পাহাড় ধসে চার সেনাসদস্যসহ শতাধিক নিহত

0
510
blank
blank

চট্টগ্রাম: স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসে চার সেনাসদস্যসহ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ। পাহাড়ধসে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের সঙ্গে তিন জেলার সড়ক যোগাযোগ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎব্যবস্থা। ধ্বংস হয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ঘটনার পর থেকে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় উদ্ধার তৎপরতায় বিঘ্ন হচ্ছে বলে উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন। গতকাল বিকালে সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকও ঘটনাস্থলে যান।
দুদিনের টানা বর্ষণের ধারাবাহিকতায় সোমবার দিবাগত রাতে রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। টানা বৃষ্টির কারণে গতকাল সকালেও কিছু এলাকায় পাহাড়ধসে পড়ে। সকালে পাহাড়ধসে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সড়কে উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে মাটিচাপা পড়েন সেনা সদস্যরা। সেখানে দুই কর্মকর্তাসহ চারজন মারা যান। আহত হন ১০। তাদের পাঁচজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আনা হয়েছে। রাঙ্গামাটি সদর, কাউখালী, কাপ্তাই জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশি ধসের ঘটনা ঘটেছে। তিন জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত চার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পাহাড়ধসে হতাহতের ঘটনায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করেছেন।
এর আগে ২০০৭ সালের ১১ই জুন চট্টগ্রামের সাতটি স্থানে মাটিচাপায় ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৮ সালের ১৮ই আগস্ট চট্টগ্রামের লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড়ধসে চার পরিবারের ১২ জনের মৃত্যু হয়। ২০১১ সালের ১লা জুলাই চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকার বাটালি হিলের ঢালে পাহাড় ও প্রতিরক্ষা দেয়ালধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ২৬ ও ২৭ জুন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও সিলেটে ৯৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৫ সালে টানা বর্ষণ, ধস আর পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে ১৯ জনের মৃত্যু হয়।
বিপর্যস্ত রাঙ্গামাটি: পাহাড়ধসের ঘটনায় ভেঙে পড়েছে জেলার সড়ক যোগাযোগ। জেলা শহরের সঙ্গে সব জেলা এবং উপজেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে । জেলার কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, নেই অধিকাংশ মোবাইল নেটওয়ার্কও। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে জেলায় শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে বিপর্যস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জেলায় অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাঙ্গামাটি সদরে ২৪, কাউখালীতে ১৫, কাপ্তাইয়ে ৯, বিলাইছড়িতে ২ ও জুরাছড়িতে ২ জন মারা গেছেন বলে স্থানীয়রা তথ্য দিয়েছেন। নিহত সেনাসদস্যরা হলেন মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, করপোরাল আজীজ ও সৈনিক শাহীন। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পাহাড়ধসে রাঙ্গামাটি সদরের শিমুলতলী, ভেদভেদি, মানিকছড়ি এলাকায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া কাউখালীতে ১৫, কাপ্তাইয়ে ৯, বিলাইছড়ি ২ জুরাছড়ি ২ জন রয়েছে। জেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে নিহতদের পরিবার প্রতি ২০ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা ছাড়া ৩ কেজি করে চাউল প্রদান করেছে। কাউখালী থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানান, উপজেলার ঘিলাছড়িতে নিহত ৩ জন হলেন দবির হোসেন (৮৪) খোদেজা বেগম (৬৫), অজিফা খাতুন (৬০)। ঘাঘড়া ইউনিয়নে- নাসিমা বেগম (৬০) বৈশাখী চাকমা (১০), কলমপতি ইউনিয়নে লায়লা বেগম (২৮)। কাশখালী ইউনিয়নে ফাতেমা বেগম (৬০), মো. মনির (২৫) ও ইসহাক (৩৪)। বেতবুনিয় ইউনিয়নে অংকাচিং মারমা (৫১), আচে মারমা (৩৬), শ্যামা মারমা, (১২), ক্যাচাচিং মারমা (৭) ফটিকছড়ি ইউনিয়নে লাই প্রু মারমা (৪০) ও সুভাষ চাকমা (৩৫)। জুরাছড়িতে নিহতরা হলেন চিত্রলতা (৫৫), বিশ্বমনি চাকমা (৬)। কাপ্তাই উপজেলার নতুন বাজার, রাইখালী ও বড়ইছড়িতে পাহাড়েধসে ৯ জন মারা গেলেও তাদের নাম এ রিপোর্ট পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়িতে পাহাড়ধসে ৩ জন নিহত হয়েছে। রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার জানান, এ পর্যন্ত রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে ২১ জনের লাশ আনা হয়েছে। এদিকে ঘটনাস্থলগুলোয় এখনও ব্যাপক উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ সদস্যরা। