৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি: রিজভী

0
969
blank

ঢাকা: ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস পালনের জন্য রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। এ জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেইসাথে দিবসটি পালনে ঢাকা ব্যতীত সারাদেশের জেলা ও মহানগরের কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।
এদিকে আশুলিয়ায় গার্মেন্ট শ্রমকিদের বেতন বৃদ্ধির দাবিকে অত্যন্ত যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে সরকারকে আালোচনার মাধ্যমে সেই দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা ছাড়া সারাদেশে জেলা-উপজেলায় কালো পতাকা মিছিল এবং কালো ব্যাজ ধারণ করবে নেতাকর্মীরা। এ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ৭ জানুয়ারি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশের জন্য আমরা ইতোমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি এবং প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচন বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। আগামী বছর ৫ জানুয়ারি তিন বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। প্রথম বছর পূর্তি পালন করতে গিয়ে বিএনপির চেয়রাপারসন খালেদা জিয়া গুলশানের রাজনৈতিক কার্যলয়ে টানা ৯২ দিন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দ্বিতীয় বছর ৫ জানুয়ারি রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে দলটি।
আজ সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিনা ভোটের অবৈধ সরকার তাদের নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখতে গিয়ে শুধু মুষ্টিমেয় কিছু লোকের বেতন বৃদ্ধি করায় গোটা সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সব ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এছাড়াও নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, বাসা বাড়ির ভাড়া বৃদ্ধিসহ মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি, আধা সরকারি, গার্মেন্টস শ্রমিক, শ্রমজীবিসহ সাধারণ মানুষের বর্তমানে ত্রাহি অবস্থা।
তিনি বলেন, এক অনতিক্রান্ত শৃঙ্খলের বেড়াজালে গোটা রাষ্ট্রকে আটকে রাখা হয়েছে। মুক্তির করুণ কাকুতি আজ চারিদিকে ঝংকৃত হয়ে ওঠেছে। তাই বর্তমানে জোর করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় চেপে বসা স্বৈরাচারের ভয়াবহ ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে দেশের মানুষকে আজ দৃঢ় পদে অগ্রসর হতে হবে।
গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, শ্রমিকদের যৌক্তক দাবি মেনে না নিয়ে পেশী শক্তি প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান হবে না। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি পোশাক মালিক ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন। শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করে নিরপরাধ শ্রমিকদের কাজে যোগদানের ব্যবস্থা করুন।
রিজভী বলেন, আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার, হয়রানী ও নির্যাতন চলছে। ইতোমধ্যে সাভার উপজেলার বিএনপি মনোনীত নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিনিসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন সাংবাদিককে আটক করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে সাবেক এমপি ও ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান মোঃ সালাউদ্দিনসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে আটককৃত নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবি করছি।
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের হার ও বীভৎসতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও নারী ও শিশু ধর্ষিতা হচ্ছেন, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, এমনকি ধর্ষণ বা গণধর্ষনের পর তাদের হত্যা করা হচ্ছে। এর বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের হাতে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গত এক বছরে প্রায় তিনশ’জন নারী নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে পাঁচ শতাধিক। এক বছরে নারী নির্যাতন বেড়েছে ৭৪%। বেড়েছে গণধর্ষণের ঘটনা।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনাসহ মোট পাঁচ হাজার নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার দেড় শতাধিক এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে প্রায় ৫০ জনকে। এছাড়াও শিশু অপহরণ ও হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে। শিশু অপহরণের পর অনেক ক্ষেত্রেই মুক্তিপণ দাবি করা হয়। প্রায় সময়ই টাকা দিয়েও শিশু হত্যা ঠেকানো যাচ্ছে না। এমনিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ অবনতির ফলে খুন খারাপি বেড়ে গেছে। তারওপর নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় গোটা নারী সমাজ আজ উদ্বিগ্ন।
রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার নারী শিশুদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। মানুষের কোথাও কোনো আজ নিরাপত্তা নেই। পুলিশ নির্ভর অবৈধ সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে তাদেরকে বিরোধী দল দলনের জন্য ব্যবহার করায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকার বেআইনি সরকার বলেই নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা দিতে পারে না। কারণ এরাই সৃষ্টি করেছে দেশে বিচার হীনতার সংস্কৃতি। সে কারণে বীভৎস্য অপকর্মে রাষ্ট্র-সমাজে প্রচণ্ড আবর্ত সৃষ্টি করেছে দুস্কৃতিকারীরা।
জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আরো একটি একতা জেলা পরিষদ নিবার্চন। সম্পূর্ণ অবৈধ, অসাংবিধানিক ও বেআইনী এ নিবার্চন জনগণের সাথে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না। কারণ সংবিধানে পরিস্কার বলা হয়েছে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে এ প্রক্রিয়া জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পূর্ন অবৈধ বলে এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট বহাল থাকলে জনবিচ্ছিন্ন সরকার গায়ের জোরে আইয়ুব মডেলে একটি নির্বাচন সম্পূর্ণ করতে যাচ্ছে।