স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সুনামগঞ্জের লাখ লাখ মানুষ: চার বছর ধরে বন্ধ আর্সেনিক নির্ণয় পরীক্ষা

0
429
blank
blank

নাঈম তালুকদার, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে জেলায় সরকারিভাবে চার বছর ধরে নলকূপে আর্সেনিক নির্ণয় পরীক্ষা করা হয় না। আর ব্যক্তিপর্যায়ে এক যুগ ধরে বন্ধ আর্সেনিক নির্ণয় পরীক্ষা। আর্সেনিক নির্ণয় পরীক্ষা বন্ধ থাকায় লাখ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে শরীরে ক্যান্সারসহ নানা রোগব্যাধি দেখা দিতে পারে। সর্বশেষ ২০০২ সালে জেলাব্যাপী নলকূপে আর্সেনিক নির্ণয় পরীক্ষা চালিয়েছিল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সে সময় জেলায় সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত মাত্র ১৩.৫০ ভাগ নলকূপে আর্সেনিক পাওয়া যায়। তবে অধিদপ্তর ধারণা করছে, বর্তমানে জেলায় ৪০ভাগ নলকূপে আর্সেনিক আছে।

সুনামগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় সরকারি পর্যায়ে স্থাপিত নলকূপের সংখ্যা ২০ হাজার ৩৭৬টি। বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত নলকূপের সংখ্যা ২১ হাজার ৯৯২টি। মোট নলকূপের সংখ্যা ৪২ হাজার ৩৬৮টি। এর মধ্যে ছাতক উপজেলায় নলকূপের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১০ হাজার ৫০০টি নলকূপ রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে সর্বশেষ ২০০২ সালে জেলায় নলকূপে আর্সেনিক নির্ণয় পরীক্ষা হয়েছিল। সে সময় জেলায় ১৩.৫০ ভাগ নলকূপে আর্সেনিক পাওয়া যায়। তাছাড়া সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৪.১৮, ছাতক উপজেলায় ১১.৮, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১৬.৫৯, জগন্নাথপুর উপজেলায় ০.৩, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ০.৬৬, তাহিরপুর উপজেলায় ০.৫, দিরাই উপজেলায় ২.৩০, শাল্লা উপজেলায় ১.৮, ধর্মপাশা উপজেলায় ৩৯.৩৩, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৯.৭৯ভাগ নলকূপ আর্সেনিক আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ১৮.১৮ ভাগ নলকূপে আর্সেনিক আছে বলে নিশ্চিত হয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক ধর্মপাশা উপজেলায়। এই উপজেলায় ৩ হাজার ৫৩৭টি নলকূপের মধ্যে ১ হাজার ২৮২টি নলকূপে আর্সেনিক পাওয়া যায়। জগন্নাথপুর উপজেলায় সবচেয়ে কম নলকূপে আর্সেনিক পাওয়া যায়। এই উপজেলায় ৪ হাজার ২৩০টি নলকূপের মধ্যে মাত্র ৩টি নলকূপে আর্সেনিক পাওয়া যায়। এদিকে আর্সেনিক নির্ণয় পরীক্ষা বন্ধ থাকায় সুনামগঞ্জের লাখ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে আছেন। না জেনে, না বুঝে অনেকে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে রোগাক্রান্ত হচ্ছেন।

এছাড়া অধিকাংশ নলকূপে লাল-সবুজ রঙ দেয়া প্রলেপ না থাকায় আর্সেনিক সম্পর্কে ধারণাই পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। শহরতলির ইব্রাহিমপুর গ্রামের সেরুল আহমদ বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে আমাদের গ্রামে আর্সেনিক পরীক্ষা হয়েছিল। গ্রামে অনেক নতুন নলকূপ বসলেও কেউ আর্সেনিক পরীক্ষা করতে আসেনি। শহরের জামতলা এলাকার সাজ্জাদ হোসেন নাহিদ বলেন, নলকূপে লাল-সবুজ রঙ প্রলেপ দেয়া নাই। আমরা কি করে বুঝবো কোনটাতে আর্সেনিক আছে, আর কোনটাতে নাই? জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, নলকূপে আর্সেনিক নির্ণয় পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বর্তমানে জেলার তিনটি ইউনিয়নের আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকায় বিশেষ প্রকল্পের কাজ চলছে। তিনটি ইউনিয়নে এরআরপি (আর্সেনিক, আয়রন রিমোভাল প্ল্যান্ট) প্রজেক্ট চলছে। ইউনিয়ন তিনটি হল- সদর উপজেলার রঙ্গারচর, ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ও উত্তর বংশিকুন্ডা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় এক যুগ আগে পরীক্ষা চালিয়ে জেলায় শতকরা প্রায় ১৪ভাগ নলকূপে আর্সেনিক পাওয়া যায়। বর্তমানে আমরা আশঙ্কা করছি ৩৫-৪০ ভাগ নলকূপে আর্সেনিক আছে। সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, সুনামগঞ্জের অনেক এলাকায় আর্সেনিক রোগী আছেন। আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে শরীরে ক্যান্সারসহ নানা রোগব্যাধি দেখা দিতে পারে। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, সরকারি পর্যায়ে আর্সেনিক নির্ণয় পরীক্ষা কয়েক বছর ধরে বন্ধ আছে। তবে যে কেউ ব্যক্তিপর্যায়ে আমাদের কাছে আসলে নলকূপের আর্সেনিক নির্ণয় পরীক্ষা করাতে পারবেন।