রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেয়েছেন খালেদার আইনজীবী

0
489
blank
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১২ দিন পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, সার্টিফায়েড কপি পেয়েছি। জামিনের জন্য আপিল করার কাজ চলছে। কাজগুলো শেষ করে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে মঙ্গলবার উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করার।

সোমবার বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, জয়নুল আবেদিন মেজবাহ, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, জিয়াউদ্দিন জিয়া ও এম হেলাল উদ্দিন হেলালের হাতে ১ হাজার ১৭৪ পৃষ্ঠার এ রায়ের সার্টিফায়েড কপি দেন আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন। ১ হাজার ১৬৮ পৃষ্ঠার এ রায়ের সার্টিফায়েড কপির সঙ্গে আদেশ যোগ হয়েছে আরো ৬ পৃষ্ঠা।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক। ওই দিন থেকেই রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে রয়েছেন তিনি। খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জানিয়েছেন, রায়ের দিনই রায়ের সার্টিফায়েড কপির জন্য আমরা আবেদন করে রেখেছিলাম।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তখন বলেছিলেন, ‘রোববার তারা আপিল করবেন’। কিন্তু রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়া না যাওয়ায় খালেদার পক্ষে আপিল করতে পারেননি তার আইনজীবীরা। ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার কথা থাকলেও এর কপি ৬৩২ পৃষ্ঠা হওয়ায় আদালত সরবরাহ করতে পারেনি। এর আগে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রায়ের কপি পেতে ৩ হাজার ফোলিও জমা দেয়া হয় ঢাকার বিশেষ জজ আখতারুজ্জামানের আদালতে। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কপি পাওয়ার জন্য আদালতে শুনানি হয়েছে।

আদালত খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বলেছেন, সোমবার বিকেলে সার্টিফায়েড কপি দেবেন। তারা সোমবারের মধ্যে রায়ের কপি না পেলে আজ মঙ্গলবার জজকোর্ট প্রাঙ্গণে ধর্মঘট করার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছিলেন। অবশেষে রায়ের ১২ দিন পর এর সার্টিফায়েড কপি পাওয়া গেল।

রায়ের অনুলিপি দিতে বিলম্বের পেছনে সরকারের হাত থাকার অভিযোগ করে আসছিলেন বিএনপি নেতারা। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, রায়ের অনুলিপি পেতে আবেদন জানাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেরি করেছেন বিএনপির আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, আইনানুযায়ী রায় ঘোষণার পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যেই এর সার্টিফায়েড কপি পাওয়া যাওয়ার কথা।

উল্লেখ্য, প্রায় ১০ বছর আগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্বে থাকার সময় এই মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলায় খালেদা জিয়াসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

সেখানে অভিযোগ করা হয়, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে দেয়া হলেও, তা এতিম বা ট্রাস্টের কাজে ব্যয় করা হয়নি। বরং সেই টাকা নিজেদের হিসাবে জমা রাখার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের তখনকার উপসহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ (বর্তমানে উপপরিচালক) এ মামলার এজাহারে খালেদা জিয়াসহ মোট সাতজনকে আসামি করেন। বাকি ছয়জন হলেন— খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, জিয়াউর রহমানের বোনের ছেলে মমিনুর রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক (ইকোনো কামাল), সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও সৈয়দ আহমেদ ওরফে সায়ীদ আহমেদ।

দুদক কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদ ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে যে অভিযোগপত্র দেন, সেখান থেকে গিয়াস উদ্দিন ও সায়ীদ আহমেদের নাম বাদ দেয়া হয়। তাদের অব্যাহতির কারণ হিসেবে বলা হয়, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ অনেক আগে থেকে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। অভিযোগে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর সায়ীদ আহমেদ নামে কারো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সাবেক এমপি কামাল জালিয়াতি করে ট্রাস্টের কাজে ওই দু’জনের নাম ব্যবহার করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, খালেদা জিয়া তার প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রথম মেয়াদে ১৯৯১-১৯৯৬ সময়কালে এতিম তহবিল নামে সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় একটি হিসাব খোলেন। একটি বিদেশি সংস্থা ১৯৯১ সালের ৯ জুন ওই হিসাবে ইউনাইটেড সৌদি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে অনুদান হিসাবে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাার ২১৬ টাকা দেয়। ওই টাকা দীর্ঘ দুই বছর কোনো এতিমখানায় না দিয়ে জমা রাখা হয়। এরপর জিয়া পরিবারের তিন সদস্য তারেক রহমান, তার ভাই আরাফাত রহমান এবং তাদের ফুপাতো ভাই মমিনুরকে দিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করে ওই টাকা তাতে বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই ট্রাস্ট গঠনের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা মানা হয়নি। এ ছাড়া ট্রাস্টের ঠিকানা হিসেবে খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের ৬ নম্বর মইনুল রোডের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। পরে ওই টাকা দুইভাগে ভাগ করে ট্রাস্টের বগুড়া ও বাগেরহাট শাখার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫শ’ টাকা ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে বরাদ্দ দেয়া হয় বগুড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে। ওই অর্থ থেকে ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় ট্রাস্টের নামে বগুড়ার দাঁড়াইল মৌজায় ২.৭৯ একর জমি কেনা হয়। কিন্তু অবশিষ্ট টাকা এতিমখানায় ব্যয় না করে ব্যাংকে জমা রাখা হয়। ২০০৬ সনের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত তা সুদে আসলে বেড়ে ৩ কেটি ৩৭ লাখ ৭৫৭ টাকা ৩২ পয়সা হয়। পরে ২০০৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা তার ছেলে তারেক রহমান ও মমিনুর রহমানকে দিয়ে তিন কিস্তিতে ছয়টি চেকের মাধ্যমে তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা তুলে প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখায় স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করেন। এরপর ওই টাকা কাজী সালিমুল হক কামাল ও অন্যদের মাধ্যমে সরিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়।

মামলায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে ‘নাম সর্বস্ব ও অস্তিত্বহীন’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। অপরাধের সময়কাল বলা হয় ১৯৯৩ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে ২০০৭ সালের ২৮ মার্চের মধ্যে।