নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে জামায়াত!

0
606
blank
blank

ছলিম উল্লাহ মেজবাহ: আগামী একাদশ নির্বাচনের আর কয়েক মাস বাকি থাকলেও সবকিছু ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিগত বছরগুলোতে একের পর এক দলটির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে দলীয় নিবন্ধন আদালতে স্থগিত, বর্তমান কমিটির পুরো শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন নাশকতা মামলায় কারাগারে, এসব নিয়ে ভেতরে ভেতরে ২০ দলীয় জোটের প্রধান বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে অবস্থান করছেন দলটির নেতারা। গত কয়েকদিন জামায়াতের একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র মতে, দলের নিবন্ধন না পেলেও স্বতন্ত্র ও বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে ভোট করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্নের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সারাদেশে নেতাকর্মীরা। সে জন্য প্রতিটি জেলা, থানায়, পৌরসভাগুলোতে সাংগঠনিক সফরও করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কোথায় কোথায় জামায়াতের সাংগঠনিক অবস্থান ভালো, সে সব আসন চিহ্নিত করেছেন তারা।

এদিকে রাজপথের আন্দোলনের জন্য নানা হিসাব কষছেন জামায়াতের নেতারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রকাশ্য কর্মসূচিতে ফিরতে চান দলটির শীর্ষ নেতারা। দীর্ঘ সাত বছর ধরে বন্ধ থাকা রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো খোলার চিন্তা করছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এতে নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হলেও তা অব্যাহত থাকবে। দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার একাধিক সদস্য ও ঢাকা মহানগরের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা এ কথা জানান। তারা বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী নির্ধারণ করার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে ৭০টি আসনে শক্তিশালী প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমরা আশা করব সরকারের বোধোদয় হবে। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। নির্বাচনের সময় কমপক্ষে রাজনৈতিক কর্মসূচি বা আমাদের স্বাভাবিক কর্মসূচি সরকার পালন করতে দেবে বলে আমরা আশা করি।

জামায়াত সূত্র বলছে, ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ব্যাপক সহিংসতার পর থেকেই ধরপাকড়ের মুখে পড়েন জামায়াত নেতাকর্মীরা। দলীয় হিসেবে পাঁচ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে জেলে গেছেন ৪৩ হাজার নেতাকর্মী। সহিংসতায় প্রাণ গেছে প্রায় ৩০০ জনের। তবে বর্তমানে অধিকাংশই জামিনে বাইরে আছেন। রাজপথে নামলে যুদ্ধাপরাধের মামলায় সাজা কার্যকর ও দল নিষিদ্ধের মামলা ত্বরান্বিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল দলটির। এ জন্য কর্মসূচি বলতে ভোরে কয়েকজনের ঝটিকা মিছিল। বৈঠক মানে লোকচক্ষুর অন্তরালে বৈঠক আর গণমাধ্যমে খবরের জন্য অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি। সেই চিত্র বদলাতে চায় জামায়াত, আসতে চায় প্রকাশ্যে।

জেলে কেন্দ্রীয় নেতারাই আলোচনা করছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ব্যস্ততা বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে ২০১৫ সালের পর থেকে প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা স্তিমিত থাকলেও তা ধীরে ধীরে সক্রিয় করতে চান তারা। এক্ষেত্রে দলীয় কৌশল নির্ধারণ করা এখনো বাকি। নেতাকর্মীরা বলছেন, বিগত নির্বাচন-পূর্ব সহিংস আন্দোলনে প্রধান ভূমিকা পালন করলেও জামায়াত এবার আর সে অবস্থাতে নেই। তারা এবার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিতে চায়। পাশাপাশি গ্রেফতার হয়ে জামিন পেলে আর গোপন না করে খবরই দেয়া হবে গণমাধ্যমকে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের পর থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কার্যালয় তালাবদ্ধ। আটক হওয়ার আশঙ্কায় সেখানে কর্মীরাও যান না। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাজধানীর পল্টনের মতো জায়গায় একটি বহুতল ভবনে অনেকটা প্রকাশ্যে দলীয় বৈঠক করছেন জামায়াত নেতারা। তারা বলছেন, জামায়াতের কার্যক্রমে পরিবর্তন আসছে। ধীরে ধীরে প্রকাশ্য রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া এবং দৈনন্দিন কর্মসূচিগুলো পালনের চেষ্টা করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে। আর কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃণমূলেও সিদ্ধান্ত কার্যকর করার চেষ্টা হচ্ছে। সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসা জামায়াতের এক নেতা জানান, ২০১১ সাল থেকে বন্ধ থাকা কেন্দ্রীয় ও মহানগর কার্যালয়সহ সারাদেশে বন্ধ থাকা কার্যালয়গুলো খোলার চেষ্টা করবে জামায়াত। তিনি বলেন, আশা করব সরকারের বোধোদয় হবে। নির্বাচনের সময় কমপক্ষে রাজনৈতিক কর্মসূচি বা আমাদের স্বাভাবিক কর্মসূচি সরকার পালন করতে দেবে বলে আমরা আশা করি।

অপরদিকে ২০ দলীয় জোট প্রধান বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের ঘোষিত সব কর্মসূচিতে মাঠে থাকবে জামায়াত। জামায়াতের ঢাকা মহানগরের এক শীর্ষ নেতা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে চলমান বৈঠকগুলোতেও আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই নেতা বলেন, বিএনপির সব কর্মসূচিতে আমাদের সব সময় সমর্থন ছিল, আছে, আগামীতে থাকবে। প্রয়োজনে মাঠেও অবস্থান করবে জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

সূত্র: মানবকণ্ঠ