২০১৬ সালে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স-প্রবাহে ধস: বিশ্বব্যাংক

0
544
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাংক বলছে, গত বছর বাংলাদেশে রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) কমেছে প্রায় ১১ দশমিক ১ শতাংশ। সংস্থাটির অভিবাসন ও উন্নয়ন-বিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। তবে চলতি বছরে এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির পূর্বাভাস, চলতি বছরে প্রবাসী আয়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকবে বাংলাদেশের।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ ও ২০১৬ পরপর দুই বছরই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবাসী আয়ের প্রবাহে ধস নেমেছে। এমন অবস্থা গত তিন দশকে আর দেখা যায়নি। ২০১৬ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৪২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে নেমেছে। ২০১৫ সালে এই দেশগুলোর প্রবাসী আয় ছিল ৪৪ হাজার কোটি ডলার। এ ছাড়া ২০১৬ সালে বিশ্বজুড়ে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ আগের বছরের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে নেমেছে। ২০১৫ সালে যা ছিল ৫৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

২০১৬ সালে পাশের দেশ ভারতে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এলেও আগের বছরের চেয়ে কমেছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি বছর দেশটিতে প্রবাসী আয় এসেছে ৬ হাজার ২৭০ কোটি ডলারের। ২০১৫ সালে এই আয় ছিল ৬ হাজার ৮৯০ কোটি ডলার। ভারতের পর সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয়গ্রহীতা দেশ হলো চীন, গত বছর দেশটির প্রবাসী আয় কমেছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে ফিলিপাইন, পাকিস্তান ও মেক্সিকোতে প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল ২০১৬ সালে। এ ছাড়া বিশ্বের শীর্ষ প্রবাসী আয়গ্রহীতা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নাইজেরিয়া। ২০১৬ সালে দেশটির প্রবাসী আয় কমেছে ১০ শতাংশ। মিসরে প্রবাসী আয় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কমেছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের অবদান মোট জিডিপির ৬ শতাংশের মতো, যা ভারতের ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। আর জিডিপিতে প্রবাসী আয়ের অবদান সবচেয়ে বেশি নেপালে, ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় ও দুর্বল বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া ইউরোপের নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে আফ্রিকার উত্তর ও সাহারা মরু অঞ্চলের দেশগুলোর প্রবাসী আয় কমেছে।

তবে চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবাসী আয়ের প্রবাহে অগ্রগতি হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। ২০১৭ সালে এসব দেশে প্রবাসী আয় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৪৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছিলেন। যদিও ২০১৫ সালে এসেছিল ১ হাজার ৫৩২ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত বছরে প্রবাসী আয় আগের বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমেছিল।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলা বাজারে মার্কিন ডলারের দামের পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন টাকার বেশি। তাই বেশি লাভের আশায় অনেকেই অবৈধ পথে দেশে প্রবাসী আয় পাঠানোর পথ বেছে নিচ্ছেন। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে পাউন্ড, ইউরো, রিঙ্গিত, সিঙ্গাপুর ডলারসহ প্রভৃতি মুদ্রার মূল্যমান কমে গেছে। ফলে এসব দেশের শ্রমিকদের আয়ের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা কম পাওয়া যাচ্ছে। তাই প্রবাসী আয়ও কমে গেছে।