সশস্ত্র বাহিনী বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে: প্রধানমন্ত্রী

0
594
blank

স্বর্ণদ্বীপ, হাতিয়া :  আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে মুহুর্মুহু কামান-গোলার শব্দ। ট্যাংক বিধংসী রকেট লাঞ্চারের কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন চারপাশ। আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসে শত শত প্যারাট্রুপার। বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমানের সাপোর্ট এবং সমুদ্র পথেও আক্রমণ চালায় নৌবাহিনীর সদস্যরা। সমন্বিত হামলায় পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের স্বর্ণদ্বীপ দখলকারী বিদেশি সৈন্যরা। দখলমুক্ত হয় স্বর্ণদ্বীপ। বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালীর স্বর্ণদ্বীপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই অনবদ্য যুদ্ধ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশন সেনাবাহিনীতে নতুন সংযোজিত বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে রণকৌশল অনুশীলন পরিচালনা করে। মহড়া শেষে প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানান।

মহড়ায় মনুষ্যবিহীন আকাশযান, ওয়াপন লোকেটিং রাডার, অত্যাধুনিক উভচর এপিসিসহ সশস্ত্র বাহিনীর ১৪০০ সদস্য অংশ নেন।

পরে দরবারে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের গৌরবময় নানা অর্জনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের দেশে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রোগ্রামে গেলে তাদের প্রশংসা শুনতে পাই। সমরাস্ত্রের দিক থেকে তারা যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে-সেভাবেই আমরা গড়ে তুলছি। সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সুশৃঙ্খল ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সমন্বিত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত আজকের মহড়া দেখে আপনাদের প্রতি আমার আস্থা আরও সুদৃঢ় হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠা স্বর্ণদ্বীপের সুপরিকল্পিত ব্যবহার দেখে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন এবং স্বর্ণদ্বীপের প্রশিক্ষণ সুবিধা সেনাবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া স্বর্ণদ্বীপে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠা তিনটি মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার, পরিকল্পিত বনায়ন প্রকল্প, সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ গৃহীত অন্যান্য জনবান্ধব প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের প্রদর্শিত এই প্রশিক্ষণ মহড়া সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও পেশাদারিত্বেরই প্রতিফলন, যা একটি আধুনিক ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীর উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।

মূলত ‘স্বর্ণদ্বীপ’ নামের এই দ্বীপ অঞ্চলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ এলাকা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সদস্যরা এখানে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণে অংশ নয়। এ পর্যন্ত স্বর্ণদ্বীপে ৩৫ হাজার সেনা সদস্য প্রশিক্ষণ সুবিধা পেয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার পূর্বে প্রাক মোতায়েন প্রশিক্ষণেও স্বর্ণদ্বীপ ব্যবহৃত হচ্ছে।

১৯৭৮ সালে মেঘনা নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে উঠা বিশাল এই দ্বীপ অঞ্চলটি এক সময় জাহাজ্জার চর নামে পরিচিত ছিল। ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৪ কিলোমিটার প্রশস্থ স্বর্ণদ্বীপটি ২০১২ সালে সেনাবাহিনীকে বরাদ্দ দেয় সরকার।