রাজনীতির এপিঠ ওপিঠ : পর্ব-১

0
1445
blank

জুয়েল আহমদ: আওয়ামী লীগ থেকে টানা তৃতীয়বার নির্বাচিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ এম এ মান্নান এবার পরিকল্পনামন্ত্রী হয়েছেন। এর আগে তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

১৯৪৬ সালে সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এম এ মান্নান। তিনি গ্রামের স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং সারগোদায় অবস্থিত পাকিস্তান এয়ারফোর্স স্কুল থেকে ও লেভেল সমাপ্ত করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৪ সালে তদানীন্তন সিএসপি ক্যাডারে যোগদান করেন।

এম এ মান্নান ২০০৫ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি পাবলিক অ্যাকাউন্টস সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বিবাহিত, তার স্ত্রী জুলেখা মান্নান ঢাকা হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজের একজন শিক্ষিকা। তার মেয়ে সারাহ্ আফরিন মান্নান একজন চিকিৎসক। তিনি স্বামীর সঙ্গে আমেরিকায় বসবাস করছেন। তার ছেলে শাদাত মান্নান ব্রিটেনে অবস্থিত বার্কলেইস ক্যাপিটাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং লন্ডনে বসবাস করছেন। তাছাড়া মান্নান ডেভেলপমেন্ট লিটারেচার এ আগ্রহী এবং বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের কল্যাণে কাজ করছেন।

সর্বশেষ ২০১৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০৫ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এমএ মান্নান।

২০০৬ এর জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেয়া হয় তাকে। ওই সময় ৩০০ আসনেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেন।

২০০৮ সালে আবার আওয়ামী লীগ নির্বাচনে গেলে এমএ মান্নানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিশাল ভোটের ব্যবধানে ওই নির্বাচনে জয়ী হন তিনি।

২০০৯ সালে দলের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয় এমএ মান্নানকে। ওই বছরেই প্রতিরক্ষা, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটিতে যুক্ত করাসহ সরকারের ৩ বছরের মাথায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় তাঁকে।

৩ বছর পর আরেকবার দলের কাউন্সিলে তাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাখা হয়।

সুনামের সঙ্গে দলীয় প্রধানের দেয়া দায়িত্ব পালন করেন এমএ মান্নান।

২০১৪ সালের নির্বাচনে আবার দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় তাকে। ওই নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন সজ্জন এই রাজনীতিবিদ। নির্বাচনের পর প্রথমে তাকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী, এক মাসের মাথায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীরও দায়িত্ব দেয়া হয়। সরকারের ৫ বছরের শাসনামলে নিজের জেলায় আরও বেশি জনপ্রিয় হতে থাকেন তিনি।

অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমএ মান্নান তার প্রতিদ্বন্দ্বী জমীয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ ও ২০ দলীয় জোট মনোনীত প্রার্থী শাহীনূর পাশা চৌধুরীর চেয়ে এক লাখ ১০ হাজার ২২৪ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে এমএ মান্নান পেয়েছেন এক লাখ ৬৩ হাজার ১৪৯ ভোট। এম এ মান্নানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি তিন বারের সংসদ সদস্য। কখনোই তিনি কোন আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা যেটা করেন মনোনয়ন বাণিজ্য, পদ-পদবী বিতরণের কথা বলে বিপুল অর্থ দলীয় সভাপতির ফাণ্ডে জমা দেওয়ার নামে নিজের আখের গোচান যেটা অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মধ্যেই দেখা যায় সেই কাজ এম এ মান্নান কখনও করেননি। এম এ মান্নান তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনই নিজেকে কোন আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেননি। এজন্যই তিনি তাঁর রাজনৈতিক ব্যাপারে অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং স্পষ্টবাদী হতে পেরেছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

রাজনীতি মানেই হলো মিথ্যে আশ্বাস বা প্রলোভন দিয়ে মানুষকে ঠ’কানো- এরকম একটা ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল রয়েছে। কিন্তু এম এ মান্নান হলেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। এম এ মান্নান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কাউকে মিথ্যে আশ্বাস দেননি। কাউকে প্রলোভনও দেননি তিনি। মিথ্যে আশ্বাস, যেমন- একজন কেউ মনোনয়ন চাইতে গেল, তাকে মিথ্যে আশ্বাস দেওয়া হলো ঠিক আছে মনোনয়ন দেওয়া হবে; কিংবা এই কাজটি করলে তোমাকে এটা দেওয়া হবে- এ ধরনের প্রলোভন বা মিথ্যে আশ্বাস এম এ মান্নান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কখনো দেননি।

এম এ মান্নানের জন্য সামান্য যারা উপকার করেন তিনি তাদের সবসময় মনে রাখেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে তিনি কাপর্ণ্য করেন না। কেউ একচুল করলে তার জন্য নিজের সবকিছু উজাড় করে দিতেও এম এ মান্নান কার্পণ্য করেন না। – চলমান