সুনামগঞ্জে সরকারী ত্রাণ নিয়ে বেসামাল দুর্নীতি, অভিযোগের পাহাড়

0
976
blank
blank

[yop_poll id=”-3″]সুনামগঞ্জে ফসল হারা কৃষকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা কিছু কিছু বাস্তবায়ন হলেও অনেকটা ঝুলে আছে। ভিজিএফ এর তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের মাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। দলবাজি স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন তালিকা প্রণয়নকারীরা। তালিকা প্রণনয়নের ক্ষেত্রে তারা নিজ দলের কর্মী সমর্থকদের গুরুত্ব দিচ্ছেন। এছাড়া তালিকা প্রণয়নে অবৈধ লেনদেনেরও অভিযোগ ওঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। ফলে ত্রাণ বিতরনে অনিয়ম রুখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা খুব বেশি কাজে লাগছে না বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। কোন কোন ক্ষেত্রে দৃৃশ্যমান শাস্তি দেয়ার পরও অনিয়ম কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। ত্রাণ বিতরণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার সঠিক বাস্তবায়ন চান হাওর পারের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। এ আশায় বুক বেঁধে প্রহর গুনছেন তারা। গত ৩০ এপ্রিল সুনামগঞ্জের কৃষকদের দুর্দশার চিত্র দেখতে হাওর এলাকা পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরিদর্শন শেষে শাল্লায় ফসল হারা কৃষকদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কালে প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের বাঁচাতে বেশ কিছু গঠনমূলক ঘোষনা প্রদান করেন। বিশেষ করে কৃষি ব্যাংকের সুদের অর্ধেক টাকা মওকুফ করে নতুন ঋণ সহায়তা প্রদান, গৃহহীনে গৃহনির্মাণ, ইউনিয়ন পর্যায়ে ভিজিএফ এর ডিলার বাড়ানো, গোখাদ্যে সহায়তা, এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধের আশ্বাস ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। চলমান এসব সহায়তায়র মধ্যে দেখা গেছে ভিজিএফ এর ডিলার ইউনিয়ন পর্যায়ে বাড়ানো হলেও চালের পরিমান পূর্বের চেয়ে ২৬ টন কমে গেছে। উঠে গেছে আটা ও ফেয়ারপ্রাইস কর্মসূচি। সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তির নাম স্থান পাচ্ছে ভিজিএফ তালিকায়। বয়স্ক ভাতা, ভিজিএফ, ভিজিডি ভাতা পান এমন লোকও নতুন ভিজিএফ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ তালিকায় চেয়ারম্যান মেম্বারের স্বার্থ নিহিত রয়েছে সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে অভিযোগের ফাইল জমা হলেও দৃশ্যমান কোন শাস্তি প্রদান করা হচ্ছেনা। স্বাভাবিক ভাবেই অনেকেই ভাবছেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা পাত্তা দিচ্ছেন না কর্তাব্যক্তিরা। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ওএম এস চাল নিতে প্রতিদিন একই ব্যক্তি লাইনে দাঁড়াচ্ছে। এরা ১৫ টাকা কেজিতে কিনে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রয় করছে। হাওর অঞ্চলের অনেক হোটেলে ভিজিএফএর চালের ভাত মিলছে। নিদিরচর গ্রামের চাঁন মিয়া জানান, যে ত্রাণ পায় সে সব সময় পায়। আমরা পাইনা। এখন আর লাইনে যাইনা। গরিবের পক্ষে আল্লাহ আছেন।

গো-খাদ্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার ২০-২২ দিন পরে বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। কৃষি ব্যাংকের সুদের অর্ধেকটা প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিলেও এতে স্বস্তিবোধ করেননি কৃষকরা। পুরোদমে সুদ মওকুফ চান কৃষকেরা। তবে প্রধানমন্ত্রী নতুন কৃষিঋণ প্রদানের ঘোষনা দিলেও এখনও কৃষিঋণ সহায়তা পাচ্ছে না হাওর পাড়ের কৃষক। প্রতিদিন ফসল হারা কৃষক ব্যাংকের সামনে ভীড় করছেন। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সরদারপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ জানান, কৃষিঋণ চেয়ে আবেদন করেছি। এখনও ঋণ পাইনি। ব্যাংক কর্মকর্তারা শুধু আশ্বাস দিচ্ছেন। কৃষি ব্যাংকের জেলার ডিজিএম অজয় কুমার সাহা জানান, বোরো কৃষি ঋণ বিতরণের সময় এখনও আসেনি। তবে আমন চাষে কৃষিঋণ সহায়তা চলমান আছে। এদিকে এনজিও ঋণের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এনজিও ব্যুারোর সাথে আলোচনা করে ঋণ আদায় বন্ধের তাগিদ দেবেন মর্মে ঘোষনা দেন। ঘোষনার পর পিকেএসএফ এনজিও ঋণ আদায় বন্ধের ঘোষনা দেন। কিন্তু এনজিও গুলো নির্দেশ না মেনে ঋণ আদায় করতে চাপ দিচ্ছে গ্রাহকদের। এমন কি ঋণ আদায়ে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা বাড়িবাড়ি গিয়ে খাদ্য সহায়তা ও নতুন ঋণের লোভ দেখাচ্ছেন। অনেকে ঋণের চাপে এলাকা ছাড়া হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অপর দিকে প্রধানমন্ত্রী একটি মানুষও গৃহহারা হয়ে থাকবেনা বলে ঘোষনা দিলেও হাওর পারের অসংখ্য কৃষক গৃহহারা হয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন। তবে ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ২৩০ বান্ডিল ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে বলে জেলার ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, গৃহনির্মাণের প্রকল্প বিষয়ে আমার জানা নেই। এব্যাপারে আমার কাছে কোন নির্দেশনা আসেনি। তবে আমি যতটুকু জানি এ প্রকল্পটি ভূমি অফিস হয়ে বাস্থবায়ন হতে পারে। হাওর পারের গৃহহারা কয়েকজন ব্যক্তি জানান, আমাদের গৃহনির্মাণে সরকার কোন পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা জানিনা। তবে আমরা প্রধানমন্ত্রীর গৃহনির্মাণের ঘোষনায় বিশ্বাসী হয়ে আশায় বুক বেঁধে আছি। প্রধানমন্ত্রীর গৃহনির্মাণের ঘোষনা এখনও আলোর মুখ দেখিনি। হাওর পাড়ের কৃষকেরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি ঘোষনার সঠিক বাস্থবায়ন চান। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি কবি ইকবাল কাগজী জানান, ভিজিএফ তালিকায় অনিয়মের কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখা যাচ্ছে না। এতে করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা মাঠপর্যায়ে প্রতিফলিত হচ্ছে না। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি ঘোষনার সঠিক বাস্থবায়ন চান। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ জানান, গৃহনির্মাণ ও এনজিও ঋণ বন্ধের পদক্ষেপ না নিলে হাওর পাড়ের কৃষকদের ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেনা। এছাড়াও তিনি এনজিও ঋণ বন্ধের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান।