সিলেটের চার উপজেলায় ডাকাত আতঙ্কে মাইকিং

0
565
blank
blank

সিলেটের চার উপজেলায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ‘মকরম ডাকাত’ দলবল নিয়ে এলাকায় ঢুকেছে- এমন খবরে ঘুম হারাম হয়ে গেছে এলাকার মানুষের। মসজিদে মসজিদে করা হয়েছে মাইকিং। রাতে শুরু হয় রুদ্ধশ্বাস অবস্থা। এলাকায় এলাকায় মানুষ দলবেঁধে পাহারায় নেমেছে। পুলিশও সতর্ক। টহলের পাশাপাশি রাস্তায় তল্লাশিও চালাচ্ছে। সিলেটের বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, জগন্নাথপুর ও ছাতকে গেল দুইদিন ধরে চলছে এই ডাকাত আতঙ্ক।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডাকাত নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। তবে গতকাল পর্যন্ত পুলিশ ডাকাতদের নিশানা খুঁজে পায়নি। মকরম ডাকাত চার উপজেলার মানুষের কাছে এক নামেই পরিচিত। তার একটি বাহিনী রয়েছে। ওই বাহিনী নিয়ে সে চার উপজেলায়ই ডাকাতি করে বেড়ায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মকরম ডাকাতের বাড়ি ছাতকে। অনেক আগে থেকেই ডাকাত সর্দার হিসেবে সে পরিচিত। ঘটনার শুরু শনিবার বিকাল থেকে। ছাতকের দক্ষিণ অংশ ও বিশ্বনাথের একাংশে খবর রটে দলবল নিয়ে মকরম ডাকাত ঢুকেছে এলাকায়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় প্রথমে দক্ষিণ ছাতকের বিভিন্ন এলাকার মসজিদের মাইকে ডাকাতদের নিয়ে মাইকিং করা হয়। বলা হয় ডাকাতদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে। পরে বিশ্বনাথে ছড়িয়ে পড়ে সেই আতঙ্ক। বিশ্বনাথের পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কাবস্থা দেখে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার রাতে প্রায় প্রতিটি এলাকার মসজিদের মাইকে ডাকাত আতঙ্ক নিয়ে মাইকিং করা হয়। এই মাইকিংয়ে আরো বেশি আতঙ্ক দেখা দেয়। রাতে বিভিন্ন এলাকায় লোকজন পালাক্রমে লাঠিসোটা নিয়ে টহল দেন। গতকাল সন্ধ্যা থেকে ফের ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাজারের ব্যবসায়ীরা সন্ধ্যার পরপরই দোকানপাট বন্ধ করে চলে যান। একই অবস্থা ওসমানীনগর, জগন্নাথপুর ও ছাতকেও। বিশ্বনাথ থানার ওসি শামীম মুসা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কাবস্থা গ্রহণ করা হয়। এলাকার মানুষও সতর্ক। বিভিন্ন এলাকায় এ নিয়ে মাইকিংও হয়েছে বলে জানান তিনি। শনিবার সন্ধ্যা থেকে ওসমানীনগরের বিভিন্ন এলাকায় এই আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন ওসি রাশেদ মোবারক। তিনি বলেন, ডাকাতদের একটি গ্রুপ এলাকায় ঢুকেছে বলে খবর রটেছে। পুলিশ সারারাত এলাকায় টহলে ছিল। বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের বর্ডার এলাকা দিয়ে ডাকাত প্রবেশ করেছে বলে খবর এসেছিলো। কিন্তু পুলিশ টহল জোরদার করেও ডাকাতদের পায়নি। জগন্নাথপুর থানার ওসি ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীও জানিয়েছেন, জগন্নাথপুরেও ডাকাত আতঙ্ক ছিল। ছাতক থেকে ডাকাত দল জগন্নাথপুরে ঢুকতে পারে বলে খবর ছিল। পুলিশ এই খবরে সতর্ক রয়েছে। ছাতক থানার ওসি মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ডাকাত আতঙ্কের বিষয়ে পুলিশ সতর্ক। এলাকার মানুষকেও সচেতন করা হয়েছে। সিলেটের বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, ছাতক ও জগন্নাথপুর- এই চার উপজেলা হচ্ছে পাশাপাশি এলাকা। প্রবাসী অধ্যুষিত চার উপজেলাই। শীত এলেই এসব এলাকার যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা দেশে আসেন। পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটিকালীন সময় কাটান নিজ বাড়িতেই। এই সুযোগে ডাকাতদের টার্গেট থাকে প্রবাসী পরিবার। ফলে প্রতিবছরই শীত এলেই ডাকাত নিয়ে আতঙ্ক থাকে এলাকা। স্থানীয় ডাকাতরা ছাড়াও এসব এলাকায় সিলেটের বাইরে ডাকাত দল গাড়িযোগে এসে ডাকাতি করে বেড়ায়। কখনো কখনো তারা সিলেট নগরীতেই ডাকাতি করে। ফলে শীত মৌসুমে সিলেটে ডাকাত আতঙ্ক থাকে বেশি। দুই বছর আগে শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলো ডাকাতরা। রাতে তারা ডাকাতি করে বেড়াতো। এ সময় সিলেট শহর ও শহরতলী এলাকায় কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার পর ডাকাতদের একটি গ্রুপকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিলো।