সুনামগঞ্জ-২ আসনের উপ-নির্বাচনে নৌকা ও সিংহের লড়াই জমে উঠেছে

0
837
blank

কে এম শহীদুল ইসলাম: প্রতিক বরাদ্দের পর থেকেই সুনামগঞ্জ-২ আসনের উপ-নির্বাচনে নৌকা-সিংহের লড়াই জমে উঠেছে। দিন যতই যাচ্ছে সিংহের সমর্থন ততই বাড়ছে। যদিও আসনটিতে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ৮ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু কাংখিত উন্নয়ন না হওয়ায় ভোটররা নানান ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সুরঞ্জিত বাবু ছিলেন একজন জাতীয় নেতা। সরকার দলীয় এমপি হলেও রাস্তাঘাটের বেহাল দশায় সাধারন ভোটাররা নাখোশ। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শুন্য আসনে তাঁর স্ত্রী ড.জয়া সেনগুপ্তাকে নৌকা প্রতিক দিয়ে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় সুরঞ্জিতসেন গুপ্তের প্রতিপক্ষরা জিমিয়ে পড়েছে।
অপর দিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছায়েদ আলী মাহবুবু হোসেন রেজু’র সিংহ প্রতিকের পক্ষেই কাজ করছেন। ফলে নৌকা ও সিংহের তুমুল লড়াইয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। এ ছাড়াও আ’লীগের একটি বড় অংশ ও বিএনপিসহ ২০দলীয় জোটের ভোট নৌকায় না দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে দেয়ার সম্ভাবনা বেশী। আ’লীগের কোন কোন নেতা দলীয় চাপে জয়াসেনগুপ্তের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিলেও ভোট কাকে দিবেন সেটা বলা মুশকিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আ’লীগের একজন নেতা জানান, জয়া সেনগুপ্তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় আ’লীগের একটি বড় অংশ বুকে চাপা আগুন নিয়ে এগুচ্ছেন। তারা যদি জয়া সেন গুপ্তের বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষাবলম্বন করেন। তাহলে রেজাল্ট উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। আর জয়া সেনগুপ্তা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সাথে সুসর্ম্পক স্থাপন করতে পারেননি চাকুরী করার কারনেই। সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনাও কম নয়। রাজাপুর গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, বার বার বাবুকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি কিন্তু রাস্তাঘাটের এই অবস্থা কেন? আর জয়াসেন গুপ্তা নির্বাচিত হলেও তাকে এলাকায় দেখা পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়বে কারণ তিনি ঢাকায় চাকুরী করে আয়েশি জীবন যাপন করেছেন। তিনি এমপি হলে আমাদের কোন উন্নয়ন হবে না। তাই যিনি আমাদের সুখে দুখে পাশে থাকবেন তাকেই ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করব।
চন্ডিপুরের খলিলুর রহমান জানান, সেন দা আমাদের পৌরসভার কোন উন্নয়নই করেননি। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, নামে পৌরসভা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টো আমাদের উপর করের বোঝা চাপানো হয়েছে। আধুনিক নাগরিক সুবিধা বলতে কিছুই পাচ্ছি না। দিরাই মদনপুর রাস্তার বেহাল দশার কারণে জরুরী প্রয়োজনে একজন রোগী নিয়ে সিলেট কিংবা সুনামগঞ্জে যেতে হলে ভাঙ্গা রাস্তায় পথেই রোগী মৃত্যু হয়। শাল্লা আটগাওয়ের বাসিন্দা ও ভোটার রজব আলী জানান, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সুরঞ্জিত দা আমাদের উন্নয়নে তেমন কোন কাজ করেন নি। তিনি সংসদে বড় বড় কথাই বলেছেন, নিজের এলাকার কোন উন্নয়ণ করেন নাই। এইবার উনার স্ত্রী এমপি হওয়ার জন্য ভোটে দাড়িয়েছেন। আমরা বুঝে শুনে ভোট দিব। যিনি আমাদের উন্নয়নে সুখে দুখে সব সময় পাশে থাকবেন তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব। মার্কা ও আভিজাত্য দেখে নয় সত্যিকার অর্থে ভালো মানুষ দেখেই ভোট দিতে চাই। সাকিতপুর গ্রামের আব্দুল আওয়াল জানান, মার্কা টার্কা বুঝি না। নৌকা প্রতিক নিয়ে সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী জয়া সেন গুপ্তা প্রার্থী হয়েছেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কুয়েত প্রবাসী রেজু ভাই সিংহ মার্কা নিয়ে। রেজু ভাই দীর্ঘ দিন কুয়েতে ব্যবসা বানিজ্য করেছেন পাশাপাশি আমাদের এলাকার অনেক দরিদ্র পরিবারের ছেলেদের কুয়েত নিয়ে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। তাকে আমরা ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করতে পারলে আশা করি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে পারবেন।
এ ব্যাপারে নৌকার প্রার্থী জয়াসেন গুপ্তা বলেন, দিরাই শাল্লা মানুষ আমাকেই ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করবেন কারণ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে অন্তর থেকে ভাল বাসেন বিধায় তার অসম্পূর্ন কাজ সম্পুর্ন করতে আমাকেই নির্বাচিত করবেন।
এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেন রেজু বলেন, দিরাই শাল্লার মানুষ বিগত ৫০ বছর ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত আছে। সরকার দলীয় প্রভাবশালী এমপি হয়েও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ঘটাতে পারেননি। তারঁ স্ত্রী এমপি নির্বাচিত হলেও কিভাবে উন্নয়ন ঘটাবেন? আমি দিরাই শাল্লার সাধারন মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতেই উপ-নির্বাচনে সিংহ মার্কায় প্রার্থী হয়েছি। দলমত নির্বিশেষে অবশ্যই আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন এবং উন্নয়ন করার সুযোগ দিবেন।