সিলেট শহরে তালাকের হিড়িক, এক মাসেই প্রায় আড়াইহাজার আবেদন

0
742
blank
blank

বিশেষ প্রতিবেদক : বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য ৩০দিনে ২২২৫টি তালাক আবেদন জমা পড়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে। একে ভয়াবহ তথ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন সিসিক কর্তৃপক্ষ।

শনিবার দুপুরে নগরভবনের সম্মেলনকক্ষে সিলেটের সব সামাজিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবি সংগঠন, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, শুধু সেপ্টেম্বরে আমাদের কাছে ২২২৫টি বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন এসেছে। যা সামাজিক অস্থিরতার ভয়াবহ এক রূপ।

সিসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে সিটি কর্পোরেশন এলাকার ১৪৩৯টি বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন পড়ে। এর মধ্যে ৮৮১ জন নারী এবং ৫৫৮ জন পুরুষ বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন। ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতি মাসে গড়ে ২৪টি বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন পড়ছে।

২০১৮ ও ২০১৯ সালের তুলনায় মহামারির বছর খ্যাত ২০২০ সালে সিলেট মহানগরীতে বিবাহ বিচ্ছেদ আবেদনের যেন হিড়িক পড়েছে। সিসিক মেয়রের তথ্য অনুযায়ী- এ বছরের শুধু সেপ্টেম্বরেই সিসিক এলাকার ২২২৫ জন নারী-পুরুষ বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন। এর আগে ২০১৮ সালে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন পড়ে ২৫৫টি। এর মধ্যে মহিলা ১৭১ এবং পুরুষ ৮৪। ওই বছর ২৯টি বিচ্ছেদ কার্যকর হয়।

সিসিক সূত্র জানায়, জমা পড়া আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- স্বামী কিংবা স্ত্রীর প্রবাসে অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন পরস্পর দূরে থাকা, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক, সন্দেহ, যৌতুক দাবি, সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, স্বামী-স্ত্রীর জীবন-যাপনে অমিল, সন্তান-সন্তানাদি না হওয়া, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা এবং মাদকে আসক্তি ইত্যাদি কারণে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। মিল না হওয়ায় অনেক উচ্চশিক্ষিত দম্পতিও বিচ্ছেদের আবেদনের তালিকায় রয়েছেন।

জানা গেছে, সিসিকে বিচ্ছেদের আবেদন পাওয়ার পর দুই পক্ষকে প্রতি মাসে শুনানির জন্য ডাকা হয়। কিন্তু, দু’পক্ষের লোকজনকে শুনানিতে হাজির করা যায় না। এ কারণে অনেক সময় বাধ্য হয়ে তাদেরকে একতরফা শুনানি করতে হয়।

সিলেটে বিয়ে বিচ্ছেদ ভয়াবহ আকার ধারণ করার পেছনে কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হলো- মানুষের মাঝে নৈতিকতার স্খলন। এছাড়াও আধুনিক লাইফ স্টাইল এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা বিয়ে বিচ্ছেদের বড় দুটি কারণ।

সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, নানা কারণে মানুষের সহিষ্ণুতা কমে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে নেমে আসছে হতাশা। শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীদের কর্তৃত্ব বাড়ছে। যুক্তরাজ্যে অনেক বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। যুক্তরাজ্যের সাথে সিলেটি মানুষের বেশি সংশ্লিষ্টতার কারণে সিলেটেও এর প্রভাব পড়ছে।

তারা আরো বলেন, বিয়ে বিচ্ছেদ রোধে পারিবারিকভাবে নৈতিক শিক্ষা বিস্তারের ওপর জোর দিতে হবে। কারিকুলামে নৈতিক শিক্ষার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।