সিইসি সংলাপের নামে জাতির সাথে তামাশা করছেন: রিজভী

0
483
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সংলাপের নামে জাতির সাথে তামাশা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সোমবার এক স্মরণসভায় তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে সংলাপে অংশ নিয়ে সুশীল সমাজের প্রায় ৯০ ভাগই যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে সিইসি বললেন, শাসনতন্ত্র ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী সুশীল সমাজের সুপারিশ যতটুকু গ্রহণ করার ততটুক ধরা হবে। প্রচলিত আইন ও শাসনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী তো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আপনি সংলাপের নামে যা করছেন সেটা দেশের মানুষ তামাশা বলে ধরে নেবে। এই নাটক না করলেই পারতেন। সেইসাথে পুরো আগস্ট মাসে বিএনপিকে কোনো কর্মসূচি করতে না দেয়ার অভিযোগ করেন রিজভী।
সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সংগঠনের সাবেক নেতা মরহুম মুন্সি জামাল উদ্দিন আহমেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল হয়। নিচতলায় স্বরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু করে ইসি। আগামী ১৬ ও ১৭ আগস্ট সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সাথে এবং আগামী ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
সিইসির উদ্দেশে রুহুল কবির রিজভী বলেন, নব্বইভাগ বুদ্ধিজীবীদের সুপারিশ অগ্রাহ্য করার জন্য, তাদেরকে অপমানিত করার জন্য আপনি তাদের সংলাপে ডেকেছিলেন? যদি প্রচলিত আইনেই নির্বাচন হয়, তাহলে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। আপনি তো সেই অঙ্গীকারে আসেননি। আপনি চাকরি করে চলে যাবেন, এটাই হচ্ছে আপনার মূল উদ্দেশ্য। গণতন্ত্র কোথায়? ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা কোথায়? সেটা নিশ্চিত করছেন না। সংলাপের নামে যা করছেন তা মানুষ তামাশা বলেই ধরে নিবে।
তিনি সিইসির উদ্দেশে বলেন, ভোটাধিকার যেভাবে কেড়ে নিয়েছে, জেলা জেলায় তুফানদের সৃষ্টি করে সেখান থেকে পরিত্রাণ দেয়ার জন্য আপনি আশার বাণী শুনাবেন। সেটি না করে শাসনতন্ত্র ও প্রচলিত আইনের কথা বলছেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ সিইসির উদ্দেশে বলেন, প্রচলিত আইন তো প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছামত পরির্বতন করেছেন। একদলীয় বাকশালী সংসদ দিয়ে। শাসনতন্ত্রের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে, তাহলে আপনি বাকশালকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র করছেন।
আওয়ামী ঘরোয়ানার বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, তাদের বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্যরা শুধু এক ব্যক্তির কোরাস গাইছেন দৃশ্যমান অন্যায়গুলো আমলে নিয়ে প্রতিবাদ করছেন না। এমন বিবেক বিক্রি করা, আত্মা বিক্রি করা আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশে এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুমের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা জারি রাখা হয়েছে শুধু একব্যক্তির শাসন ব্যবস্থা প্রলম্বিত করার জন্য। তারা কিছুই মানবে সব কিছুই তাদের দরকার। সবকিছু এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে।
আগস্ট মাস আওয়ামী লীগ গুম করে নিয়েছেন এমন অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আগস্ট মাস কি আপনরা গুম করে নিয়েছেন? যেমন চৌধূরী আলম, ইলিয়াস আলী, সুমন, হিরু, পারভেজকে গুম করে নিয়েছেন। ১২ মাসের একটি মাস আপনারা গুম করে নিবেন। এ মাসে আমরা কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারবো না! আমাদের দুই মাসব্যাপী কর্মসূচি রয়েছে। দলের সদস্য নবায়ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। জেলায় জেলায় আমাদের সিনিয়র নেতারা যাচ্ছেন সেখান পুলিশ বাধা দিচ্ছে, অসংখ্য তুফান লেলিয়ে দিচ্ছেন তারা মারামারি করছে, কর্মসূচিতে ভাঙচুর চালাচ্ছে। তারপর পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের নেতাকর্মীদের।
রিজভী আরো বলেন, ‘আগস্ট মাসে ভয়াবহ একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এটা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন পালন করবে। তার মানে এই নয় যে, অন্য কেউ কোনো কর্মমূচি পালন করতে পারবে না? এটা হচ্ছে বাকশালী মনোবৃত্তি।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের দিন শেখ হাসিনা সীমান্তের দিকে চলে যান এমনটা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, তাহলে জিয়াউর রহমানে হত্যাকারী কে? পর্দার আড়ালে তাহলে কে আছে? এই অভিযোগ তো জনগণের মুখে মুখে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় অন্যানের মধ্যে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।