সিলেট সিটি নির্বাচন: মেয়র হতে দৌড়ঝাপ করছেন ১১ প্রার্থী

0
1380
blank
blank

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) বর্তমান পরিষদের মেয়াদ আগামী বছরের ৮ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। আর মাত্র ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্টিত হচ্ছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এমন পরিস্থিতিতে সিলেটে শুরু হয়েছে ভোটের দামামা; সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে চলছে নানা তৎপরতা।

সিসিকের মেয়র হওয়ার দৌড়ে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন অন্তত এগারোজন সম্ভাব্য প্রার্থী। আগামীতে প্রথমবারের মতো সিসিকে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মনোনয়নপ্রাপ্তরা। এ অবস্থায় বিএনপি থেকে সর্বোচ্চ ছয়জন ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন চারজন নেতা।

২০১৩ সালের ১৫ জুন সিসিকের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আইন অনুযায়ী প্রথম সভার দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত পরিষদের মেয়াদ থাকবে। এতে ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে সিসিকের বর্তমান পরিষদের।

তবে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিন আগে থেকে যে কোনো দিন নির্বাচন করার বাধ্যবাধ্যকতা আছে। আগামী বছরের ১৩ মার্চের পর থেকে তাই যে কোনো দিন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে নির্বাচন কমিশন। আগামী বছরের জুন মাসে দেশের আরও তিনটি সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সিলেটে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।

সিসিকের সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। এতে সিলেট পৌরসভা থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশনে উম্নীত হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের একক আধিপত্যে ছেদ পড়ে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট মহানগর সভাপতি কামরান ভোটের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের সাফল্যের সেই ছন্দপতনকে পেছনে ফেলে আবারও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এ ব্যাপারে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন বলে সে সময় প্রচার করেন তিনি। তবে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ উড়িয়ে দিয়েছেন এ দাবি।

মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রকাশ্য লড়াইয়ে নামা কামরান ও আসাদ প্রতিনিয়ত নগরীতে বিভিম্ন অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে কৌশলী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ দু’জনের মতো মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বাফুফের সদস্য মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিমও।

এ ছাড়া নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আজাদের পক্ষে এরই মধ্যে নগরীতে নানামুখী প্রচারণা শুরু হয়েছে।

দীর্ঘদিন পর বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র পদে বিজয়ী হলেও আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে বিএনপির আরও চার নেতার চালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে আরিফুল হককে। তাদের মধ্যে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম গত শনিবার নগরীর শাহি ঈদগাহে এক অনুষ্ঠানে মেয়র পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।

স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে বৃহত্তর শাহি ঈদগাহের মুরব্বি ও যুবসমাজের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন ঘোষণা দেন ১৯৯৫ সালে তৎকালীন সিলেট পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সেলিম। তিনি বলেন, বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করবেন।

এ ছাড়া সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী কয়েস ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম দলের মনোনয়ন চাইবেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় জড়িয়ে আইনি ঝামেলায় থাকা আরিফুল হকের বিকল্প হিসেবে অতীতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হকের নামও আলোচনায় রয়েছে। দলের বিভিম্ন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তাকে নির্বাচন করার ‘চাপ দিচ্ছেন’ বলে জানান গত নির্বাচনে দলের সমর্থনপ্রত্যাশী নাসিম।

মেয়র আরিফের সঙ্গে ‘ভারপ্রাপ্ত মেয়রের’ দায়িত্ব নিয়ে বিরোধে জড়ানো সিসিকের প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কাউন্সিলর হিসেবে অর্জিত অভিজ্ঞতা ‘বড় পরিসরে’ কাজে লাগাতে চান বলে জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই ১০ নেতার বাইরে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়তে চান তৎকালীন সিলেট পৌরসভার কমিশনার আবদুস সামাদ নজরুল। সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নজরুল সমকালকে বলেন, বিএনপির আরিফ ও আওয়ামী লীগের কামরানের বাইরে নগরবাসী তৃতীয় একজনকে মেয়র হিসেবে দেখতে চায়।

এমন অবস্থায় জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে অবশ্যই নির্বাচন করব। এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির আর কেউ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেননি জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি, পার্টির পক্ষ থেকে সুযোগ দেওয়া হবে আমাকে।