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে জেলা প্রশাসন শহরে মাইকিং করছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জরুরি পর্যবেক্ষন সেল খোলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে ২৬ জনের মৃত্যু: চট্টগ্রাম জেলাতে ভয়াবহ পাহাড় ও দেয়ালধসে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে রাঙ্গুনিয়া উপজেলাতে ৪ পরিবারের ১৩ জনসহ ১৯ জন, চন্দনাইশে একই পরিবারের ৩ জনসহ ৪ জন, বাঁশখালীতে ১ জন ও নগরীতে ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও অতিবর্ষণে সোমবার রাত ও মঙ্গলবার সকালে এই পাহাড়ধসের এসব ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ রাত ৮টায় এই প্রতিবেদন তৈরি করার আগ পর্যন্ত নিহত ব্যক্তিদের নাম, ঠিকানা ও পরিচয় শনাক্ত করার কাজ করছিলেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা। তারা জানান, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বেশির ভাগ এলাকাতেই লাশ শনাক্ত করা গেলেও নাম ঠিকানা না জানার কারণে কে কোন পরিবারের সদস্য তা নিশ্চিত হতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখনো দুই উপজেলাতে মাটির নিচে আরো ১০-২০ জন চাপা রয়েছে। জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন গতকাল বিকালে বলেন, এখনো লাশের খবর পাচ্ছি। তাই নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পরিচয় জানা গেছে। বাকিদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ৩ জন শিশু নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি দুপুরের আগে। এখন আরও লাশ টেনে তোলা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত রোববার রাত থেকে চট্টগ্রামে প্রবল বেগে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রচুর বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম শহরেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। এই অবস্থায় এক দিন আগে সোমবার রাতে হঠাৎ করেই বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাত দেখা দেয় চট্টগ্রামের আকাশে। রাঙ্গুনিয়ার নিহত পরিবারের বাসিন্দারা জানান, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকায় পাহাড়ধসের হাত থেকে রেহাই পাননি এসব ব্যক্তি। নিহতদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন একই পরিবারের। যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন তারা বলেছেন মাটিচাপা পড়ায় কেউই সেখান থেকে বের হতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশের দুই উপজেলাতেই কেবল পাহাড়ধসের ঘটনায় মোট ২৩ জন নিহত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে দাফন-কাফনের জন্য প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হচ্ছে চালসহ বিভিন্ন সামগ্রী।’ পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙ্গুনিয়ার রাজানগরের ১নং ওয়ার্ডের বগাবিল গ্রামে আটজন ও ইসলামপুরের দুই নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়তলি ঘোনা এলাকায় ১১ জন নিহত হয়।
নিহত ১৯ জনের মধ্যে তিন পরিবারেরই রয়েছে ১৩ জন। এখনো নিখোঁজ রয়েছে এক পরিবারের তিনজনসহ মোট ছয়জন। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, রাজানগরের দিনমজুর নজরুল ইসলাম (৪০), তার স্ত্রী আসমা আক্তার বাচু (৩৫), ছেলে নানাইয়া (১৫), মেয়ে সাফিয়া আক্তার (৯) এবং একই এলাকার দিনমজুর মো. ইসমাইল (৩৭), তার স্ত্রী মনিরা আক্তার (২৬), দুই মেয়ে ইভা (৮) ও ইছা (৪) নিহত হয়েছে। ইসলামপুরের অপর ঘটনায় মইন্যারটেক এলাকার মো. সেলিমের ছেলে সুজন (৪২), তার স্ত্রী মুন্নি (৩১), মেয়ে জোসনা (১৮), শাহানু (১৬) ও ফালুমা (১৪) নিহত হয়েছে।
সুজনের এক বছরের মেয়ে মিম নিখোঁজ রয়েছে। একই এলাকায় হেজু মিয়ার স্ত্রী শেফালী বেগম, মো. হানিফের ছেলে মো. হোসেন, বাচ্চু মিয়ার ছেলে মো. পারভেজ, সিদ্দিকের স্ত্রী রিজিয়া বেগম, মফিজুর রহমানের মেয়ে মুনমুন আক্তার, মফিজের ছেলে হিরু মিয়া নিহত হন।
হোসনাবাদ ইউনিয়নের এক কিশোরী এবং কানুরখীলের আশীষ চৌধুরী পরিবারের মা, মেয়ে, ছেলেসহ তিনজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
চন্দনাইশে চলছে মাতম: স্থানীয় ধোপাছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ছনবন্যা ও শামুকছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছে। ধোপাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম জানান, অব্যাহত বর্ষণের কারণে তার ইউনিয়নের ছনবন্যা ও শামুকছড়ি এলাকায় একই পরিবারের তিনজন চারজন নিহত হয়েছে।
