নিজস্ব প্রতিনিধি: গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার লক্ষীপুরা গ্রামের খুরশেদ আলম ও পারুল সুলতানার একমাত্র মেয়ে সুন্দরী যুবতী নওরীন সুলতানা (২৩) নির্মম প্রতারণার শিকার হয়ে মিথ্যা ভালোবাসার মায়াজালে আটকা পড়ে অবশেষে জীবন দিয়ে ভালোবাসার ঋণ পরিশোধ করলেন নীরবে। এমন এক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানা এলাকায়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নওরীন সুলতানার বয়স যখন ১৯ বছর তখন পারিবারিক আলোচনার মাধ্যমে ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি মেনে সুমন নামে একটি ছেলের সাথে বিয়ে হয় তার, কিন্তু নেশাগ্রস্ত ও পরনারীতে আসক্ত স্বামী সুমন রহমান এর অত্যাচার সইতে না পেরে বিয়ের এক মাসের মাথায় তাকে তালাক দেন নওরীন সুলতানা। তারপর হতে পিতার বাড়ি লক্ষীপুরা গ্রামে বেশ কিছুদিন একাকী জীবন কাটান। বিগত ২০২১ইং সালের শেষের দিকে মুরগীর ফার্মের দোকানের মালিক জয়দেবপুর বাজারের ব্যবসায়ী খবির খন্দকার এর সাথে নওরীন সুলতানার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে।
খবির খন্দকার জে- ১৮৮ নং মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম খন্দকার ও রুকিয়া খন্ধকারের দ্বিতীয় সন্তান। এক পর্যায়ে তাদের হৃদয় গঠিত সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হয়। নওরীন সুলতানার প্রেমের বিষয়টি জানাজানি হলে নওরীনের পিতা খোরশেদ আলম তাকে বাড়িতে আটকে রাখেন। অন্যত্র বিবাহ দিতে চাইলে নওরীন তাতে রাজি হয়নি। বিভিন্ন কৌশলে সে লম্পট খবির খন্দকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। গত ১৫ ই নভেম্বর ২০২১ ইংরেজি সালে খবির খন্দকার নওরীন সুলতানা কে নিয়ে গভীর রাতে পালিয়ে যায়। বেশ কয়েকদিন অজ্ঞাত স্থানে রেখে নওরীনকে ভোগ করে খবির খন্দকার। গত ৫ই ডিসেম্বর ২০২১ ইংরেজি সালে নওরীনকে নিয়ে খবির বাড়িতে আসে। ঐ দিনই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে খবির। পরদিন মধ্যরাতে তাকে নিয়ে জয়দেবপুর বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখানে তার সহযোগী কয়েকজনকে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে তাকে কয়েকজন ধর্ষণ করে তার লাশ খবিরের বাড়ির সন্নিকটে গলায় রশি বেদে পালিয়ে যায়। সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। তাকে ভিসেরা পরীক্ষা ও ময়না তদন্তের জন্য নওরীনের পিতা-মাতার অনুমতি নিয়ে পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
ময়নাতদন্ত ও ভিকটিমের ভিসেরা রিপোর্টের তথ্য মতে জানা যায়, তাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। নওরীনের পিতা বাদী হয়ে জড়িত খবির খন্ধকার সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। খবির খন্ধকারের পিতা-মাতার সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, খবির নির্দোষ। তারা সিলেট জেলায় গিয়ে কোট ম্যারেজ করে বাড়িতে আসে। পূর্ব স্বামীর হত্যার ভয়ে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে ঘটনার দিন রাতে বাড়ি হতে বের হয়। এরপর কিভাবে কি ঘটে গেল তাহা তারা জানেন না। তাদের ঘরে বিবাহ সংক্রান্ত হলফনামার একটি ফটোকপি পাওয়া যায়, যাহা সিলেট জর্জ কোর্টের নোটারি পাবলিক এডভোকেট গোলাম হোসেন দ্বারা সম্পাদিত। উক্ত নোটারী এডভোকেট এর মোবাইল ফোনে ফোন করে হলফনামার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উভয়ের সম্মতিতে হলফনামা সম্পাদিত হয়।বিবাহ সংক্রান্ত এই হলফনামা সত্য।
জয়দেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। হলফনামা সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি জানান, ইচ্ছামত ভোগ করার স্বার্থে এই হলফনামা সম্পাদন করে খবির খন্দকার, পরে তাকে খুন করে। তবে তদন্তের পূর্বে কোন কিছুই বলা যাচ্ছে না।
এলাকাবাসী জানান, নওরীন সুলতানা অত্যন্ত বিনয়ী ও ভদ্রমহিলা ছিল। তার কপালে সুখ সইলো না। খবির খন্দকার সম্পর্কে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। ঘটনার পর হতে খবির খন্দকার পলাতক আছে। তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক ঘটনা উদঘাটন করে দোষী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এলাকাবাসী।