সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, শতাধিক স্কুল বন্ধ

0
879
blank
blank

সুনামগঞ্জ: ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে জেলার আটটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলার সড়ক, ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে জেলার শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে আটটি বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার। এই দুই উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় পাহাড়ি ঢলে এখানে সড়ক ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ উপজেলার পুরোটাই বন্যাকবলিত। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যেগুলোতে পানি ওঠেনি, সেগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু কিছু স্কুলে বন্যাকবলিত লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। এই মুহূর্তে মানুষের শুকনো খাবার প্রয়োজন। তাঁরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন।

এ উপজেলার মারাল গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, তাহিরপুরে গত ২০ বছরের মধ্যে উজান থেকে এত ব্যাপক পরিমাণে ঢল নামেনি। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মানুষজন অসহায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রশাসন বন্যা হয়নি বলে ঢিলেমি করছে।

একইভাবে জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মানুষজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

জেলার দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জ, ধরমপাশা ও ছাতক উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান জানান, জেলার আটটি উপজেলার ২০০ শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ১০১টি বিদ্যালয়ে পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে। অবস্থার উন্নতি হলে আবার পাঠদান শুরু হবে।

জিল্লুর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমে হাওর এলাকায় এমনিতেই শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। যেহেতু এখন বন্যা, তাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা কোনো স্কুল প্লাবিত হলে বা শিক্ষার্থীদের জন্য ঝুঁকি মনে করলে, সেটির পাঠদান স্থগিত করতে পারবেন।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ‘বন্যার পানিতে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। আমরা সেগুলোর খোঁজ নিচ্ছি।’

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল বুধবার এ সময় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১৬ হাজার পরিবারের ৮০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেছেন, জেলায় নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কেউ চাইলে সেখানে যেতে পারবেন। একই সঙ্গে বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া আছে।