ছনবনিয়ায় নিহতরা হলো ম্যোকাইং ক্যায়াং (৫০), ম্যে ম্যাও ক্যায়াং (১৩) ও ক্যাওস্যা ক্যায়াং (৮)। এখানে আরো দুজন আহত হয়েছে। আহতরা হলো ছ্যান্যুও ক্যায়াং (১৮) ও ত্যেলাও ক্যাও ক্যায়াং (৩৫)। আহতদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শামুকছড়িতে নিহত শিশু হলো মাহিয়া (৩)। অবিরাম বর্ষণে পানি বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ কসাইপাড়া অংশ এবং কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের বাজালিয়া অংশ ডুবে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের সঙ্গে দুই পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান এবং কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পানি উঠায় মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজারের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে জানায় হাইওয়ে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশ রাউজান থানার ওসি আহসান হাবিব বলেন, রাউজান দাইয়ারঘাটা থেকে চড়া বটতল পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে চট্টগ্রামের সঙ্গে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
বান্দরবানে শিশুসহ নিহত ৭: বান্দরবানে প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে পৃথক ঘটনায় শিশু-মা-মেয়েসহ অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে শহরের কালাঘাটা ও লেমুঝিরি এবং আগাপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো শহরের লেমুঝিরি জেলেপাড়া এলাকার আবদুল আজিজের স্ত্রী কামরুন্নাহার বেগম (৩৫), তার মেয়ে সুখিয়া বেগম (৮), কালাঘাটা এলাকার রেভা ত্রিপুরা (২২), লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকার একই পরিবারের তিন শিশু শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৫)। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানায়, টানাবর্ষণের ফলে মঙ্গলবার ভোরের দিকে শহরের লেমুঝিরি জেলেপাড়া এলাকায় পাহাড়ের মাটি ধসে ঘরের ওপর পড়লে মা কামরুন্নাহার বেগম ও মেয়ে সুখিয়া বেগম মারা যায়। এ সময় কামরুন্নাহারের স্বামী আবদুল আজিজও গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে লালমোহন বড়ুয়ার ঘরের ওপর পড়লে একই পরিবারের তিন শিশু মিতু, শুভ ও লতার মৃত্যু হয়। এছাড়া রাতে প্রবল বর্ষণের সময় পৌর এলাকার কালাঘাটা কবরস্থানের পাশে ঘরের ওপর মাটি চাপা পড়ে রেভা ত্রিপুরা নামে বান্দরবান সরকারি কলেজের ছাত্র নিহত হন। এ সময় আরো চার কলেজ ছাত্র আহত হয়। এরা হলো বীর বাহাদুর ত্রিপুরা, সূর্য চাকমা ও প্রশেন ত্রিপুরা। পরে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা গেছে, আহতরা সবাই ওই এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতো। নিহত রেভা ত্রিপুরা রাতে তাদের কাছে বেড়াতে এসেছিল। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী স্টেশন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ঘোষ জানান, খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। তবে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে পড়া মাটির গভীরতা বেশি হওয়ায় মা-মেয়ের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মাটি খুঁড়ে তাদের লাশ বের করার চেষ্টা চলছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এদিকে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সাঙ্গু এবং লামা মাতামুহুরী ও নাইক্ষ্যংছড়ির বাঁকখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে জেলা শহর, লামা ও আলীকদম উপজেলার অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার দুই সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সড়কের ওপর পাহাড় ধসে পড়ায় এবং পানি জমে যাওয়ায় বান্দরবানের থানছি, রুমা, লামা ও আলীকদম উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বান্দরবানের সঙ্গে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্গতদের অনেকে পরিবার নিয়ে উঁচু স্থান ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে, বন্যাকবলিত জেলা সদরের মেম্বারপাড়া, বালাঘাটা, ইসলামপুর, কাশেমপাড়া, ওয়াদাব্রিজ এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। প্রসঙ্গত, বান্দরবান পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিবছর পাহাড় ধসে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তাই টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে স্থানীয়দের সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জোর প্রচারণা চালানো হয়।