জামায়াত-হেফাজতের ভূমিকা নিয়ে কৌতূহল

0
525
blank
blank

সবার নজর এখন বকশীবাজারের দিকে। ঘনিয়ে আসছে সময়। সবকিছু ঠিক থাকলে ৮ই ফেব্রুয়ারি ঘোষণা হবে বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়। এ রায়কে ঘিরে এরইমধ্যে উত্তপ্ত রাজনীতির ময়দান। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। রাজনীতির মাঠে উচ্চারিত হচ্ছে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। কী হবে সামনের দিনগুলোতে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে রাজনীতির অন্য শক্তিগুলোর ভূমিকাই বা হবে কী?
শাহবাগের বিকল্প মঞ্চ হিসেবে আবির্ভূত হওয়া হেফাজত এবং নানামুখী আক্রমণে দিশাহারা জামায়াতের ভূমিকা কী হবে সে নিয়ে
রাজনীতির অন্দরমহলে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকার ও বিরোধীপক্ষ থেকে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রিসভার সদস্য ছাড়াও সরকার সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যোগাযোগ রাখছেন হেফাজতের সঙ্গে। খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে কওমিভিত্তিক এই সংগঠনটি যেন কোনো ভূমিকা না রাখে তা নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।
২০১৩ সালের ৫ই মে ১৩ দফা দাবিতে ঢাকা অবরোধের ঘোষণা দিয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় হেফাজত। দিনভর অবস্থান ও ব্যাপক সংঘর্ষের পর রাতে অপারেশন চালিয়ে হেফাজত নেতাকর্মীদের মতিঝিল থেকে উঠিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে বহু নেতাকর্মী হতাহতের অভিযোগ করে হেফাজত। ‘অপারেশন সিকিউর শাপলা’ নামের ওই অভিযানের পর সরকারের সঙ্গে বড় দূরত্ব তৈরি হয় হেফাজতের। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে হেফাজত নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলেন। পরে কয়েক দফায় সরকারের মন্ত্রীরা আল্লামা শফীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গত বছর কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি উপলক্ষে কওমির শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে যান আল্লামা আহমদ শফি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে  মঞ্চে বসে মোনাজাত পরিচালনা করেন তিনি। ক্রমশ হেফাজত নেতাদের সরকারবিরোধী বক্তব্যও কমে আসে। হেফাজতের অনেক দাবিও মেনে নেয়া হয়। ধর্মনিরপেক্ষ শিবির থেকে সরকারের বিরুদ্ধে হেফাজত ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলা হয়। সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক ময়দানে বিতর্ক হলেও তা এড়িয়ে চলছে হেফাজত। গত শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর সঙ্গে চট্টগ্রামে সাক্ষাৎ করেন। বিপরীত দুই দলের দুই নেতার এ সাক্ষাতের পর নানামুখী আলোচনা চলছে। এ অবস্থায় হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠা রাজনৈতিক অঙ্গনে কী অবস্থান হবে সংগঠনটির তা নিয়ে হেফাজতের নেতাকর্মীদের মধ্যেও আলোচনা রয়েছে। সামনের জাতীয় নির্বাচনে সংগঠনের কয়েকজন নেতা নির্বাচন করতে চান। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও বড় রাজনৈতিক জোটের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে লড়তে চান। হেফাজত নেতাদের সমর্থনের বিনিময়ে নির্বাচনে বড় জোটের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিতে পারে সংগঠনটি। এমন অবস্থায় এখন থেকেই রাজনৈতিক গতিপথ ঠিক করতে হবে বলে নেতারা মনে করছেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস মুফতি মোহাম্মদ জসিম বলেন, হেফাজত আমীর আগেই বলেছেন হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজত কোনোদিনই রাজনীতিতে জড়াবে না। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো সংগঠন হেফাজতকে ব্যবহার করে কোনো ফায়দা হাসিলের সুযোগ নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ব্যক্তিগত সফরে এসেছিলেন। তিনি দেশ ও দেশবাসীর জন্য হুজুরের কাছে শুধু দোয়া চেয়েছেন। হুজুর কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি সংসদে উত্থাপনের বিষয়ে হেফাজতের আমীরকে আশ্বস্ত করেছেন। রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো আলাপ বৈঠকে হয়নি বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, ওই দিন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী মীর মো. নাসির উদ্দিনও হুজুরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।  সেখানেও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ তেমন আসেনি।  বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা মীর মো. নাসির উদ্দিন বলেন, হেফাজত আমীরের সঙ্গে আমি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। হাটহাজারীতে আমি যখনই যাই তখনই হুজুরের সঙ্গে  দেখা করি। বৈঠকে রাজনৈতিক কোনো আলাপ হয়নি।
এদিকে বিএনপির জোট সঙ্গী জামায়াতের ভূমিকা নিয়েও নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। দলটির শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়ার পর থেকে রাজনীতির মাঠে অনেকটা কৌশলী ভূমিকায় আছে দলটি। মাঠের কর্মসূচি না দিয়ে নীরবে কাজ করা দলটি সামনে মাঠের কর্মসূচিতে নামতে অনেকটা হিসাবনিকাশ করবে। জাতীয় নির্বাচনে এতো আগে মাঠের কর্মসূচিতে নেমে ধরপাকড়ের খড়গে পড়তে চান না জামায়াতের নেতাকর্মীরা। দলটির একটি সূত্র বলছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে এ পর্যন্ত বিএনপি কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। বিএনপি আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি না দিলে গায়ে পড়ে জামায়াত কোনো কর্মসূচিতে যাবে না। আর বিএনপি অঘোষিত কোনো কর্মসূচি দিলে তাতেও জামায়াতের নেতাকর্মীদের অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। জামায়াতের নীতিনির্ধারক সংশ্লিষ্ট একজন নেতা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, এই মুহূর্তে জামায়াতের কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপি আদালতের রায়ের পর যদি জোটের সঙ্গে বসে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করে তাহলে আমরা তাতে অংশ নেব। আর বিএনপি একক কর্মসূচি দিলে এটি তাদের একার বিষয়। এছাড়া অঘোষিত কোনো কর্মসূচি এলে তাতে জামায়াত অংশ নেবে না। তিনি বলেন, সামনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায়ই জোটের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য নিয়ে জোটের চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি চলবে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকরের পর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধনও বাতিল করে। এ অবস্থায় দলটির নেতারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিছু আসনে দলীয় প্রার্থীও চূড়ান্ত করে রেখেছে দলটি।