রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে কারাগারে সম্রাট

0
540
blank
blank

মাদক ও অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন। এর আগে গত ১৫ অক্টোবর রমনা থানার অস্ত্র ও মাদক মামলায় ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত।

আদালত সূত্র বলছে, আদালতের আদেশের পর সম্রাটকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে র‍্যাবের গাড়িতে করে সম্রাটকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় হাজির করা হয়। আদালতের আদেশে সম্রাটকে প্রিজন ভ্যানে করে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

সম্রাট ঢাকার অন্তত ১০ ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার হয়ে এগুলো দেখাশোনা করতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে বহিষ্কৃত সভাপতি মোল্লা কাওছার, যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ, এনামুল হক আরমান ও কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন সম্রাট। তার অবৈধ আয়ের সুবিধাভোগী হিসেবে অন্তত ২৫ জন প্রভাবশালী ব্যাক্তির নাম বলেছেন এই ক্যাসিনো সম্রাট। এদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং প্রশাসনের কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।

রাজনৈতিক নেতা নামধারী অনেকেই সম্রাটের দফতরে হাজির হতেন জুয়ার টাকার ভাগ নিতে। প্রতি মাসে ব্যাগভর্তি করে জুয়ার টাকা নিয়ে তারা বেরিয়ে যেতেন। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজেও এর প্রমাণ রয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন নেতা ছাড়াও টাকার ভাগ পেতেন পল্টন, মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকার প্রভাবশালীরা।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট তার চাঁদাবাজির টাকার ভাগ নেয়া প্রভাবশালী যাদের নাম বলেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার এবং যুবলীগের একজন শীর্ষ নেতা।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের জুয়ার নেশা থেকে শুরু করে ঢাকার ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের আদ্যোপান্ত সবিস্তারে খুলে বলছেন সম্রাট। তার গডফাদার কে, কিভাবে তিনি ক্যাসিনো জগতে এলেন এবং জুয়ার টাকা কার কার পকেটে গেছে সবার নামই তিনি বলছেন। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া নামগুলোর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে নামের তালিকা পাঠানো হচ্ছে সরকারের উচ্চপর্যায়ে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানিয়েছেন মতিঝিলের ছয়টি ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে তিনি প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫০ লাখ টাকা চাঁদা পেতেন। ক্যাসিনোর পাশাপাশি গুলিস্তানের ছয়টি মার্কেট থেকে তোলা চাঁদার টাকাও তার কাছে আসত। মতিঝিল ও গুলিস্তানের ফুটপাত থেকে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ–ছয় লাখ টাকা করে পেতেন তিনি।

সূত্রটি জানায়, এসব চাঁদা নিয়মিত তুলতেন সম্রাটের লোকজন। তাদের কাছ থেকে এসব চাঁদার টাকার হিসাব নিতেন সম্রাটের সহযোগী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক আরমান। আরমান সেই টাকার ভাগ বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে পৌঁছে দিতেন। যাঁদের টাকা দিয়েছেন, তাঁদের সবার নাম র‍্যাবকে বলেছেন সম্রাট। আবার এসব চাঁদার টাকার ভাগ যে ২৫ জনকে দিতেন সেগুলোও হিসাব করে দিতেন আরমান। সব শেষে আরমান সম্রাটকে হিসেব বুঝিয়ে দিতেন।

সূত্রটি জানায়, সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে যে ২৫ জনের নাম বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তদন্তের জন্য। এখন থেকেই তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের বিষয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, যুবলীগের এক নেতা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে। আরেকজন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।