আড্ডায় প্রাণবন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

0
1001
blank
blank

অনিক আহমেদ, জাবি প্রতিনিধি: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। লাল ইট আর লাল চূড়া যেন বিশ^বিদ্যালয়কে আরেকটি রূপ দান করেছে। লাল-সবুজের এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি ইঞ্চি মুখরিত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণবন্ত আড্ডায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, অমর একুশে চত্ত্বর, ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বর, টারজান পয়েন্ট, মুরাদ চত্ত্বর, ক্যাফটেরিয়া, ছায়ামঞ্চ, মুক্তমঞ্চ, ডেইরি গেইট, প্রান্তিক গেইট প্রতিটি জায়গা শিক্ষার্থীদের আড্ডায় মুখরিত থাকে সবসময়। নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা ও অন্যান্য ব্যস্ততার মাঝেও শিক্ষার্থীরা নিয়মিত মিলিত হয়ে আড্ডায় মেতে উঠে এই সব স্থানে, ফিরে পায় নতুন প্রাণ।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শহীদ মিনার অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে। সবুজ ঘাসের লাল ইটের তৈরি শহীদ মিনারটির স্থাপত্যশৈলী আকর্ষণ করবে যে কাউকে । নতুন কলা ভবনের সামনে অবস্থিত শহীদ মিনার প্রাঙ্গনটি সুসজ্জিত সবুজ ঘাস ও বাহারি রঙ্গের ফুলগাছে। ক্লাসের বিরতি চলাকালীন সময়ে প্রাঙ্গনের সবুজ ঘাসে বসে আড্ডা জমায় ছাত্র-ছাত্রীরা, পড়ন্ত বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত গল্পে মাতিয়ে রাখে চত্ত্বরটিকে।
জাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কার্যাবলীর প্রাণকেন্দ্র হল মুক্তমঞ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশের নাট্য জগতের অন্যতম প্রবাদ পুরুষ সেলিম আল-দ্বীনের নামে মঞ্চটির নামকরণ করা হয়েছে “সেলিম আল-দ্বীন মুক্তমঞ্চ”। বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ক্যাম্পাস ও জাতীয় জীবনের বাস্তবতার সাথে সংগতি রেখে এখানে মঞ্চস্থ হয় বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক নাটক, কমেডি, বিতর্ক অনুষ্ঠান।
নতুন কলাভবনের পাশে অবস্থিত আরেকটি প্রাণবন্ত চত্ত্বর মুরাদ চত্ত্বর। ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইংরেজী বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মুরাদুর রহমান শহীদ সালম বরকত হলের ছাদ থেকে পড়ে মারা যান। তার স্মরণে নির্মিত এই চত্ত্বরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের তুমুল আড্ডা।
ক্যাম্পাসের আড্ডার আরেকটি প্রাণকেন্দ্র ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বর। এখানে রয়েছে পরিবহন অফিস, পোস্ট অফিস, নবাব ফজিলাতুন্নেসা হল ও বাঁধন অফিস। বাঁধনের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে এসে জড়ো হয় এখনে। মানব সেবার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যেও গড়ে ওঠে আত্মার বন্ধন। আছে ১০-১২ টি চায়ের দোকান। বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্œ বর্ষের শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে রাত অবধি জমিয়ে রাখে চত্ত্বরটি।
ভাষা শহীদদের গৌরবময় আত্মত্যাগের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত হয় অমর একুশ ভাস্কর্যটি। সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে অবস্থিত এই ভাস্কর্যটি। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আড্ডায় মিলিত হয়ে মাতিয়ে রাখে জায়গাটি।
২০০২ সালের ২২ নভেম্বর ভারতে শিক্ষা সফর কালে হরিয়ানায় মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত প্রতœতত্ত্ব বিভাগের ছাত্রী শামীমা ইয়াসমিন মুন্নীর স্মরণে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের সামনেএকটি চত্ত্বর এবং স্মৃতিফলক তৈরি করা হয়। এটিই মুন্নী চত্ত্বর। এখানেও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মিলিত হয় আড্ডায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঠুকলে প্রথমেই পড়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। প্রতি বিকেলেই খেলাপ্রিয় মানুষের আনাগোনায় মুখরিত হয় মাঠটি। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে চলে খেলাধূলা। শুধু খেলাই নয়, বিকালের অনাবিল বাতাসে বসে আড্ডা দিতেও শিক্ষার্থীরা ভীড় করে মাঠে। আর রমজান মাসের প্রতিটি বিকালে পুরো মাঠ জুড়েই শিক্ষার্থীরা নানা পসরা সাজিয়ে একত্রে বসে ইফতার করে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনের সাথে মিশে আছে প্রকৃতির সাত রং। প্রকৃতির এই নিবিড় সাহচর্য আর প্রাণোচ্ছ্বল আড্ডা তাদেরকে করে তোলে চির নবীন। আর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিটি চত্ত্বরে শিক্ষার্থীরা প্রাণবন্ত আড্ডায় মাতিয়ে রাখে সবসময়।