারের পরিকল্পিত ও নীলনকশার অংশ। এটা বুঝতে কারও বাকি নেই। ভোটারবিহীন সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে জান্তব হিংস্রতায় জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে। রিজভী বলেন, মনে হয়- খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসার জ্বালা সরকারপ্রধানের মনের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলছে, এ আগুন যেন অনির্বাণ। নিপীড়নের মাত্রা কত তীব্র হলে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালা মিটবে তা সর্বশক্তিমান আল্লাহই জানেন। তিনি বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, অশ্রাব্য-কুশ্রাব্য গালিগালাজ ইত্যাদি মিথ্যাচারের অবিরাম ধারাবর্ষণ প্রতিনিয়ত। এক্ষেত্রে এক শ্রেণির ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রায় ১০ বছর ও তাদের মদতপুষ্ট ওয়ান ইলেভেন সরকারের ২ বছরসহ একযুগ ধরে বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। নিম্ন আদালতের একটি মামলায় তারেক রহমানকে খালাস দেয়া হলে সে বিচারককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে সরকার। রিজভী বলেন, যতই অপচেষ্টা হোক সরকার পার পাবে না। খালেদা জিয়ার পক্ষে কোটি কোটি জনতার ঢল দেখে সরকার বেসামাল হয়ে দেশনেত্রীর ওপর নানামুখী আক্রমণ চালানো হচ্ছে। আদালতকে কব্জায় নিয়ে এই আক্রমণ চালাতে কসুর করছে না সরকার। তবে আমরা সরকারকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই- জনমতই হচ্ছে সর্বোচ্চ রায়। এই রায়ে খালেদা জিয়া দেশের মানুষের সত্যিকার ও ন্যায়সঙ্গত প্রধান প্রতিনিধি, আওয়ামী সরকার বা বর্তমান সরকার প্রধান নন। জনতার স্রোতে ভেসে যাবে সকল ষড়যন্ত্র। দেশের জনগণ দুন্দুভি বাজিয়ে বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত করবে। তিনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

রিজভী বলেন, যশোরের চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউনুচ আলী, বেনাপোল পৌর বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সদর পৌর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সিদ্দিক হোসেন এবং ঝিকরগাছা উপজেলা যুবদলের সভাপতি গোলাম কাদের বাবলু, বেনাপোল পৌর কাউন্সিলর আবদুল আহাদ, ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আলমগীর, জেলা ছাত্রদল সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, শার্শা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মশিউর, সদর উপজেলা বিএনপি নেতা শহীদ বিশ্বাসসহ ৬৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবি জানান।