৭০০ ফেসবুক আইডি নজরদারিতে

0
825
blank
blank

পিয়াজের পর হঠাৎ লবণের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় জনমনে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। দেশে লবনের মজুত থাকার পরও কেন হঠাৎ এভাবে দাম বাড়লো তা তদন্তে মাঠে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে, এটা একটা ‘গুজব’। এই গুজব প্রথমে ছড়ানো হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে। এরপর আস্তে আস্তে সেটি বিভিন্নজনের কাছে ছড়িয়ে পড়ে। বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। দোকানে দোকানে লবণের কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে লবণের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লঙ্কাকাণ্ড সৃষ্টি করেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের আইসিটি শাখা এবং র‌্যাব ও ডিএমপির সাইবার ক্রাইম সেল গুজব সৃষ্টিকারী প্রায় ৭০০ ফেসবুক আইডি শনাক্ত করেছে।

ওই আইডিগুলো গত ১৮ নভেম্বর থেকে লবনের দাম বৃদ্ধি পাবে বলে পোস্ট দেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাদের পোস্ট দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হয়ে পোস্ট দেয়। এতে দ্রুত গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে এবং ছেলে ধরা বলে ফেসবুকের আইডি থেকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ওই গুজব দুবাই থেকে এক তরুণ ছড়িয়েছিল বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তদন্তকারীরা বলছেন, লবনের গুজব বিদেশ থেকে নয়, এবার দেশ থেকেই একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে ছড়িয়েছে। মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দারা তাদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা সংগ্রহ করছেন। তদন্তের স্বার্থে তাদের আইডিগুলো বিটিআরসির মাধ্যমে বন্ধ করা হয়নি। ভবিষ্যতে কোন চক্র যাতে আবারও গুজব ছড়িয়ে পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকেও নজর রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দপ্তর ও র‌্যাব সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড প্লানিং) এসএম রুহুল আমিন গতকাল মানবজমিনকে জানান, ‘একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্যের অপপ্রচার ও গুজব চালিয়ে পরিবেশকে অস্থিতিশলী করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ আর কেউ না করতে পারে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের আইসিটি শাখা ও র‌্যাবের সাইবার ক্রাইম সেল শাখা সূত্রে জানা গেছে, পিয়াজের আমদানি কমে যাওয়ার কারণে হঠাৎ মূল্য বাড়ে। কিন্তু, হঠাৎ লবনের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। বাজার নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে মাঠে নামানো হয়। টিসিবিসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তদারকির নির্দেশ দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। তারা মাঠ পর্যায়ে বিষয়টি তদন্ত করতে শুরু করেন। সূত্র জানায়, তদন্তে সাময়িকভাবে তারা জানতে পেরেছেন যে, লবনের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি একটি গুজব। একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবে লবনের দাম বেড়ে গেছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়িয়েছে। প্রায় ৭০০ আইডি থেকে ওই গুজব ছড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর ও র‌্যাবের সাইবার ক্রাইম সেল সনাক্ত করেছে।

সূত্র জানায়, আইডিগুলো পরীক্ষা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যে, যারা ওই গুজব ছড়িয়েছে তাদের ৮০ শতাংশ তরুন। তবে কিছু ভুয়া আইডি থেকে ওই গুজব ছড়ানো হয়েছে। ওই ভুয়া আইডিগুলোর স্ট্যাটাস প্রদানকারী ব্যক্তিরা দেশে না বিদেশে অবস্থান করছেন তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। ৭০০ আইডির মধ্যে অর্ধেকই অপরের পোস্ট কপি করেছেন। তা আস্তে আস্তে সারা বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে ভাইরাল হয়ে যায়। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুজন নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডিতে প্রাইভেট জব হোল্ডার নামে নিজেকে দাবি করে একটি পোস্ট দিয়েছেন। ফেসবুকে তার জেলা লেখা আছে মুন্সিগঞ্জ। গত ১৮ নভেম্বর সকালে তিনি পোস্ট দিয়েছেন ‘ওহ বড় কষ্ট’ লবনের মূল্য এখন ১৫০ টাকা। কই যামু’। তার দেখাদেখি একাধিক ব্যক্তি এমন পোস্ট দিয়েছেন। তাকে চিহ্নিত করেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।