সরকার দেশ বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে: রিজভী

0
708
blank

ঢাকা: পরিকল্পিতভাবে সরকার দেশ বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সরকারকে ভোটারবিহীন আখ্যা দিয়ে দলটি বলেছে, এই সরকার শুধু তোষামোদ করতে গিয়ে দেশের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে বাংলাদেশকে পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। অবকাঠামো না থাকলেও ইতোমধ্যে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে নামমাত্র ১৯২ টাকায় ট্রানজিটের নামে করিডোর দেয়া হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা সম্পূর্ণরুপে বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন সরকার গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে কখনই কুণ্ঠিত হয় না। তাদের অর্থনৈতিক দর্শনই হচ্ছে লুটপাটনির্ভর। এ জন্য যদি দেশকেও বিক্রি করতে হয়, তারা তাই করবে। এর আলামত দেশবাসী ইতোমধ্যে দেখতে শুরু করেছে। এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশ বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে। বর্তমান নতজানু সরকার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের কাছ থেকে যখন প্রতি টনে মাত্র ১৯২ টাকা ট্রানজিট ফি নিচ্ছে তখন বাংলাদেশে গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এবার গৃহস্থালিতে ব্যবহারের জন্য দুই চুলা ৬৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা এবং এক চুলা ৬০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। প্রতি ঘনমিটার সিএনজি ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৮ টাকা করা হয়েছে। বছর শেষ না হতেই আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অবৈধ সরকারে স্বেচ্ছাচারী মানসিকতারই প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, লুটপাটের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে গিয়ে জনগণের রক্ত চুষে নেয়া হচ্ছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এই প্রস্তাব ‘ডোমিনো ইফেক্ট’ এ অর্থনীতির সর্বত্র এর প্রভাব পড়বে। দেশের শিল্প ও কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনিতেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা চরমভাবে হ্রাস পেয়েছে, তার ওপর গ্যাসের দাম প্রস্তাব অনুযায়ী বৃদ্ধি পেলে তা জনগণের কাছে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’র ন্যায় অনুভুত হবে। সরকারের এ ধরনের গণবিরোধী প্রস্তাবে জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং এই গণবিরোধী উদ্যোগ থেকে সরে আসার জন্য আহবান জানাচ্ছে।

অভিন্ন নদী সংযোগ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত অভিন্ন ৩৭টি নদীর পানি প্রবাহের গতিপথ ভারতের উজানে ডাইভার্ট করে ভারতে শুষ্ক অঞ্চলের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে প্রস্তুতি প্রয়োজন তা প্রায় সম্পন্ন। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এই দুই বড় নদী এবং নদীগুলোর শাখা-প্রশাখা খাল দ্বারা সংযোগ করে বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত পানিকে সরিয়ে নেয়ার এক বিশালাকার প্রকল্প হচ্ছে ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প। এভাবে ভারত-বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন ৩৭টি নদীকে ৩০টি খাল দ্বারা সংযোগ করা হবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ব্রহ্মপুত্র থেকে প্রথমে তিস্তা ও পরে তিস্তা থেকে ফারাক্কা বাঁধের উজানে পানি আনা হবে। ফারাক্কা পয়েন্ট থেকে খাল কেটে ভারতের বিভিন্ন শুষ্ক অঞ্চলে নদীগুলোতে নিয়ে যাওয়া হবে। ভারতের এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ হলে বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অস্তিত্বই ভয়ঙ্কর রকমের বিকৃত হয়ে উঠবে। সাগরের লোনা পানি উপরের দিকে উঠে আসবে। লবণাক্ততা ভয়ঙ্কররূপে বৃদ্ধি পাবে, চাষের জমি নষ্ট হবে। এই রকম একটি বাংলাদেশ বিধ্বংসী মহাপ্রকল্পের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের মৌনতা সম্মতিরই লক্ষণ। এ ব্যাপারে নতজানু সরকার ‘টু শব্দটি’ও করছে না, কঠোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো তো দূরে থাক।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত কয়েকদিন আগে আনন্দবাজার পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের ফেনী নদীর ওপর ভারত ব্রিজ নির্মাণ করছে, যাতে তারা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে সহজে বাংলাদেশ থেকে ভারতে মালামাল নিতে পারে। ইতোমধ্যে অবকাঠামো না থাকলেও আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে নামমাত্র ১৯২ টাকায় ট্রানজিটের নামে করিডোর দেয়া হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা সম্পূর্ণরুপে বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে উগ্রবাদী জঙ্গিদের উৎপাত, তাদেরকে ধরার জন্য দেশের সাধারণ মানুষের ওপর ভয়াবহ নির্মম ক্র্যাকডাউন, পাইকারী হারে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিভীষিকার ডামাডোল সৃষ্টি করে জনগণের দৃষ্টিকে এই দিকে নিবদ্ধ রেখে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, ভৌগোলিক ও পরিবেশগত অস্তিত্ব এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বিপন্ন করে তারা নিরবে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।